অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “ধর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১১ – ৩৮ পর্যন্ত মোট ১৫৪ টি বাণী রয়েছে । নিচে ১০১- ১৫৪ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।
ইষ্টনিদেশ আঁকড়ে ধরবি
স্বাস্থ্য-নীতি তা'র মাধ্যমে,
কৃতিনীতির নিষ্পাদনায়
মগ্ন থাকিস্ এই ধরমে । ১০১।
নিষ্ঠা-আচার তরতরে কর্
ধৃতির তালে বিনিয়ে তা'দের,
পুষ্টি পেয়ে ধৃতি করুক
উচ্ছলাতে পুষ্ট তোদের । ১০২।
বাঁচাবাড়ার সমস্যা যা'দের
অন্তরেতে স্বতঃই জাগে,
ধৰ্ম্মকথা ধৃতি-চলন
তা'দের জানিস্ ভালই লাগে । ১০৩ ।
জীবনটা তো খেলার নয়কো
হেলাফেলার নয়কো সেটা,
বাঁচাবাড়াই পরম স্বার্থ
বোঝে না এমন মূর্খ কেটা ? ১০৪।
ধর্ম্মশিক্ষাই ধৃতিশিক্ষা
আচরণ আর তপ-সাধনায়,
পদ্ধতিতে যে-জন দড়—
প্রাপ্তি আসে তা'র উচ্ছলায় । ১০৫।
বাঁচাবাড়ার পরিক্রমা
বাড়িয়ে তুমি তুলবে যত,
সঙ্গতিশীল ব্যক্তিত্বতে
জেগেই তুমি উঠবে তত,
ধর্ম ততই উঠবে ফুটে
ধারণ-পালন-পুষ্টি নিয়ে,
কৃষ্টি-জাতি-বর্ণান্বয়ে
উঠবে ক্রমেই পুষ্ট হ'য়ে । ১০৬ ।
জীবনটা তো তিনটি ধারায়
সৃষ্টি হ'ল এই দুনিয়ায়;
জীবনধারা একটি শুধু
নিরোধ-ধারাও একটি,
পোষণ-ধারাও তেমনতরই
চলতে সাথে একটি;
পোষণধারা ঠিক রেখে তুই
জীবনে হ' উচ্ছলা,
নিরোধটাকে তরতরে রাখ্
হ'স না হৃদে পিচ্ছলা;
নিরোধ মানেই অসৎ-নিরোধ
জীবন-ধারায় বর্দ্ধনা যা'র—
পোষণ দিয়ে পুষ্ট করে
এইতো প্রধান বৃত্তি তাহার;
চলন-বলন এমনি করিস্
তিন ধারাকে এক ক'রে,
সৎ-নন্দনায় নিরোধ-পোষণ
জীবনটাকে রাখে ধ'রে;
তিন-এর ধৃতিই করিস্ পালন
এমন চালে চলবি—
তোমারই বা অন্যেরই হো'ক,
এমন চর্য্যায় থাকবি । ১০৭।
শুভসিদ্ধ জীবনপোষক—
স্বস্তিরক্ষায় সমীচীন,
জীবনীয় ব'লে তা'কে
জ্ঞাপিত ক'রো নিত্যদিন । ১০৮।
সাধ্যে যেমন কুলায়—লোকের
ধৃতিচর্য্যা বাদ দিয়ে,
ধৰ্ম্মচর্য্যা হবে নাকো
হাওয়াই-জ্ঞানের তুক নিয়ে;
দেখতে হবে শুনতে হবে,
করতে হবে বুঝে-সুঝে—
স্বস্তি আসে কেমন ক'রে
করবে সেটা নিজে খুঁজে । ১০৯।
সব বোধনায় সুযুক্তিতে
সঙ্গত ক'রে সমীচীন,
ধৃতি-বিদ্যা জাগবে তবে
ক্রমে-ক্রমে সর্ব্বাঙ্গীণ । ১১০।
সর্ব্বাঙ্গীণ সপরিবেশের জ্ঞান
কৃতি-যাগের উদ্ভাবনে,
বোধ-বিনায়ন-ধৃতির পথে
চ'লতে হবে উন্নয়নে। ১১১।
যাঁ'র ছায়া ছাড়া নাইকো আশ্রয়
চর্য্যাসেবায় দীপ্ত তুমি,
সেইতো তোমার জীবন-অর্থ
সেই তো তোমার স্বস্তি-ভূমি । ১১২।
সন্দীপনী প্রেষ্ঠ-নিষ্ঠা
কৃতিভূষিত অনুকম্পা,
পরিচর্য্যী শ্রমপ্রিয়তায়
হয়ই মানুষ সুসন্তপা । ১১৩।
ইষ্টনিষ্ঠা অটুট যা'দের
কৃতি-তৎপর মিতি-গতি,
আচার-ব্যাভার মিষ্টি-মধুর
তা'রাই তো পায় সুসংস্থিতি । ১১৪।
নিষ্ঠা-কৃতির ধৃতি-দীপন
উৎসর্জ্জনারই অনুরাগে,
জীবনটাকে ভরপুর রাখিস্
ধৃতিচর্য্যা এনে বাগে । ১১৫।
আচার-নিয়ম—তপের মকস
সম্বেদনাই সৃষ্টি করে,
অভ্যাস-অনুরাগ-অনুশীলনে
আবেগ-সহ ধৃতি বাড়ে । ১১৬।
মিছে কেন এঘাট-ওঘাট
বেড়ায়ে হাল্লাক হ'বি আর !
