অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “কর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৯৩ – ১২২ পর্যন্ত মোট ১৫৩ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ১০১ – ১৫৩ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।
সৎ-চাহিদার আবেগ নিয়ে
সুকৃতিতে চলবি যেমন,
অবনতি তোর রুদ্ধ হ'য়ে
উন্নতিটি ফুটবে তেমন। ১০১।
যা' হ'তে চাস—ক'রে হবি
হাতে-কলমে কাজে,
তা' না ক'রে হ'তে চাওয়া
প্রায়ই কিন্তু বাজে। ১০২।
ইচ্ছা যেমন আবেগ তেমন
তেমনি কৃতিদ্যোতনা,
কৃতিই আনে বাস্তবেতে
ব্যক্তিত্বেরই বর্দ্ধনা। ১০৩।
ভাল-মন্দ কী করেছ
বিচার কর হৃদয় দিয়ে,
সেই ফলনে এঁচে নিও
চলবে কেমন চলন নিয়ে;
করেছ কী তা' স্মরণ ক'রো
করবে যে কী তা'ও—
কেমন ক'রে করবে সে-সব
ভেবে-চিন্তে নাও;
করেছ যা'—স্মরণ কর
করবে যেটা সেটাও তাই,
কা'তে কেমন কী ফল পেলে
কিসে কী ফল ফলে নাই;
স্মরণ-মনন এমনি ক'রে
জীবন-চর্য্যায় চলতে থাক,
চলার আগেই বুঝে-সুঝে
না খতিয়ে চ'লো নাকো। ১০৪।
সুসঙ্গত অর্থেতে তুই
ভাব যা'-কিছুর পুষ্টি দিয়ে,
চল্ ওরে চল্ উদ্বর্দ্ধনায়
নিষ্ঠাভরা হৃদয় নিয়ে। ১০৫।
কৃতিদেবতা ঐ দাঁড়িয়ে
হাতে নিয়ে পারিজাত,
পারগতা সুষ্ঠু যেমন
পায় সে তেমন আশীর্ব্বাদ। ১০৬।
বেদ-উপনিষদ পুরাণ-ভাগবত
কৃতি-গীতিই গায়,
যেমন করা পাওয়াও তেমন
জীবন তা'তেই ধায়। ১০৭।
যা'-কিছু যা'র ইষ্ট লাগি'
স্ফীত কৃতি-দাপে,
কৃতকর্ম্মা এমনই সে
গর্ব্বে ধরা কাঁপে। ১০৮।
ঐশী ধৃতির সম্বেগে যে
যেমন কৃতি-লিপ্ত,
ধারণ-পালন-সম্বেগও তা'র
তেমনতরই দীপ্ত। ১০৯।
নিষ্পাদনী কৃতি যেথা
রাগস্রোতে ভাসে,
ঈশ্বরেরই অবদান তো
ঐ পথেতেই আসে। ১১০।
কৃতিচর্য্যায় জ্ঞান পাবি তুই
বিভব আসবে ছুটে,
ঐশ্বর্য্য তোর অটুট হবে
ধৃতি উঠবে ফুটে। ১১১।
কৃতি বিনা জ্ঞান-মহিমা
ফুটন্ত হয় কোনখানে !
কৃতিহীন জ্ঞান কোথায় আছে
কোন্ কন্দরে, কোন্ স্থানে ? ১১২।
মানসা যেমন করবি তুই
চলবি তেমন কৃতি-পথে,
সৎ-আচার আর সদ্-ব্যবহার
বেঁধে নিয়ে তা'রি সাথে। ১১৩।
করাতেই কিন্তু স্বার্থ বটে
ক'রেই কৃতী হয়,
যে করে সে কৃতকর্ম্মা
হয়ই তা'তে জয়। ১১৪।
ঊর্জ্জনাকে বুক ভ'রে নে
বিক্রমী হ' কাজে,
নিষ্পাদনী সুসৌষ্ঠবে
কৃতি-মুকুট রাজে। ১১৫।
কৰ্ম্ম যেমন ধৃতিও তেমন
জীবনও তোর তেমনি ধায়,
স্বভাব তেমনি ওঠে ফুটে
চললে কৃতী নাছোড় পায়। ১১৬।
কৃতি যা'দের নিষ্ঠা-নিপুণ
ব্যাপ্তি আসে বাস্তবে,
কৃতি-প্রভু হয় যে তা'রাই
আত্মতৃপ্তির বৈভবে। ১১৭।
