অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “আর্য্যকৃষ্টি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৩৫১ – ৩৬৫ পর্যন্ত মোট ৪৫ টি বাণী রয়েছে। নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।
আর্য্য ভারতবর্ষ আমার জ্ঞান-গরিমা-গরবিনী, দ্যুতিপ্রেক্ষা স্ফুরক প্রজ্ঞা দ্যুলোক দীপকমালিনী, রক্ত তপন ক্ষিপ্ত আলোক রশ্মিপুলক ঝলক-ঝলক দীপ্ত রিক্ত পাবক অনঘ মৃত্যুবিজয়-দায়িনী ! নভোমণ্ডলে সামগীতিকা নাচে দোদুলে তারা-বালিকা থির চঞ্চল কত ছলিকা অমর ছন্দে প্রণব-লিখা ঋষি-মানস ঋক্-প্রতীকা প্রজ্ঞাপুরক জ্যোতিষশিখা দুরিত দাপট বিনায়িনী ! হোমের অনল নাচে ছল-ছল বহে সরস্বতী সিন্ধু প্রবল দৃষদ্বতী দিল অর্ঘ্য আঁচল স্ফুরিত ইন্দু স্মিত ঢল-ঢল চলে ভাগীরথী ডাকে কল-কল সাগর-ধৌত চরণ-যুগল তুঙ্গ ধবল কিরীটিনী; অযুত রশ্মি দীপ্ত কেন্দ্র পুরুষোত্তম চির অতন্দ্র জাগে আহ্বান বিপুল মন্দ্র অমর লপনা জীবন সান্দ্র আর্য্যগরিমা গভীর মন্ত্র ছলকি' সত্তা একটি তন্ত্র ভারত বিশ্বঋতায়িনী । ১।
ধ্বনিয়া ধমনী হৃদয়তন্ত্রী বাজিল প্রণবে নাচিল যন্ত্রী আলোক-পরশে জাগিল তন্দ্রী গাহিল ঋক্ ঋষি মহান— বন্দে পুরুষোত্তমং বন্দে আর্য্যপিতৃন্ বন্দে মাতৃবর্গান বন্দেহং কৃষ্টিদৈবতান্; গরজি' গহনে গবেষী প্রাণ অযুত প্রজ্ঞা করুক দান স্বস্তি-মন্ত্রে দীপিয়া তান রহুক অমর আর্য্যস্থান— বন্দে পুরুষোত্তমং বন্দে আর্য্যপিতৃন্ বন্দে মাতৃবর্গান্ বন্দেহং কৃষ্টিদৈবতান্; মথিত সিন্ধু উলসি' অমর অমিয়-প্রলেপী দ্যুতিয়া বর সৃজন জলদে নাশি' ঊষর পূরণ-অর্ঘ্য করুক দান— বন্দে পুরুষোত্তমং বন্দে আর্য্যপিতৃন্ বন্দে মাতৃবর্গান বন্দেহং কৃষ্টিদৈবতান; ঋদ্ধি-সমিধ আহরি' আবার টুটিয়া বাঁধন ম্লেচ্ছ আচার মুক্ত হউক আর্য্য বিভার দীপালি দীপনে বিশ্বপ্রাণ— বন্দে পুরুষোত্তমং বন্দে আর্য্যপিতৃন্ বন্দে মাতৃবর্গান্ বন্দেহং কৃষ্টিদৈবতান্ । ২।
ফেনিল ঊর্ম্মি গর্জ্জি ধায় ঐ
তরঙ্গের তালে নাচি থৈ-থৈ
দীপন দক্ষ অমোঘ অবাধ
টানে টেনে লয় সবারে,
আর্ত্তী ডাকিছে, কে আছ কোথায় ?
