ধর্ম্ম নিয়ে অনুশ্রুতি ১ম (১-৪৫)

অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “ধর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২৮২ – ২৯৮ পর্যন্ত মোট ৭৩ টি বাণী রয়েছে। নিচে ০১ – ৪৫ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে
        ধৰ্ম্ম ব'লে জানিস্ তা'কে । ১ ।
ধর্ম্মে সবাই বাঁচে-বাড়ে 
       সম্প্রদায়টা ধৰ্ম্ম না রে । ২ ।
ধর্ম্মে জীবন দীপ্ত রয় 
        ধৰ্ম্ম জানিস্ একই হয় । ৩ ।
যত জানিস্ ধৰ্ম্ম ব'লে 
      মূলে সব এক—গজিয়ে   চলে । ৪ ।
দর্শনেরই বস্তাবাহী 
        বলদ নয়কো, সাধু যা'রা,
বরং পটু ন্যায়ের যোদ্ধা
        বিধির বাহক জানিস্ তা'রা । ৫ ।
এক ত্রাতা এক প্রাণ 
        মন্ত্র একে অধিষ্ঠান । ৬ ।
সম্বেগ-হারা কর্ম্মপ্রাণ 
        আধ্যাত্মিকতার বন্ধ্যা টান । ৭ ।
আধ্যাত্মিকতা অবশ যা'র 
        কর্ম্মপ্রেরণা মূঢ় তা'র ।  ৮ ।
ইষ্টরাগে বিধির পথে 
        উপচয়ে চলা,
একেই বলে ধৰ্ম্ম খাঁটি
        নইলে নিষ্ফলা । ৯ ।
কর্ম্ম-হারা ধর্ম্ম 
        অন্ধতমর বর্ম্ম । ১০ ।
কাজে করে ধর্ম্ম যেই
        তা'র বাড়া মানুষ নেই । ১১ ।
বাঁচা-বাড়ার মর্ম্ম যা'
        ঠিকই জেনো ধৰ্ম্ম তা' । ১২ ।
নিজের ধান্ধায় থাকল যা'রা
জ্যান্ত মরা রইল তা'রা,
          ইষ্টধান্ধায় ঘুরল যে
          বাজিমাৎ করল সে । ১৩ ।
যা' করলে বাঁচা-বাড়া 
       সমন্বয়ে বেড়েই যায়,
তা'কেই জানিস্ ধৰ্ম্ম ব'লে
       ধর্ম্ম থাকে আর কোথায় ? ১৪ ।
বাঁচা-বাড়া নিঝুম হ'ল 
        পড়শী উছল হ'ল না,
এতেও কি রে বলতে চাস্ তুই
         ধর্ম্মে করিস্ বন্দনা ? ১৫ ।
বাঁচা-বাড়া ক্ষুণ্ণ যা'তে
       এমনতর নিছক যা',
অধৰ্ম্ম তা' হবেই হবে
       পাপ ব'লেও তুই জানিস্ তা'। ১৬ ।
নিজের বাঁচা-বাড়ার সাথেই
       অন্যে বাঁচা-বাড়ায় ধরা,
ওইটাকেই তো ধৰ্ম্ম বলে
       ঐ চলনই ধৰ্ম্ম করা । ১৭ ।
নিত্য জীবনে ধৰ্ম্ম যেখানে
       নন্দনে পায় মূর্চ্ছনা,
অর্থ, কাম, মোক্ষ
হ'য়ে স্ফীত বক্ষ
       কত করে তা'রে অর্চ্চনা । ১৮ ।
যেমন চলায়-বলায়-খাওয়ায় 
         বাঁচা-বাড়ায় হয় ধৃতি,
ধৰ্ম্ম জানিস্ সেই চলনে
