ইষ্টভৃতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গের ১১শ খন্ডের ৬, ১১, ৫৭ পৃষ্ঠায় আলোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
২৪শে মাঘ, শনিবার, ১৩৫৪ (ইং ৭/২/১৯৪৮)
….
হাউজারম্যানদার মা ইষ্টভৃতির মূল তাৎপর্য্য-সম্বন্ধে জানতে চাইলে শ্রীশ্রীঠাকুর সংক্ষেপে বললেন—To earn and spend to serve the Love is to materialise love with every potentising ability ( নিজে উপায় করে প্রেষ্ঠের সেবার জন্য তা ব্যয় করলে প্রেষ্ঠের প্রতি নিজের ভালবাসা শক্তি-সম্বৰ্দ্ধনী যোগ্যতায় মূৰ্ত্ত হ’য়ে ওঠে )। যার জন্য নিঃস্বার্থভাবে যত করা যায় তার প্রতি ভালবাসাও তত বাড়ে। যার প্রতি আমাদের ভালবাসা বাড়ে, ধীরে-ধীরে তাঁর চরিত্রগত গুণাবলী আমাদের মধ্যে জ্ঞাতসারে ও অজ্ঞাতসারে ফুটে উঠতে থাকে। এইটেই হ’লো শ্রেয়ের প্রতি ভালবাসার মস্ত লাভ। প্রিয়পরমকে যদি আমরা নিজের জন্য ভাঙাই তবে তা’তে আমাদের স্বার্থপরতা বাড়ে। এবং ঐ স্বার্থপরতাই আমাদের পঙ্গু ও অন্ধ ক’রে ফেলে। আমাদের যোগ্যতা দিন-দিন তলিয়ে যেতে থাকে। আর প্রিয়পরমের জন্য স্বার্থ-ত্যাগ করলে আমাদের প্রবৃত্তি-অভিভূতি কমে। আমাদের স্বার্থবোধ enlarged ( বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ) হয়। তখন সঙ্কীর্ণতা লোপ পায়। আমরা চলার রাস্তা ঠিক পাই। Environment ( পরিবেশ )-কে ignore (অবজ্ঞা ) করার পরিবর্তে help (সাহায্য) করার বুদ্ধি হয়। এইভাবে পাওয়ার পথ খুলে যায়।
১লা ফাল্গুন, শনিবার, ১৩৫৪ (ইং ১৪/২/১৯৪৮)
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রাতে আমতলায় ইজিচেয়ারে ব’সে আছেন। যোগেনদা ( ব্যানার্জ্জী ), সুধীরদা ( সাহা ), যতীনদা (দত্ত ), রাজকুমারদা (শীল) প্রমুখ কাছে উপস্থিত আছেন।
কথা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—ইষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নী এমন জিনিস যে এর একটু অপলাপ হ’লেই বোঝা যায়। হরেন ভদ্র একবার স্বস্ত্যয়নীর উদ্বৃত্ত অন্য কাজে খরচ করেছিল, হঠাৎ তার হাঁটুটা ভেঙ্গে গেল, টাকা যত পুরণ করতে থাকল, তত হাঁটুর অবস্থা ভাল হতে লাগল। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও বাস্তবে এতখানি ক্ষতির কারণ সৃষ্টি হয়ই। তাই, বুঝে চলা লাগে। এর থেকে জীবনে কোনমতে কিছুতেই বিচ্যুত হ’তে নেই।
প্রফুল্ল—ইষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নী যারা না করে তাদেরও তো বেশ দিন চলে যায়।
শ্রীশ্রীঠাকুর—যারা ইষ্টকে অবলম্বন করে ইষ্টের পথে চলে, যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, স্বস্ত্যয়নী যারা অনুরাগের সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়মিতভাবে পালন করে চলে, তারা প্রতিদিন একটা vital elatement ( জীবনীয় আনন্দ ) ও vital ecstasy (জীবনীয় উচ্ছ্বাস )-এর যোগান পায়, কারণ, নাম, নামী ও ইষ্টীচলনের মধ্যেই আছে সত্তার রসদ। যারা এ-সবের ধার ধারে না, তারা ও-থেকে অতখানি বঞ্চিত হয়, ঐগুলি করার ভিতর-দিয়ে যা’ পাবার তা’ তারা পায় না। তাদের হয় চলতি চলন আত্মবিশ্লেষণী ও আত্মশোধনী কোন মানদণ্ড তাদের হাতে থাকে না। তাই, তাদে চলাটা হয় অন্ধের মতন। Suffer (কষ্টভোগ )-ও করে তেমনি। অবশ্য ইষ্টপথে যারা চলে, তারাও কর্ম্মফল-অনুযায়ী কষ্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু আত্মবিচার ও আত্মশোধনের বুদ্ধি থাকায় ক্রমাগত নিজেদের চিন্তা, চলন, বাক্য ও কর্ম্মকে সুনিয়ন্ত্রিত করতে চেষ্টা করে। এতে দুর্ভোগের কারণ ধীরে-ধীরে অপসারিত হয়।…
১৫ই ফাল্গুন, শনিবার, ১৩৫৪ (ইং ২৮/২/১৯৪৮)
….
এরপর কাজলভাই খেলতে-খেলতে একটা কলকে ঠিকরির উপযোগী জিনিস পেয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে এনে দিলেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর তাতে খুব খুশী হলেন, বললেন—একেই বলে জিনিস। আমাকে ভালবাসে, আমি তামাক খাই, ভাল ঠিকরির প্রয়োজন হ’তে পারে। তাই দেখামাত্র আমার কথা মনে ক’রে নিয়ে ছুটে এসেছে। ওতেই ওর তৃপ্তি। এইরকম ব্যবহার আমারও ভাল লাগে। এই হ’ল ইষ্টভৃতির প্রাণ।
নরেনদা (মিত্র )—– কী?
শ্রীশ্রীঠাকুর—আমি এটা একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ বলছি। কথা হ’ল মাথা ঘামানো, শরীর খাটানো জিনিস দিয়ে ইষ্টের তৃপ্তিসাধন। আর, সেই আকুল ধান্ধা নিয়ে চলা। প্রত্যেক মা-বাবার ছেলেপেলেকে এমনটা শেখানো লাগে, ভালবাসার জনকে দেওয়ান অভ্যাস করানো লাগে। মার উচিত ছেলেকে দিয়ে ছেলের বাবাকে দেওয়ান, আবার বাবার উচিত ছেলেকে দিয়ে তার মাকে দেওয়ান, এতে বাপ-মার উপর টান বাড়ে। বাপ-মার উপর যাদের টান হয় গুরুর উপরও তাদের টান হয়।
….