ইষ্টভৃতি নিয়ে আলোচনা-প্রসঙ্গে ৬ষ্ঠ খন্ড

ইষ্টভৃতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৭০ ও ৯৮ পৃষ্ঠায় আলোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

৩০শে চৈত্র, ১৩৫১, শুক্রবার (ইং ১৩/০৪/১৯৪৫)

……
একটি দাদা বললেন—আমার বাবার ইচ্ছা যে গ্রামের সবার সুবিধার জন্য ভাল দেখে একটা পুকুর কাটি, কিন্তু আমার মনে হয়, পুকুর কাটলেও পুকুরের জল ঠিক রাখার মত শিক্ষা গ্রামের লোকের নাই, তাই ঐ টাকা দিয়ে বরং কয়েকটা টিউবওয়েল (নলকূপ) গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ক’রে দিই। কী করলে ভাল হয় ?

শ্রীশ্রীঠাকুর—বাবার ইচ্ছা পূরণ করাই লাগে। জলাশয় প্রতিষ্ঠা একটা পরম পুণ্য-কৰ্ম্ম। পুকুরের জল যাতে নষ্ট না করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা লাগে। আর পুকুর ও টিউবওয়েল (নলকূপ) দুই-ই যদি করতে পার, আরো ভাল হয়। আগে গরমের সময় অনেকে রাস্তার পাশে বড়-বড় গাছের ছায়ায় জলছত্র খুলতো, কেউ আসলে বসতে দিত, তালপাখা দিয়ে হাওয়া করতো। তারপর একটু ঠাণ্ডা হলে জল-বাতাসা ইত্যাদি দিত। শ্রান্ত, ক্লান্ত পিপাসার্ত্ত যারা, তারা বিশ্রাম নিয়ে জলটল খেয়ে আবার পথ চলতে সুরু করতো। আজকাল সে-সব জিনিস উঠে যাচ্ছে, কে কার কথা ভাবে? শুনতে পাই, মিলিটারি কনট্রাক্টাররা অনেক বড়-বড় গাছ সব কেটে ফেলেছে। আগে লোকে জলাশয়-প্রতিষ্ঠা যেমন করতো, প্রয়োজনমত বৃক্ষ-প্রতিষ্ঠাও করতো। ঐ সব tradition (ঐতিহ্য) খুব ভাল ছিল। লোককল্যাণকর কাজগুলি religiously (ধর্ম্মাচরণ হিসাবে) করা হ’ত। ইষ্টভৃতির ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্যদান ইত্যাদি যদি তোমরা religiously observe (ধর্ম্মাচারণ-হিসাবে পালন) কর, তাহ’লে দেখবে, এর ভিতর-দিয়ে কতখানি পারস্পরিকতা গজিয়ে ওঠে।
…….

১৯শে শ্রাবণ, ১৩৫২, শুক্রবার (ইং ০৪/০৮/১৯৪৫)

…..
শ্রীযুক্ত বরদলই—ছোট্ট scale-এ (আকারে) যদি সাফল্য লাভ করা যায়— সেটা ব্যাপকভাবে করা কঠিন কথা নয়।

শ্রীশ্রীঠাকুর — হ্যাঁ! ঠিক বলেছ। একটা zygote form (জীবকোষ তৈরী) হ’লে, তা’ থেকেই একটা body-system (শরীর-বিধান) হ’য়ে যায়। Nucleus (বীজকেন্দ্র) ঠিকমত গড়তে পারলে ভাবনা নাই, তখন একেবারে সুলতান সাহেবের চাটাই-এর মত সারা দেশ ছেয়ে যাবে।

শ্রীশ্রীঠাকুর মাতোয়ারা হ’য়ে ব’লে চললেন—তিনটে জিনিস আছে—Ideal (আদর্শ), individual (ব্যষ্টি), environment (পারিপার্শ্বিক)—যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি। প্রত্যেক individual-কেই (ব্যক্তিকেই) Ideal (ইষ্ট) এবং environment-এর (পারিপার্শ্বিকের) দিকে চেয়ে যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি ক’রে চলতে হবে—এর ভিতর-দিয়েই তার বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে। আবার গীতায় এ কথাও আছে—’যান্তি মদ্ যাজিনোঽপি মাম্’—অর্থাৎ যে আমার যাজন করবে, সে আমাকেই পাবে। অর্থাৎ যাজনটা এমনই জিনিস যে একমাত্র যাজনেই তাঁকে পাওয়া যায়, অবশ্য প্রকৃত যাজনের সঙ্গে যজন এবং ইষ্টভৃতি এসে পড়ে। আমাদের ভয়ের কারণ নেই, একটু প’ড়ে গেছি, তাতে এসে যায় না। এখনও আমাদের instinct (সহজাত সংস্কার) — যাকে বলে immortal necklace of germ-cells (জীবকোষের অবিনশ্বর মালা)—ঠিক আছে। একটু alert eye (সতর্ক দৃষ্টি) নিয়ে push ক’রে (চালিয়ে) যেতে পারলেই হয়।
……..