অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “আর্য্যকৃষ্টি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৭২ – ৯২ পর্যন্ত মোট ৯৪ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ৫১ – ৯৪ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।
আমার কৃষ্টির সব অধ্যায়ের
সকল বিষয় জেনে,
ধৃতিপোষণায় কীই যে কেমন,
তেমনি সেটায় মেনে,
সত্তাপোষণ সৎ-দীপনায়
লাগালে সেটা কাজে,
ধৃতিচর্য্যা তখনই হয়
এড়িয়ে যা'-সব বাজে । ৫১।
কৃষ্টির ধৃতি-ধী যাহাদের
আচার-বিদ্যায় তীক্ষ্ণ যেমন,
বাস্তব সুবিনিয়োগে
ধী ও স্বভাব উছল তেমন । ৫২।
ভজনচর্য্যা নিষ্ঠারতি
কৃতি-দীপন তেষ্টা নিয়ে,
না চললে তোর কৃষ্টি কোথায় ?
জীবনটা যে যাবেই ব'য়ে । ৫৩।
কৃষ্টিতপে ধৃতি জাগাও
চর্য্যানিপুণ সুচলনে,
ইষ্টনিষ্ঠায় অটুট হ'য়ে
উঠবে ফুটে সুবলনে । ৫৪।
প্রাণে প্রতিষ্ঠ থাকতে হ'লেই
সৎ-প্রতিষ্ঠ আগে হ',
ব্যতিক্রমহীন সতে দাঁড়িয়ে
সত্তাকে তুই তেমনি ব'। ৫৫।
সৎ আচার্য্য, গঙ্গাজল
অন্নপূর্ণার ধান—
তিনেই লোকের চলন-ফেরন
তিনেই বাঁচে প্রাণ । ৫৬।
প্রণামের অর্থ কী?—
প্রবীণের চলন মাথায় রেখো
বাড়বে তা'তে ধী । ৫৭।
শ্রেয়োজনে রাখলে নতি
থাকলে তোমাতে সুপ্রবৃত্তি,
চিত্তে সেটা জাগিয়ে তুলে
সু-তে তোমার বাড়ায় রতি । ৫৮।
খাস্ নে কিন্তু এমন জিনিস
চলিস্ নে তুই এমন পথে,
কাজ করিস্ নে এমন কিন্তু
কৃষ্টি-সাধায় ব্যাঘাত যা'তে । ৫৯।
অমোঘ সুরে উদাম চলায়
মিটির-মিটির করছে যা',
ঊর্জ্জী বেগে নে সেধে নে
জীবন-পোষায় লাগা তা' । ৬০।
ধৃতিচর্য্যা বৃদ্ধি আনে,
বৃদ্ধি চলে আরোর দিকে,
অভ্যস্ততা অভ্যাসে হয়
প্রবুদ্ধ করে জীবনটাকে । ৬১।
নিষ্ঠা মানেই লেগে থাকা,
শ্রদ্ধা মানে সত্তা-ধারণ,
নিষ্ঠা-শ্রদ্ধার আবেগ-গতি
সুসম্বোধের সুষ্ঠু কারণ । ৬২।
দীর্ণি' তমোয় আলোককে আন্
যাক্ চ'লে যাক্ নিরেট আঁধার,
সার্থকতায় সবাই দাঁড়াক্
আলোক-দোলায় সকল ব্যাপার । ৬৩।
দেখে-শুনে ক'রে-বুঝে
মরণে প্রাণ সৃষ্টি কর,
প্রাণন-সম্বেগ বৈধী চলায়
অমন ক'রে—পারিস্ ধর্ । ৬৪।
ভিটামাটি বাড়ীর যেটা
পূর্ব্বপুরুষ করেছে বাস,
শ্রদ্ধাভরে রাখবি তা'রে
ছাড়িস্ নে তা' গেলেও শ্বাস । ৬৫।
ভবন-মন্দির যেখানে তোর
কুলের আবাস যেইখানে,
তীর্থক্ষেত্র তোর যে সে রে
শ্রদ্ধা রাখিস্ সেই টানে । ৬৬।
যে-কুলেতে জন্ম তোমার
উদ্ভবও সেই উপাদানে,
তোমার স্ব-এর বিশেষত্ব—
সত্তারক্ষী সেই চলনে । ৬৭।
কূল-টা জানিস্ জীবনধারা
সৃষ্টি-স্থিতি নিয়ে সাথে,