ধ'রে তোল মোরে রাখ বেদনায়,
মৃত্যুমথিত আঘাত-বিপাকে
ঐ ঐ ওরে সাবাড়ে;
শোন্ ওরে শোন্ হাঁকে নারায়ণ
জ্যোতিনিক্কণ প্রণবে—
ইষ্টস্বার্থী প্রাণে
দীর্ণী বজ্র-টানে
অমরণ পায় মানবে । ৩ ।
আলোক পায়ে লালচে শাড়ী প'রে পথটি বেয়ে, চলছে বোধি-বিনয়গড়া আমার পল্লীমেয়ে; মুখে মাখা চাঁদনী আভা চোখে জীবন-উদ্দীপনী, কথায় বাজে আগল-ভাঙ্গা আদর লাজুক সন্দীপনী; হাতে তাহার সুধার পেলব স্পর্শে ফোটে পদ্ম-শ্নেহী, নজরপারের সতী যেন ঘনিয়ে এসে হ'ল দেহী; সরল আভায় শরীরটি ওই উঠছে ফুটে দীপ্তি জ্ঞানের, বুকের মাঝে খেলছে যেন বীচিমালা ভক্তি-প্রেমের; স্নেহের গাঁথায় মুক্তি যেন ছুটছে চ'লে শক্তি পায়, দেবতা-অসুর যক্ষ-মানব ভক্তি-বিভোর নতি জানায়; আর্য্য মেয়ে অমনি হ'য়েই জ'ন্মে থাকে আর্য্য ঘরে, সঞ্জীবনী উচ্ছলতায় ওই কোলই তো আর্য্য ধরে । ৪।
তন্দ্রী অরুণ-ললিত দীপ্তি
লিপ্ত কপোল-প্রতিভা,
স্মিত গৌরব ললাটে ক্ষরিছে
অমর ইন্দু লালিভা;
স্থির চঞ্চল আয়ত নয়ন
খরদর্শন ক্ষরণে,
পলকে মৃদুল ছলকি'-ছলকি'
ধায় সম্বিৎ হরণে;
স্ফীত বহি-দৃপ্ত কুটিল
কঠোর সুন্দর ক্ষপণে,
বীর্য্যগরিমা দ্রোহ-ঈক্ষণে
রুধিছে শীতল মরণে;
বপু-বিচ্ছুরিত অমর নিক্কণ
ঘোষিছে আর্য্য-গরিমা,
নতিবিহ্বল প্রেষ্ঠ-পূজারী
দেখিয়া শিহরে কালিমা;
চরণ-চলনে বিজলী লিখনে
ভরসা করিছে লপনা,
আর্য্যপ্রতীক বালসুন্দর
দীপ্ত ব্রাহ্মী বপনা । ৫।
মিহির রাগে অগ্নিতেজে
জ্বালিয়ে দিয়ে পাপের পাঁজা,
বাঁধন যত খড়্গে কেটে
জাতটা ওরে কর্ রে তাজা । ৬ ।
আর্য্যকৃষ্টি তপনদীপ্তি
দ্যুতিয়া সৃজিল অযুত ইন্দু,
দ্যুলোকদীপনা তারকা-লসিত
লাজললিত দিকিনী হসিত
বিজয় প্রজ্ঞা অমরা ধ্বনিতে
দানিল তরণ-জীবন-সিন্ধু;
ঋদ্ধি হোমে সকল দিক
নাচায়ে তুলিল ঋষির ঋক্
ছলকি' শ্রবণা সম্বিৎতালে
বরিয়া বীজিল ব্রহ্মা-বিন্দু;
অন্ধ তমসা দীপ্ত হৌক
আর্য্যকৃষ্টি জীবিত রৌক
হিন্দোল তালে স্বস্তিমন্ত্র
করুক দীর্ণ জাতির অন্দু । ৭ ।
আর্য্যশোণিত লাল লালিমায়
নিঝুম গর্ব্বে এখনো রয়,
এখনো শিথিল আর্য্যধমনী
অমরণ-গানে রুধির বয়;
বেতাল বেভুল বাতুলের মত
যদিও আর্য্য আপন-ভোলা,
অমরণ-সুর এখনো তা'দের
স্নায়ুর তন্ত্রে দিচ্ছে দোলা;
শঙ্খচক্রী আজও নারায়ণ