চিত্ত যত সদভাবেতে
সুরঞ্জিত হ'য়ে রয়,
কৃতির নেশা বাস্তবেতে
তেমনতরই হয় উদয়। ১১৮।
আশা যা'দের কৃতি-আবেগে
ঊর্জ্জনা-উছল করে না,
নিয়মনী সৎচলন তা'র
অনুশীলনে আসে না। ১১৯।
কৃতির ধুলায় ধূসর হ'য়ে
জ্বালিয়ে বুকে ফাগুন-রাগ,
প্রীতির ফসল গজিয়ে নে তুই
চলবে যা'তে জীবন-যাগ। ১২০।
কৃতি যেমন ঊর্জ্জী যা'দের
ধৃতি-আবেগ নিষ্ঠা নিয়ে,
নিষ্পাদনী অনুশীলনও
আসেই তেমনি নিষ্ঠা ব'য়ে। ১২১।
আসল কথা—বাঁচ, বাড়,
উছল হ'য়ে অনুরাগে,
দীপ্ত কৃতি তৃপ্ত হ'য়ে
নিষ্পাদনে রহুক জেগে। ১২২।
ভাববৃত্তির অঢেল আবেগ
নিষ্ঠানিপুণ ঊর্জ্জনায়,
কৃতির নেশায় তরতরে কর্
নিষ্পাদনী দক্ষতায়। ১২৩।
যদিও নিষ্ঠা কৃতির স্রষ্টা—
উদ্বোধনায় উচ্ছলা,—
সতর্ক হও! দুষ্ট কৃতি
করেই সে পথ পিচ্ছলা। ১২৪।
বুঝে চলিস্ ওরে পাগল।
ছাগল-বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে—
সাত্বতেরই অভিযানে
হৃদয়টিকে বেঁধে নিয়ে। ১২৫।
চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া
যুক্ত-দীপন দক্ষতায়,
চলবি-করবি খাবি-দাবি
সত্তা সুষ্ঠু যা'তে রয়। ১২৬।
অনুশীলনে অভ্যাস আসে
অভ্যাস আনে সংস্কার,
ক্রমান্বয়ী এই চলনে
বৃদ্ধিতে হয় জীবন পার। ১২৭।
অনুশীলন আনে করার কৌশল
কুশলকৰ্ম্মা জ্ঞানী হয়,
বাস্তববাদে যে-জন খাঁটি
কৃতি গায় তা'র জ্ঞানের জয়। ১২৮।
নিষ্ঠাপ্রতুল অনুশীলনে
রাখ্ প্রবৃত্তি এখনও রে,
কৃতি-তপে যা' লেগে তুই
সার্থক সুন্দর হ' না রে। ১২৯।
সিদ্ধ হবে যা'তে তুমি
বৃদ্ধি পাবে তা'তেই,
সিদ্ধ হ'য়ে বৃদ্ধি পাওয়া
রয়েছে তোমার হাতেই। ১৩০।
আগেই যা'র করলে মন্দ
তা'রই ভাল করবে আগে,
ভাল করার এই চলনে
পাপস্খালন হয় অমনি রাগে। ১৩১।
সমাধানী প্রবৃত্তি নিয়ে
প্রবৃত্তই যদি হ'য়ে থাকিস্,
ঐ আগ্রহ-ধৃতি-তপায়
কর্ম্মে মুখ্য ক'রে রাখিস্। ১৩২।
কাজের সময় দরদ নেশায়
সতর্ক থেকে সাহায্য করা,
অনুকম্পারই লক্ষণ সেটা
প্রীতিও থাকে তা'তে ধরা। ১৩৩।
রাগ-আবেগের উদ্দীপনায়
যেমন যেটা ক'রে থাকিস্,
ভাববৃত্তির নিয়মন যে তা'ই,
তেমনি ফলই ব'য়ে চলিস্। ১৩৪।
জ্ঞানের কথা বলবি যতই
সে-জ্ঞান কিন্তু কাজের নয়,
কর্ম্মেতে যে উদ্ভব জ্ঞানের
তা'তেই জীবন সার্থক হয়। ১৩৫।
দল ভেঙ্গে দল করিস্ নাকো
সব দলে কর একটা দল,
সাত্বত সেই ধৃতি-প্রসাদে
শিষ্ঠ তপে পাবিই বল। ১৩৬।
কর্ম্মের প্রসাদ জ্ঞানই কিন্তু,
জ্ঞান হ'তে হয় দৃষ্টি খোলা,
চলন-চালন তা'য় নিয়মন
আরোর দিকে হয় উচ্ছলা;
কৰ্ম্ম ছাড়া ধৰ্ম্ম কি হয় ?—
ধৃতিতপা হ'তেই হবে,