যে-কুল থেকে উদ্ভাবনা
স্ব-এর উদ্ভব সেইটি হ'তে । ৬৮।
নষ্ট হ'লেও তোমার কিংবা
তোমার কুলের মর্য্যাদা,
অন্যের কুল-মর্য্যাদাটি
রক্ষা ক'রো সর্ব্বদা । ৬৯।
অন্যের কুল-মর্য্যাদা রক্ষায়
কৃতি-বিজ্ঞ হ'বি' যেমন,
কূলবৈশিষ্ট্য বিশেষত্বে
সম্মানিত হবে তেমন । ৭০।
প্রেষ্ঠগৃহে থাকলে যেমন
প্রিয়-অনুগ চিত্ত থাকে,
চলায়-বলায়-করায় যেমনি
উচ্ছ্বসিত প্রিয়ই জাগে,
জীবনটাকে তেমনি ক'রে
প্রেয়-উচ্ছল ক'রে রাখা,
প্রিয়পন্থী হ'য়ে চ'লে
স্বাধীনতায় তেমনি থাকা । ৭১।
ভজনদুষ্টিই স্থৈর্য্য ভাঙ্গে
ভাঙ্গেই বুকের উৎস ধারা,
ব্রহ্মচর্য্য তাইতো সাধ্য
নিষ্ঠানিপুণ সুযোগ-দ্বারা । ৭২।
খণ্ড-টুকরো যা'ই না হোক
ধৃতিধারা রাখিস্ ঠিক্,
ব্যক্তি-পরিবার সবাই যেন
ধ'রে চলে এই নিরীখ । ৭৩ ।
ধৃতি-উদ্যম এমনি রাখিস্
ঐ সৌষ্ঠবে দিতে প্রাণ
ব্যত্যয়ী যা' করবে নিরোধ—
তা'তে কিন্তু নাহি আন্ । ৭৪।
শিখবি ওরে সবার কাছে
বৈশিষ্ট্যটি রেখে ঠিক,—
পারস্পরিক এই চলনে
ফুটবে জ্ঞানে সকল দিক্ । ৭৫।
দেশের ভাষা ভুলে তোরা
আন্ ব্যবহার করবি কেন ?
ঐতিহ্যটা বজায় রেখে
যত ইচ্ছা শিখিস্ যেন । ৭৬।
গুণ-অনুগ কুলের আচার
থাকবে যেথায় যেমনি,
নিষ্ঠা-ব্যবহার-খাদ্য-আচার
রাখবেই ধ'রে তেমনি । ৭৭।
নিষ্ঠাবিহীন আচার-ব্যাভার
কুলকে করে হীনতম,
বিপর্য্যয়ী যৌন-চলা
কুলের ধারা করে খতম । ৭৮।
সৃষ্টিগঠন জান্ আগে তোর
ঐ তুলনায় জান্ সকল,
সেই জানাটার বিনায়নে
ধৃতি-বিদ্যা কর্ কুশল । ৭৯।
ঊর্জ্জী-তেজা হৃদয় নিয়ে
নিষ্ঠানিপুণ উচ্ছলায়
চল্ ওরে তুই অসীম তেজে
সেবা রাগের মূর্চ্ছনায়,
তৃপ্তি পাবি, শক্তি পাবি
ক্রমেই বেড়ে চলবে হৃদয়,
তোমার সঙ্গে পরিবেশের
ভাগ্যদেবীর হবে উদয় । ৮০।
ঊর্জ্জীনতি দীপ্ত প্রবীণ
সঙ্গতিশীল যতই দেশ,
জীবনবৃদ্ধির কৃষ্টি নিয়ে
দক্ষ চলার নাইকো শেষ । ৮১।
জীবন-বৃদ্ধি সিদ্ধি লভুক
অমর তালে ওঠ্ রে নেচে,
জীবনীয় তুই বুঝবি যেটা
সামঞ্জস্যে নিস্ রে বেছে । ৮২।
অন্তরেতে কৃতিধারা
তপনেশাতে হোক্ রে পাগল,
বৃত্তি-বাঁধন দে ভেঙ্গে দে—
স্বস্তি উঠুক ভেঙ্গে আগল । ৮৩।
ব্যতিক্রমকে এড়িয়ে ফেলে
অনুক্রমে আয় রে আয়,
যে ক্রমেতে জীবন বাড়ে
সেই ক্রমই তো প্রাণের আয় । ৮৪।
তৃপ্তি আসুক, দীপ্তি আসুক
শান্তি নিয়ে কৃতি-পায়ে,
জীবনীয় সুপ্তি আসুক
আশিস্-ধারার মলয় বায়ে । ৮৫ ।
কৃতি-পথে চল এগিয়ে
ধৃতি তোমার অটুট থাকুক,
সম্বর্দ্ধনী স্বস্তি-চালে
তোমায় সবাই সুখে বহুক । ৮৬ ।
অস্তিবৃদ্ধির পোষণ-রোলে
ধারণ-পালন-সম্বেগে,