         সেই তো জানিস্ সার নীতি । ১৯ ।
ধৰ্ম্ম যদি নাই রে ফুটলো
       জীবন-মাঝে, নিত্য কর্ম্মে,
বাতিল ক'রে রাখলি তা'রে
       কী হবে তোর তেমন ধর্ম্মে ? ২০ ।
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠাপর 
      হ'য়ে ধর্ম্মে চলবে যত,
ধৰ্ম্ম আনবে অর্থ তোমার
     কাম-মোক্ষ তেমনি তত । ২১।
কৰ্ম্ম-মাঝে ধর্ম্মকে যে
         পালন করতে পারল না,
ধর্ম্মে-কর্ম্মে আনল বিভেদ
         পদে-পদেই লাঞ্ছনা । ২২।
ইষ্ট-নেশার বিভোর টানে
        স্বাস্থ্য-বিধি পালবি রে,
ভাল-কিছু এলেই মনে
        তক্ষুণি তা'ই করবি রে;
পরিস্থিতির বাঁচা-বাড়ায় 
        যত্ন নিয়ে সর্ব্বক্ষণ,
ইষ্টপানে উচ্চেতিয়ে 
       ধরবি তুলে তা'দের মন;
ইষ্টভৃতি জোগাড় ক’রে 
       নিত্য করিস্ নিবেদন,
শক্তি পাবি মুক্ত হ'বি
      একেই বলে ধর্ম্মায়ন । ২৩।
ইষ্টভৃতে দীক্ষা বাঁচে 
শরীর বাঁচে কর্ম্মে,
সদাচারে সমাজ বাঁচে
জীবন বাঁচে ধর্ম্মে। ২৪।
ধৰ্ম্ম যদি অভ্যুদয়
পূর্ব্বপুরুষ-জাগরণ,
তাই কি তবে ধৰ্ম্ম হয়
বেঁচেই যা'তে হয় মরণ ? ২৫।
ধৰ্ম্ম যদি বাঁচা-বাড়াই—
কেরদানি আর কসরতে,
উল্টো কথার পণ্ডামিতে
কেউ যদি কয় তা' ছাড়তে—
মতিচ্ছন্ন তা'রেই জানিস
আত্মম্ভরী বাঘডাঁশা,
বাঘের মত দেখতেও যদি
শূয়োর-মুখো সেই নাসা । ২৬।
এক মাটিতে বাঘও গজায়
শেয়াল-শূয়োরও জন্মে,
এরাও কি তাই সবাই সমান
সমানই জাতিতে ধর্ম্মে?
যদি এক প্রাণনে আনতে পারিস্
শেয়াল হরিণ বাঘ বারণে,
পৃথক হ'লেও দেখতে পাবি
ধৰ্ম্ম কোথায় কী ধরণে। ২৭।
লক্-লেলিহান ফোঁসফোঁসানী
সরীসৃপী দুইটি চোখ,
আঁধার-ঢাকা চামড়াখানা
ফাঁকির লোফায় বেজায় রোখ;
শয়তানী ঐ অন্ধকারী
কালসাধুর বেশভূষা,
তপ্পা মেরে হুজুগ দিয়ে
করছে সবায় বাদুড়-চোষা। ২৮।
মরণভেদী ধৰ্ম্ম হেঁকে
চল্ প্রবর্ত্তক সাধু ওরে,
দীন-দুনিয়ার আগল-পাগল
মর্ম্মদিগ্ধ ব্যথিতরে—
ধ'রে তুলে গর্জ্জরোলে
দীপ্ত কর্ রে ধর্ম্মচালে,
আগলহারা বুকের টানে
গা', ওরে গা', স্বস্তিতালে। ২৯।
পিতৃপুরুষ কৃষ্টি যদি 
থেকেই থাকে তোর বজায়,
যে-পথ ধ'রেই চলিস্ ধর্ম্মে
জাত কি তা'তে নিপাত যায় ? ৩০।
ধৰ্ম্ম দিয়ে জাতের তফাৎ 
এও কি কোথায় হয়?