পোড়া কাঠের গতির মতন
ধ'রে এ-ঘাট ধরবি আর ? ১১৭ ।
জরণশীল তো সব জগতে
জীবন গেলেই জর হয়,
জরত্বকে তাড়িয়ে দিয়ে
কর এমনটি—বাঁচে যা'য় । ১১৮ ।
সত্তা যখন বিব্রত হয়
হাত বাড়ায় সে বাঁচার তরে,
প্রকৃতির এ পরম আবেগ
হৃদয় দিয়ে প্রকাশ করে । ১১৯ ।
সত্তা-প্রীতি এতই জীবের
বৃত্তি-পাশে রয় না লীন,
সবাই যখন এক-আশ্রয়ে
আত্মরক্ষায় কাটায় দিন । ১২০।
দীক্ষা জানিস্ দক্ষ করে
প্রীতিদীপ্ত করে প্রাণ,
কূটকুশলী অনুশীলনে
কৃতি-তীর্থে করায় স্নান । ১২১।
দক্ষ হবার উপায় জানায়,
দীক্ষার তাই এত দাম,
কৃতিগুরুর কাছে গিয়ে
সার্থক কর্ দীক্ষা-নাম । ১২২।
দয়া যেথায় স্বতঃস্রোতা
সেইতো দয়ালদেশ,
ধারণ-পোষণ-চর্য্যাটি
তাই ধর্ম্মেরই নিদেশ । ১২৩।
ঈশ্বরেরই দুন্দুভি ঐ
ধারণ-পালন-পোষণ-স্রোতা,
বেঁচে থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায়
হ'চ্ছে যে তা'র সার্থকতা । ১২৪।
ভজন-সেবা-ব্যাপন-হৃদয়
দৃপ্ত রাগে তৃপ্তি নিয়ে,
ভগবানের সেইতো আসন
মূর্ত্ত সেথায় দীপ্তি দিয়ে । ১২৫।
ধৰ্ম্ম যতই ফুটবে তোমার
নিষ্ঠা, নীতি, ব্যবহারে,
প্রতিষ্ঠাও আসবে তেমনি
পারবে নাকো রুখতে তা'রে । ১২৬।
ধর্মচর্য্যা ক'রে চললে
বাড়বে ধৃতি ক্রমে-ক্রমে,
কুকর্মেরও হবে নিরসন
তেমনতরই যথা-নিয়মে। ১২৭।
ইষ্টভৃতি আবেগ বাড়ায়
ধৃতিধান্ধার চর্য্যা নিয়ে
যোগ্যতাতে যুত ক'রে
জীবনটাকে সুবিনিয়ে । ১২৮।
স্বস্ত্যয়নীর শুভচর্য্যা
কৃতার্থতায় কৃতী করে,
স্বস্তিতপা ক'রে তা'কে
সত্তাটাকে তুলেই ধরে । ১২৯।
লোহায় পোষে রক্তকণা
শঙ্খে পোষে হাড়,
সিন্দুরেতে শোভা বাড়ায়
বন্ধ্যার প্রতিকার । ১৩০।
অন্যের শুভ হ'য়েও কিন্তু
তোমার ক্ষতি হয় না,
এমন কথা আচার-ব্যাভার
কুৎসিততা বয় না। ১৩১।
সুসমীচীন বাঁচা-বাড়ার
আচার নিয়ে চললি যেমন,
সুসংন্যস্ত সন্ন্যাসী তুই
বাস্তবতায় হ'লি তেমন । ১৩২।
সত্তা তোমার কলগতিতে
ক'রলে শুভ'য় আমন্ত্রণ,
যে-ফল তোমার সত্তাপোষক
তা'ই-ই কিন্তু কল্যায়ন। ১৩৩ ।
চাওয়ায়-চলায় নাই ভগবান
খোশ-খেয়ালে করে যা'-তা',
ভগবান্ যে অন্তৰ্য্যামী
তা'র মুখে সে ঠাট্টা কথা । ১৩৪।
শ্রদ্ধাচৰ্য্যা নাইকো কিছু
নাইকো কৃতি-অনুশীলন,
স্বার্থলোভে ঘুরে বেড়াস্
সুফল-আশায় অনুক্ষণ;
দেবতার কাছে মাথা কুটিস্
ফাঁকি দিয়ে বাগাতে মাল,
ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব—
ফাঁকি দেখে নয় সামাল ?