কর্ম্মপথে প্রাপ্তি আসে
প্রাজ্ঞ জীবন পাবি তবে;
নৈষ্কর্ম্ম্য-যোগ তখনই আসে
করণ যখন প্রজ্ঞা আনে—
স্থবির প্রাজ্ঞ তখনই সে
কার্য্য করে নিয়ন্ত্রণে। ১৩৭।
সব মানুষই হীরের ফুল
করণ-দীপ্ত থাকে যদি,
জীবন-স্ফটিক কৃতিচর্য্যায়
দীপ্ত রাখ্ তুই নিরবধি। ১৩৮।
পৃথক্ পৃথক্ ক'রে জেনে
যুক্ত চলায় ন্যস্ত হ',
যোগজ্ঞানে যুগিয়ে নতুন
দায়িত্বকে সুষ্ঠু ব'। ১৩৯।
এখনও ওরে, ফিরে দাঁড়া,
কাজে লেগে যা, কর্ সুসার,
ঠকা-জেতার কুটিল পথে
সার্থকতা পাবি দেদার। ১৪০।
দক্ষ সাধু বহুদর্শী যে
হাতে-কলমে যে-জন জানে—
বোধের সাথে মিলিয়ে নিয়ে
চলিস্ তা'দের চলন-টানে। ১৪১।
নির্ব্বাহেরই উপাদানে
নিষ্পাদনী মঙ্গল ঠাট,
কৰ্ম্ম-পূজা অটুট রাখিস
ঠিক রেখে তোর স্থণ্ডিল টাট;
পূজা-পাঠ তুই যতই করিস্
ফুল-চন্দন গঙ্গাজলে,
অনুশীলনী কৌশল ছাড়া
জ্ঞান হবে না কোনও কালে;
সম্বর্দ্ধনী সেবাটি যা'
পূজা কিন্তু তা'কেই বলে,
সেবা-সুন্দর বর্দ্ধনাতেই
আশিস্ পূজার ফলেই ফলে। ১৪২।
চালটি তোমার যেমনতর
চলনও যদি তেমনি,
ভাগ্যদেবীও তোমার কাছে
আসবেন হ'য়ে সেমনি;
চালবাজি তোর শুভ যেমন
চলনও যেমন শুদ্ধ,
সংস্পর্শও তেমনি ক'রে
করবে সবায় বুদ্ধ;
দুনিয়াটা আর কিছু নয়
শুধু একটা চাল,
ভাল-মন্দ যা'র তা' যেমন
তেমনতরই হাল। ১৪৩।
সৎ-নিষ্ঠা তুই রাখবি বুকে
করবি তেমনি সৎ যা' কাজ,—
সতর্কতায় চক্ষু রেখে,
পড়বে মাথায় ধন্য লাজ। ১৪৪।
আচার্য্যেরই সস্তৃপণা
সাধ্য যে তাই রাখ না শুনে,
ঐটি নিয়েই জীবন কাটা
কৃতি-জীবন বুনে-বুনে। ১৪৫।
বোধি-নিবেশ দক্ষ ক'রে
আগ্রহকে শক্তিশালী,
না ক'রে যদি উচ্ছলাকে
অবশ ক'রে রাখিস্ খালি,
জীবন-পথে আসবে কি তোর
বজ্রকঠোর ঊর্জ্জনা—
'যা' দিয়ে তুই কৃতিস্রোতা
হ'য়ে আনবি বর্দ্ধনা ? ১৪৬।
ভয় করিস্ নে, ঘাবড়াস্ নে তুই
উদাম ধাওয়ায় ক'রে চল্,
কাজে যতই এগিয়ে যাবি
মনেও তত বাড়বে বল। ১৪৭।
স্থান কাল পাত্র
আর পরিবেশ,
দেখে-শুনে-ভেবে বুঝিয়া বিশেষ,
কর, বল আর তেমন চল,
স্মরণে রাখিয়া ইষ্ট-নিদেশ। ১৪৮।
শ্রমেও থাকে সুখ
প্রেষ্ঠরাগী উদ্যমেতে
ফোলা যখন বুক। ১৪৯।
হৃদয়ের বল দেখে-বুঝে
বোধ-বিবেকী ঈক্ষণে,
বুঝবি যেমন, করবি তেমন,
তৃপ্তিপ্রদ নিক্কণে। ১৫০।
অটুট-স্রোতা ইষ্টনেশা
সকল কাজেই থাকে,
নিষ্পাদনী অর্ঘ্যে আরো
দক্ষতাকে ডাকে। ১৫১।
'দিন গেল রে'—এই ব'লে তোর
ব'সে থাকলে চলবে না,
ধরতে হবে করতে হবে
যেমনটি তোর কামনা। ১৫২।
তাঁ'র কৃপা তো আছেই ওরে
থাকবেই চিরদিন,
কৃপা পাওয়ার করণ ছেড়ে
কেন হ'বি তুই হীন ? ১৫৩।