ধর্ম স্থাপনে জনম লন,
বৃত্তিমদির যদিও তাহার
ব্যগ্র তবুও করিতে বোধন;
ওঠ্ রে আর্য্য বজ্রদম্ভে
মুষ্টিকরে ধ'রে আয়ুধ যত,
কৃষ্টি মেখলা বেদ-কিরীটে
তাড়া রে তোদের বিপাক শত । ৮।
আর্য্যকৃষ্টি সৎনীতি সব
জাগিয়ে রাখতে সংস্কারে
আচার-বিনয়-বিদ্যা-তপে
নিষ্ঠা-ব্রতে সৎকারে,
দান-প্রতিষ্ঠা-আবৃত্তি আর
তীর্থ-পর্য্যটন ক'রে
কুলের ঝাঁঝাল রোখ বিশেষে
সজাগ রাখে অন্তরে,
এমন যে তা'র কুলের ধারা
নিরাবিলই মুক্ত রয়,
কুলীনত্ব সেই তো রাখে
তা'কেই লোকে কুলীন কয় । ৯।
ঝঞ্ঝারাগে ঝড়ের বেগে
বজ্রসুরে ধর্ রে তান,
আর্য্যস্থান, পিতৃস্থান
উচ্চ সবার পূর্য্যমাণ । ১০।
কোন্ বেকুব শিখিয়ে দেছে
আর্য্য যা'রা পৌত্তলিক,
পুতুল-পূজো করে না তা'রা
পূজক আপ্তবীর-প্রতীক;
ভরদুনিয়া দেখ খুঁজে তুই
স্মারক-পূজক কেই বা নয়,
যা'র যেমনটি লাগে ভাল
তেমনি পুজোয় সবাই রয় । ১১।
ইষ্টীপূত রক্ত তোদের বীর্য্যবাহী আলোকময়, প্রেষ্ঠ একে সংহতি তোর রুদ্র-শিঙ্গায় গাচ্ছে জয়; কৃষ্টি-বৃষ্টি সৃষ্টি তোদের দৃষ্টি নাশে ধৃষ্টতায়, গবেষণায় মত্ত গভীর নাচছে জীবন জাতীয়তায় । ১২ ।
আর্য্য তা'কেই বলে—
কৃষ্টি-পথে দৃষ্টি নিয়ে
ইষ্টতপে চলে,
রক্তে গাঁথা আর্য্য আভা
তপঃ-কুতূহলে । ১৩ ।
বৃত্তিপথেই কৃষ্টি যা'দের
সত্তা মেরে ভোগ,
ম্লেচ্ছতপার শ্লেষ্য নীতি
অনার্যকৃৎ রোখ । ১৪।
ছোট্ট যা'রা দৃকদুরতার
সহজ জ্ঞানে নাই সঙ্গতি,
কোন হুজুগে প্রাজ্ঞদিগের
হীনত্বে চাস্ পরিণতি ?
শ্রেষ্ঠ উচ্চ যাঁ'রাই জানিস্
তাঁ'রাই সাথী বিবর্দ্ধনে,
তাঁদের যদি করিস্ রে হীন
ভ্রষ্ট হ'বি উৎ-চলনে;
তাই, ওরে শোন, অবোধ বেকুব,
কৃষ্টিধারায় ইষ্টরথে
চল্ ছুটে চল্ মহৎ পেতে
মহান বেগে তাঁ'দের পথে । ১৫।
দীপ্ত-তেজা আর্য্যজাতি
পূরণ-গড়ন স্বভাবপ্রাণ,
এক ত্রাতা এক মন্ত্র
তন্ত্র একে অধিষ্ঠান । ১৬।
অমর রাগে শম্ভু হাঁকে
শোন রে আর্য্য ! ঐ রে শোন,
ফণীর মালায় মরার হাড়ে
বাজে অমরণ ফণাৎ ঠন্ । ১৭।
আর্য্যবিষাণ উঠল হেঁকে
মন্ত্রসুরে বজ্রদীপী,
সূর্য্য-আলোয় ঝকঝকে ওই
কৃষ্টিমাণিক কপাল-লিপি,
ঋক্ নাচনে সাম-দোলনে
যজুর সুরে আবার সাধ,
আর্য্য জাতি বাঁচুক উঠুক
অমর রহুক আর্য্যবাদ । ১৮।
দশবিধ সংস্কার
আ্যাচারে কেন জানিস্ ?