ওঠ্ তো নেচে তাথৈ-তাথৈ
কৃতিদীপন সম্ভোগে । ৮৭।
ঊর্জ্জী বুকে ধৈর্য্য নিয়ে
দক্ষ-নেশায় কৃতি-মাতাল,
চল্ রে হ'য়ে সম্বোধী তুই
প্রবুদ্ধতায় হ'য়ে বিশাল । ৮৮।
কৃতিরাগে দীপ্ত ব্যাভার,
ঊর্জ্জীতেজা শ্রদ্ধা নিয়ে,
আগলে ধ'রে অর্থ-বিভায়
দাঁড়া ওরে হৃদয় দিয়ে । ৮৯।
ইষ্টনেশায় শিষ্ট থেকে
অনুশীলনে ক'র্ষে নিয়ে,
সার্থকতার সুসম্পদে
চল্ চ'লে চল্ জীবন বেয়ে । ৯০।
সাত্বত যা' সিদ্ধতম
সেই দিকেতে ঝোঁক রাখিস্,
পূর্ব্বতনের সংস্কারের—
সিদ্ধ দাঁড়ায় পা ফেলিস্ । ৯১।
প্রাচীনেতে পা রেখে তোর
নবীন যা' তা' হাতে আন্,
এই চলনে চলৎ থেকে
বৃদ্ধিতে হ' সিদ্ধ-প্রাণ । ৯২।
অনুকম্পায় ইষ্টনিদেশ
যা'রাই করে ব্যতিক্রম,
তা'রাই জানিস্ যমের দালাল
শত্রু নাইকো তাদের সম;
ইষ্টনিষ্ঠা-প্রতিষ্ঠাটি
হৃদয় হ'তে নেয় কেড়ে,
নিদেশ-পালন-প্রবৃত্তিটি
যম-জীবনে দেয় ভ'রে;
কানে-কানে গোপন কথায়
দিয়ে বেড়ায় অসৎ-ঢেউ,
শয়তানেরই সেবক তা'রা
বুঝতে বাকী রয় কি কেউ ?
তাই বলি রে অলল চলায়
এখনো তোরা বিরত হ',
মাথায় নিয়ে ইষ্ট-বোঝা
জীবন চালা প্রত্যহ;
কথায় ফোটে কথার মালা
কান ছাড়া আর শোনে কেউ ?
কর্ম্মে ফোটে কৃতী জীবন
ওঠেই যা'তে বৃদ্ধি-ঢেউ;
ইষ্টে যদি থাকেই নেশা
অসৎ-নিরোধ তর্পণায়,
এখনই ওঠ্ মাভৈঃ-রবে
জেগে জাগা সব জনায়
হৃদয়টি তোর ওতলায়ে তোল
শ্রদ্ধাপূত অর্চ্চনায়,
মরণ-সাগর দে রে পাড়ি
সংস্থিত হ' বর্দ্ধনায়,
ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা'য়
বুঝবি তা'কে অসৎ ব'লে,
তা'র নিরোধই অসৎ-নিরোধ
করাই ভাল ছলে-বলে;
নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ্
অন্যের চলন-বলন বুঝে,
অসৎ যদি থাকে কোথাও
করিস্ নিরোধ বুঝে-সুঝে;
কেউটে সাপের বাচ্চা তোরা
কেঁচো হ'বি সে কী পাপ !
স্বর্গ-মর্ত্ত্য-রসাতলে
ফুটুক রে তোর মাভৈঃ-দাপ;
আমার কথা শুনবি কি রে—
লাগবে ভাল এমন চলা ?
যদি লাগে তৃপ্তি পাবে
মুর্খ 'আমি'-র এমন বলা । ৯৩।
বজ্রতেজা নিষ্ঠা নিয়ে
ঊর্জ্জী রাগ-গৌরবে,
ত্বরিত দীপক বোধ-বিবেকের
শিব-সুন্দর সৌরভে,
নিখুঁত কৃষ্টির সমাহারে
ক্ষিপ্র কৃতি-দ্যোতনায়,
বিপদ-আপদ ব্যর্থ ক’রে
পারিস্, দাঁড়া, এগিয়ে আয়;
জীবন-মরণ মথন ক’রে
অমৃত্যেরই তপস্যায়,
দুঃখ-আঘাত-ব্যাঘাত সবই
ব্যর্থ ক’রে চ’লে আয়;
সার্থকতা চাই-ই যে তোর
সম্বর্দ্ধনার ব্যাপ্তি নিয়ে,
ইষ্ট-নেশার সঙ্গতিতে
চল্ চ’লে চল, হাদয় দিয়ে;
কর্ম্মরণের নাচন-পায়ে
ডগমগ হৃদয়-তেজে,
দৃষ্টিও তোর জ্ব’লে উঠুক
সাত্বত সুর উঠুক বেজে। ৯৪।