ঢাকে-ঢোলে ভক্ত সেজে
স্বার্থ-পূজায় ন্যস্ত কেবল,
ও-বাহবায় কী হবে তোর
জীবনটাই যে হ'ল বিফল;
ঠিক বলি শোন্ ঠিক হ'য়ে চল্
ইষ্টনিদেশ পালন ক'রে,
জীবনটা তোর ভ'রে উঠুক
শ্রদ্ধাতপে ঠাকুর ধ'রে । ১৩৫।
জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে
নাস্তিকতার ধুয়ো গাও,
অস্তিত্বটা নাকচ ক'রে
দল্ছ জীবন দিয়ে পাও ? ১৩৬ ।
উঠে দাঁড়া, এঁটে দাঁড়া,
শোন্ কী বলে বরেণ্যে,
সত্তাসাধায় যাবি কেন
বিফল হ'য়ে অরণ্যে ? ১৩৭।
ভেলকি দেখায় যাদুকরে
সাধুর কাজ তা' নয়কো ওরে !
ভেলকি ভেঙ্গে বাস্তবতায়
কিসে কী হয়—সাধু ধরে । ১৩৮।
অস্তিত্বতে বজায় থেকে
নাস্তিকতার গর্ব্বী তুই,
থাকবে কী তোর দেখ না ভেবে
চাস্ যে ফসল ফেলে ভূঁই । ১৩৯।
সর্ব্ব কর্মে সুনিয়মন—
স্বভাব-নিয়ম ছাড়লি যেই,
ধৰ্ম্মপালন হ'ল না তোর
হারিয়ে ফেললি জীবন-খেই । ১৪০।
আচার্য্য-নিদেশ মানবি নাকো
করবি না কিছু কাজে,
না করলে কী হবে তোর
পিছু ঘোরাই বাজে । ১৪১।
জীবন নিয়ে চলিস্-ফিরিস্
সত্তার ধার ধারলি কি?
সাত্বত যে পন্থাটি তোর
সেই পথে তুই চললি কি ? ১৪২।
হাজার ভড়ং করিস্ না ক্যান্
ধৃতি-করণ দিয়ে বাদ,
রকম-সকম যা'ই করিস্ না
পুরবে নাকো মনের সাধ । ১৪৩ ।
নিজে যদি কর ধর্ম্ম
অন্যকে বাদ দিয়ে,
ধৃতি তোমার হীনবল হবে
দুষ্ট-সংঘাত নিয়ে । ১৪৪।
ঐশী পূজা যে-কামনায়
করবি যেমন উপচারে,
চারিয়ে যাবে জীবন-সম্বেগ
তেমনতরই সেই ধারে । ১৪৫।
ঈশ্বরেরই দোষ দিলি তুই
মতিচ্ছন্ন ! ভাবলি না,
ইচ্ছা-শক্তি তাঁ'তে দিয়ে
তুই কেন বল্ চললি না ? ১৪৬ ।
ঐশী সেবায় চলতিস্ যদি
ইষ্টকে তুই স্থণ্ডিল ক'রে,
করপুটে অর্ঘ্য দিয়ে,—
উঠত পুণ্যে হৃদয় ভ'রে । ১৪৭।
ঈশ্বরেরই ইচ্ছাস্রোতে
কল্যাণেরই অতুল বেগে,
চলতে যদি তৃপণ-ঢেউয়ে
বাড়ত জীবন কৃতি-যোগে । ১৪৮।
সৎ-আচার্য্যে ক'রে ত্যাগ
অন্য গুরুকরণ করে,
যেমন-তেমন হোক না সে-জন
নষ্ট জীবন আগলে ধরে। ১৪৯।
সুসম্বোধী কৃতিচর্য্যায়
জীবনবৃদ্ধি পাললি না,
কী হবে তোর বাজে বায়নায়
নিদেশধৃতি ধরলি না । ১৫০।
ভাবলি জ্ঞানী নাড়লি মাথা
বললি ব্যথা হৃদয়ের,
পেলি কী আর করলি বা কী—
হ'লি প্রাপ্য তুই ঠগের । ১৫১।
ইষ্টবিহীন যা' সাধিস্ তুই
না পাওয়ারই তর্জ্জনা,
নিকেশ হ'য়ে পাড়ি দিতে
করবি জীবন বর্জ্জনা ? ১৫২।
অস্তিত্বটার আশাশূন্য
হ'য়ে উঠছ যেইখানে,
সুসন্ধিৎসু ধৃতিচর্য্যায়
স্থিতি বাড়াও সেইখানে । ১৫৩ ।
পুরুষোত্তমে রাগদীপ্ত
মূর্ত্ত ইষ্টে নিষ্ঠা রাখিস্,
পুরুষোত্তমের মূর্ত প্রতীক—
ইষ্টকে তুই সদাই জানিস্ । ১৫৪।