জন্মগত সংস্কারের
তোষণ-পোষণ ওতেই মানিস্ । ১৯।
গর্জ্জরোলে চমকভাঙ্গা জাগ্ রে ওরে আর্য্য জাত, ঊষার আলোয় চোখ মেলে চা' বিদায় ক'রে দুঃখরাত; শোন্ ওরে শোন্ বিষাণ বাজে চমক-দোলায় ডিডিম ডীন, ফুল্লতালে ওঁকারে গা' ইষ্টস্বার্থী ধ'রে বীণ; অমল-ধবল মলয় রোলে গর্জ্জে পিনাক ঐ গাণ্ডীব, মরণ-তরণ আহব ডাকে সঞ্জীবনীর সৃজনদীপ । ২০।
কাৰ্ম্মুকেরই ঝিমিৎ ঝনক বজ্রবহ্নি জ্বলন-রোলে পিনাকেরই দৃপ্ত মাতাল ডমরুরই ডিডিম বোলে, গাল বাজিয়ে থিয়াথিয়ায় পাগলা ভোলার ববম দুলে চল্ রে ওরে চলন্ত প্রাণ মুহ্যমানব ধর্ রে তুলে । ২১।
ঝমঝমিয়ে চমচমিয়ে
স্বস্তি-নিশান ধ'রে ধা,
ধাপে-ধাপে দাপে-দাপে
ছেঁটে-কেটে সব বাধা । ২২।
ইষ্টস্বার্থী মাতাল বেগে মৃত্যু-ঘাতী অমরতা লভেই লভে আর্য্যকৃষ্টি,— ওতেই তো তা'র বিশিষ্টতা । ২৩।
বিপ্লব আন্ বিদ্রোহ আন্
রুধিতে মরণ-আয়োজনে,
বজ্ররে ধর্ মরিস্ তো মর্
পেতে নিরন্তর অমরণে । ২৪।
হোক না সাধু পাপী ধনী হোক না গরীব আর্য্য যা'রা, হৃদয়-চাপে ফিনকি দিয়ে রক্তে ছোটে আর্য্যধারা; যে যেমনই হোক না জানিস্ অবাধ বোধে নিছক বুঝিস্, মরণ-দানব নিধন-স্পর্দ্ধী ভারত-আর্য্য শ্রেষ্ঠ তা'রা । ২৫।
অত্যাচারে নির্য্যাতনে কৃষ্টি আজি মলিনমুখ, করতে দলন ইষ্টপথে ঘুচিয়ে ফেল কৃষ্টিদুখ । ২৬ ।
স্বস্তি-ভেরী অনাহতে বাজছে শুধুই স্বাধীন হ', ইষ্টনেশায় কৃষ্টি ধ'রে ক্ষিপ্ত কৃপাণ-বৃত্তি ব' । ২৭।
আবেগ যদি থাকেই ওরে অন্তরায়ে ধ্বসিয়ে ধা, বাধ-হননী তীব্র চালে দক্ষতাতে রেখেই পা; ফুৎকারে সব কুটিল কাল অগ্নিনালের জ্বলনদাপে, উড়িয়ে দে, পুড়িয়ে দে অবশ করা যতেক পাপে; সার্থকতায় বেঘোর নেশায় কর্ম্মে করি' হাতিয়ার, ছুটলে ওরে আর্য্য ছেলে ভরদুনিয়ায় কী ভয় তা'র । ২৮।
সিংহরাগে কাঁপিয়ে কেশর ওরে আর্য্য প্রবীণ যুবক ! মরণটাকে মুষড়ে এনে দিবি পুড়িয়ে ধ'রে পাবক; শোকের আঘাত মৰ্ম্মদিগ্ধ হারান ব্যাপার ঘুচিয়ে নিতে, পারবি কি রে ব্রাহ্মী ছেলে এক চুমুকেই সাবাড় দিতে ? ওঠ ওরে ওঠ, হান্ ওরে হান, নিভে গেছে কত দীন প্রধান, ব্রাহ্মী বজ্রে মরণটাকে নিকেশ ক'রে জীবনে আন্ ! ২৯।