জনন থেকেই জাত যে গড়ে
ধরন-ধারণ কতই ধরে
রেত-শরীরী অমর-চলায়
মূর্ত ধাপে বয়;
ধর্মে সবাই বাঁচে-বাড়ে
সম্প্রদায়টা ধৰ্ম্ম না রে,
জন্মজীবন দীপ্ত করে—
ধৰ্ম্ম একই হয় । ৩১।
মতবাদ হো'ক না যা’ই
হো'ক না গুরু যে জাত-জন,
সেইটি রে তুই ধৰ্ম্ম জানিস্
করতে পারে সব পূরণ । ৩২।
উপার্জ্জন যা'র হৃষ্টচিত্তে
প্রেষ্ঠে প্রতুল করল না,
নিছক জানিস্ ধর্ম্ম তাহার
অভ্যুদয়ে ধরল না। ৩৩।
দান ও দয়া ধর্ম্মপথে 
হ'লে সুশাসিত,
প্রাপ্তি তাহার সম্বর্দ্ধনে
চলেই সুনিশ্চিত । ৩৪।
সব যা'-কিছুর পূরণ পাবি
গড়ন সাথে অভ্যুত্থান,
সেইটি ধ'রে চোখ খুলে চল্
সেইতো ধৰ্ম্ম উছল প্রাণ। ৩৫।
ইষ্টস্বার্থ পথে চ'লে
নিজের বাঁচা-বাড়ার ধাঁজে
রাখলে অন্যের বাঁচা-বাড়ায়
ধৰ্ম্ম থাকে চেতন সাজে। ৩৬।
পাপে যখন আসে ঘৃণা 
আসে আক্রোশ, অপমান,
ইষ্টপ্রাণন ফেঁপে ওঠে
তবেই পাপের পরিত্রাণ। ৩৭।
অভ্যুদয়ী যেখানে যা'
সব বৈশিষ্ট্য পূরণ ক’রে,
ভাঙ্গন ঝোঁকের বেচাল চলন
ধৰ্ম্ম জানিস্ রুধেই ধরে । ৩৮।
ধৰ্ম্ম যখন নিবু-নিবু 
মনে ভরবে মল,
টলমল যুক্তজীবন
কৰ্ম্ম হয় বিফল। ৩৯।
ধর্ম্ম তোমার ইষ্টার্থেতে
পাচ্ছে কিনা বর্দ্ধনা,
চতুর্ব্বর্গই হ'চ্ছে তাহার
সুষ্ঠু শোভন লক্ষণা। ৪০।
বাঁচা-বাড়া খিন্ন যেথায়
আচরণ মলিন,
খুঁজে-পেতে দেখিস্ সেথায়
ধৰ্ম্ম স্বাস্থ্যহীন। ৪১।
পুরণ-বাণী গড়নপ্রবণ
সন্ত-সাধু-প্রেরিতদের,
যে জাত-জনের হো'ন না তিনি—
বিভেদ-বাণী ম্লেচ্ছদের। ৪২।
তথাগতদের মধ্যে বিভেদ
করে যে-জন সে আর্য্যক্লেদ। ৪৩।
কৃষ্ণ-রসুল বিভেদ ক’রে
বুদ্ধ-ঈশায় প্রভেদ গণিস্,
আরে ওরে ধৰ্ম্মকসাই
কুটিল দোজখ মনেই রাখিস্;
এক বাপেরই পাঁচটি ছেলে
দেখলি না তুই চোখটি মেলে,
কাউকে বাপের করলি স্বীকার
কাউকে বললি নয়,
কা'রে রে তুই দিলি ধিক্কার
গাইলি কাহার জয় ? ৪৪।
ধৰ্ম্মবিধি সবই সমান 
দেখতে শুধুই রকমফের,
লাখ সম্প্রদায় থাক না কি তা'য় ?
রইলে একই ইষ্ট জের। ৪৫।