ইষ্টভৃতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গের ১৬শ খন্ডের ২০, ১০২, ১১০, পৃষ্ঠায় আলোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
২২শে চৈত্র, মঙ্গলবার, ১৩৫৫ (ইং ০৫/০৪/১৯৪৯)
……
শরৎদা —প্রকৃত ধ্যান কী?
শ্রীশ্রীঠাকুর— ধ্যান মানে ইষ্টসম্বন্ধীয় চিন্তা, ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার্থে কী করব, কেমন ক’রে করব, কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করব, কোন্ চলনে চলব ইত্যাদি চিন্তা। মন তো নিশ্চল থাকে না, মনন চলেই। সর্ব্ব প্রকারের মনন যখন ইষ্টার্থী ও ইষ্টানুগ হয়, তাকেই বলে প্রকৃত ধ্যান। এইই হ’লো একাগ্রতা। একাগ্রতা মানে নিথর অবস্থা নয়। নিষ্ঠানন্দিত একমুখী চিন্তা-চলনই একাগ্রতা। আরো একটা জিনিস মনে রাখবেন, যজন যেমন নিত্যকর্ম্ম, যাজনও তেমনি নিত্যকর্ম্ম। একটাকে বাদ দিয়ে আর একটা নয়। আর ইষ্টভৃতি হ’লো ইষ্টপ্রাণতার spine অর্থাৎ মেরুদন্ড।
……
০৬ই বৈশাখ, মঙ্গলবার, ১৩৫৫ (ইং ১৯/০৪/১৯৪৯)
……
শ্রীশ্রীঠাকুর বসতে না বসতেই লোকের ভীড় জমে গেল। তিনি হঠাৎ নিম্নলিখিত ছড়াটি বললেন—
নাম আর ধ্যানে উচ্চচিন্তা
করণ-কারণ যেমন,
জীব-জীবনের গতি-মুক্তি
হওয়া-পাওয়াও তেমন।
এই প্রসঙ্গে বললেন—মানুষের চিন্তা বাক্য ও কর্ম্মে প্রতিফলিত হয়। যজনশীলতার অভ্যাসে মানুষের চিন্তাধারা যত ইষ্টকেন্দ্রিক হ’য়ে ওঠে, ততই তার বাক্ ও কর্ম্ম ইষ্টানুগ ধাঁজ নেয়। ইষ্টচিন্তাপরায়ণতা স্বাভাবিক প্রবণতা হ’য়ে যদি কারও ভিতর জেগে ওঠে, তাহ’লে তার চলা-বলার মধ্য দিয়ে তা’ প্রকাশ পায়ই। তাই বলেছি যজন, যাজন, ইষ্টভৃতির কথা। যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি তিন-ই ঠিকমত করা লাগে। এই ত্রয়ী সাধনার অধিষ্ঠানভূমি হ’ল কিন্তু অনুরাগ-সমন্বিত যজন, এইটাই শিকড়, এই শিকড় জীবনের গভীরে গেড়ে যেয়ে অচ্ছেদ্য ও নিনড় হওয়া চাই। তাহ’লে শত ঝড়-ঝাপটাও টলাতে পারে কমই।
………
জীবনদা—আমার একমাত্র কামনা যাতে আমি যোগ্য হ’তে পারি আপনার কাজে।
শ্রীশ্রীঠাকুর—আমার সব চাইতে বড় কামনা—তুমি কর, পাও, হও;—আর যোগ্যতা এর ভিতর দিয়েই।
বেলা অনেক হয়ে গেছে, যতি-আশ্রমে টিনের চালের বারান্দার নিচে এখন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বেশ কষ্ট হ’চ্ছে। তাঁর পেলব দেহ থেকে টসটস্ ক’রে ঘাম ঝরে পড়ছে। তবুও জীবনদার আগ্রহ দেখে তিনি অক্লান্তভাবে ও আনন্দে প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে চলেছেন।
জীবনদা—করণীয় কী?
শ্রীশ্রীঠাকুর—করণীয় ঐ যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি। এই তিনটে জিনিস মানুষকে চালিয়ে নিয়ে বেড়ায়। এতে আমাদের অজ্ঞাতে আমাদের ভিতর একটা অসাধারণ শক্তি সংহত হ’তে থাকে, যা’ কিনা আমাদের বিপদে-আপদে রক্ষা করে। যজন-যাজন হ’ল একটা এ্যারোপ্লেনের দুটি পাখা, আর ইষ্টভৃতি হ’ল motive force (চালক শক্তি)।
…….