উৎপাতে সব হকচকিয়ে
স্বস্তি-চলায় অটুট চল,
পূর্ণতেজে চূর্ণ ক'রে
পাপকে ভেঙ্গে বাড়াও বল । ৩০।
বাঁচন-বাড়ন গানে তোরা
নাচন-দোলায় তান ধরি',
রবাব-বীণার নিলয় তানে
তালে বাজা কিঙ্গরী । ৩১।
আপন ভাল বোঝে না যা'রা
আরাম পেলেই খুশি হয়,
এমনি লোকের মত নিয়ে কি
নিয়ম-নীতি কৃষ্টি রয় ? ৩২।
কুটিল ধুয়োয় চললি ওরে মিথ্যা স্মৃতির দোহাই নিয়ে, পূর্ব্ববাহী বর্ত্তমানে ধরলি না রে হৃদয় দিয়ে; হ'লি নিপাত মারলি রে জাত আর্য্যকৃষ্টির গর্ভস্রাব, বিষাণ-রাবে পিনাক হাঁকে কী বলে শোন্ রুধির চাপ ! ৩৩।
পিতৃকৃষ্টি পূরণ-প্রবণ
থাকলে অটুট সেই ধারাটি,
শাক্ত হ'স্ আর বৈষ্ণবই হ'স্
খৃষ্টান মুসলিম সবই খাঁটি;
ঐ চলা তোর বাতিল করে
স্বর্গেও যদি যাস্ রে তুই,
জোর গলাতে বলছি আমি
স্বর্গও তোর নরকভুঁই । ৩৪।
আর্য্যজাতির স্বভাব-ধাঁজই
বস্তুপথে ভাবকে দেখা,
সেইটি এনে বাস্তবতায়
ওরই আরো ধরতে শেখা;
বস্তুবিহীন ভাবের বিলাস
অনার্য্যদের পাগলা ধাঁজ,
নাই-এর পথে নাই-নারায়ণ
আর্য্যেতরের স্বপ্নরাজ ! ৩৫।
অঘমর্ষী যজ্ঞ ক'রে মন্ত্রে করি' হোম, পঞ্চবর্হির স্মরণ নেওয়াই পরিশুদ্ধি-ক্রম । ৩৬ ।
অঘমর্ষী যজ্ঞ ক'রে
পঞ্চবর্হি কর পালন,
শুদ্ধ হ'বি বুদ্ধ হ'বি
নাচবে বুকে সৎবোধন । ৩৭।
অঘমর্ষী যজ্ঞ ক'রে
পাতিত্য সব পুড়িয়ে দে,
সপ্তার্চ্চিকে বরণ ক'রে
পঞ্চবর্হি স্মরণ নে । ৩৮।
দৃপ্ত তপা তৃপ্তি নিয়ে ভৃত্যজীবন রুধেই ধর, জৃম্ভি' কৰ্ম্মে ধর্ম্মে বর্ম্মে ঋকদৃকেতে হ' তৎপর; ঋষির ছেলে আর্য্য তোরা ছুঁস্ নে কভু গোলামখানা, অবাধদাপে অন্তরায়ে কররে নিকাশ দিয়ে হানা । ৩৯।
প্রেষ্ঠ-পূজা উবিয়ে দিয়ে অবজ্ঞা আর অপমানে, দম্ভী-সেবায় চাটু পালি' দক্ষ দাঁড়ায় সমুত্থানে ! হামবড়ায়ী বৃত্তিপুজায় লাগিয়ে করে বাজিমাৎ, শিবশ্রেষ্ঠে তখনই সে অপমানেই করে কাত; দক্ষের মেয়ে সতী তখন মর্ম্মদিগ্ধ শিবনিন্দায়, আত্মাহুতি যজ্ঞে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে আপনায়; সতীর ব্যথায় গর্জ্জে তখন ভূতরা নাচে থিয়া-থিয়ায় চুরমারি' সব দিমিক-দিমিক যজ্ঞ অনল নিভিয়ে দ্যায়; প্রলয় নাচন ধিন-তা-বিন চূর্ণ করি', দীর্ণ করি', উবিয়ে দেয়, পুড়িয়ে দেয় চৰ্ম্ম করীর হাতে ধরি'; সাপের ফণা গর্জ্জে ওঠে মরার খুলি ঠঠন্ ঠন, শব-সতীরে কাঁধে ল'য়ে পাগলা তখন শিবনাচন; দম্ভী অহং অবনতির কুটিল কঠোর দীর্ণীঘাতে ওড়ে মাথা, অজের মুন্ডু শোভেই তখন দক্ষ কাঁধে; দক্ষতা যদি সার্থকতায় প্রেষ্ঠ-পূজা নাই রে ধরে, দক্ষযজ্ঞ অমনি হ'য়েই মানুষ-মাথার নিকাশ করে । ৪০।
রক্তে এখনো আর্য্য-আলোক
লুকিয়ে বহে আর্য্যকুলে,
তপের পথে চল্ ছুটে চল্
দেখবি রে তুই চক্ষু খুলে;
বিদ্যুতেরই আর্য্য-চমক
উঠছে ফুটে ধমক-ধমক,
লকলকিয়ে টগবগিয়ে
বহ্নি হোমের উঠছে দুলে' । ৪১।
পূর্ব্বতনে পারম্পর্য্যে
তাঁ'দের দেওয়া কৃষ্টি-পথ,
আবিল কালের ময়লা মাটি
জুটিয়ে যবে আনে বিপদ,
সবগুলি তা'র নিকেশ ক'রে
পরিষ্কারে ফুটিয়ে ফেলে,
আরোতরের অমোঘ খবর
জীব-জগতে দেন রে ঢেলে,
পূর্ব্বানত বিরাটি প্রাণ
পূরণ-গড়ন সিদ্ধ মানুষ,
আর্য্য ভজে পুরুষোত্তম
প্রতীক সেই মহাপুরুষ । ৪২।
ক'জন ওরে মহৎ জোটে দীন দুনিয়ার সমাজ-পটে, শ্রেষ্ঠ বিনা কৃষ্টি কোথায় ব্যষ্টি-বৃদ্ধি কোথায় ঘটে ? বাঁচা-বাড়াই বুদ্ধি যদি শ্রেষ্ঠ-পথে যদিই প্রীতি, ধর্ ওরে ধর্ পূজায় বিভোর হ'য়ে শ্রেষ্ঠে বাড়াস্ স্থিতি । ৪৩।
ফাগুনেরই আগুনফাগে
ভর-দুনিয়া লালে লাল,
দেখিস্ নাকি পুড়ছে ওরে
জগৎজোড়া পাপ-জাঙ্গাল !
অমর-গানের স্বস্তি-হাওয়া
সঙ্গে তা'রই দিয়ে যোগ,
ওরই মাঝে দুলছে রে দেখ্
জীবন-জয়ের অটুট ভোগ । ৪৪।
পদ্ম আসন ধান-ভরা ক্ষেত মায়ের পায়ে কৃষি-শিল্প, বাহন মায়ের তা'রই যন্ত্র ওড়না মায়ের একীতন্ত্র; আর্য্য-গরিমা কেয়ূরহস্ত নেত্র মায়ের স্নেহলদীপ্ত, মায়ের মাথার মুকুটে ঝলসে ইষ্টস্বার্থ দীপন-মন্ত্র ! অগণিত সুত জড়িমা টুটিয়া ললাটে লসিত অমর ইন্দু, ক্ষীরভরা পীন অযুত ধারে ক্ষরিছে জীবন অমিয় সিন্ধু; স্মৃতির বোধন মাল্য কণ্ঠে নাকের বেশর উপনিষৎ, শ্রুতির চুমকি ঝকমকে ওই চলনে চমকে ওঁ তৎসৎ ! চারিবর্ণে ঝলকে কেশ আমার মায়ের এমনই বেশ, …….এই তো দেশ ! স্বস্তি স্বস্তি ওঠে কলরব সাম্য দুলিয়া ফুলিয়া ধায়, ইষ্ট-আনত বিপ্লবী প্রাণ বিদ্রোহ দলি' নতি জানায় ! ৪৫।