অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “নীতি ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১ – ২০ পর্যন্ত মোট ১৪২ টি বাণী রয়েছে।
এর মধ্যে বাণী ১০১ – ১৪২ নিচে দেয়া হলো।
নিন্দা-কথায় কান দেয় যে
মোকাবিলায় মিলায় না,
অনাহূত পাতিত্য পায়
শুভ তা'রে চালায় না। ১০১।
জীবনধারার সহজ ঝোঁকেই
ধ'রে চলা নীতির পথ,
বৃত্তিমুখর প্ররোচনা
বাঁকিয়ে ধরায় নীতি অসৎ। ১০২।
অসৎ কৰ্ম্ম করবি না আর
প্রায়শ্চিত্তে শুদ্ধ হ'বি,
এই নীতিতে অপকর্মীর
পরিত্রাণে যত্ন ল'বি। ১০৩।
কারু বিষয় ভালমন্দ
বুঝলেও কিন্তু মনে বেশ,
বলতে বলিস্ হিসেব ক'রে
নইলে পাবি শুধুই দ্বেষ। ১০৪।
কাজ ও কথায় অমিল যেথায়
লোক-ভাঁড়ান গোপন চলন,
এমন চলায় নিছক জানিস্
লুকিয়ে আছে কুটিল পতন। ১০৫।
ভাল বললেও উল্টো বোঝে রূঢ় ভাষায় প্রতিদান, স্বর্গও যদি মর্ত্ত্যে আসে তৃপ্তিতে তা'র নাইকো স্থান। ১০৬।
কুহক-বিধুর কৃতজ্ঞতা,
ন্যায়পরতা, নীতির টান,
ইষ্টহারা অনর্থেতে
করেই জীবন অবসান। ১০৭।
মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন যে
বিশ্বাসঘাতক,
তা'র সঙ্গ সাহচর্য্য
অনন্ত নরক। ১০৮।
যেমন করায় যা' ফল মেলে তেমনি যদি না কর তা', প্রাপ্তিপথে ব্যাঘাত আসে দুঃখ-সহ ব্যর্থতা। ১০৯।
চিন্তাগুলি কর্ম্মে যতই বিচ্ছুরিয়ে মূর্ত্ত হয়, মগজটা তোর অমনি হ'লেই উত্তেজনা-মুক্ত রয়। ১১০।
উপদেশ আর বুদ্ধিদানই
আত্মপ্রসাদ যা'র আনে,
রিক্ত-কর্ম্মা এমন জনার
সার্থকতা নাই প্রাণে। ১১১।
যে সময়ে লাগবে যা'-যা'
গুছিয়ে আগেই ব্যবস্থিতি,
ক'রে সদা তৈরী থাকা
দক্ষকৃতীর স্বভাব-নীতি। ১১২।
অর্জ্জনাকে বাড়তি রেখে
ব্যয়টাকে কর নিয়ন্ত্রণ,
এমনতর চলিস্ যদি
চলনা পাবে স্থিত-চলন। ১১৩।
বুকের পাঁজর চূর্ণ ক'রেও
সুখী করার সব প্রয়াস,
এক লহমার চলা-বলা
ঘৃণ্য হ'লেই সব নিকাশ। ১১৪।
সজাগ সন্ধিৎসা নিয়ে
চলাই ভাল সর্ব্বদাই,
কোন্ অবস্থায় কীই বা ভাল
আগাম ভেবে করবি তা'ই। ১১৫।
শাস্তি দেওয়ায় শান্তি যদি
নাই আনতে পারে,
মাছি-বওয়া সংক্রমণায়
শাস্তি ছিটবে না রে? ১১৬।
তাচ্ছিল্যই যদি থাকে— অবুঝ হ'তে ভাবনা কিসের? ব'সে পাবি তুই তা'কে! ১১৭।
যে-ভাব নিয়েই থাকিস্ না—
সেই ভাবেরই দক্ষতাতে
চলবি রে তুই জানিস্ না? ১১৮।
স্মৃতির বুকে অযুত নীতির
হীরক-মাণিক জ্বলে
সেইটি বুঝে কুড়িয়ে পড়িস্
সুফল যা'তে ফলে। ১১৯।
অস্তিত্ব সহ আদর্শকে
সার্থক পূরণ করে,
এইটি বুঝে কহিস্ করিস্
ঠকবি নাকো পরে। ১২০।
পাওয়া-দেওয়ার মাঝখানে—
চলে জীবন পুষ্টি পেয়ে
স্বস্তি-পায়ে—সাবধানে। ১২১।
শোক যদি রে তুলতে পারে
করায় বলায় স্বর্গপানে,
তবেই তা'কে রাখবি ধ'রে—
নইলে ছিঁড়িস্ সটান টানে। ১২২।
'না' সুন্দরী বধূ যা'র
'হয় না' যা'র শালা,
অলক্ষ্মী তা'র ঘরে গিয়ে
সব করেছে কালা। ১২৩।
তামিলদারী বুদ্ধি যাহার
পুষ্টপ্রখর ক্ষিপ্র হয়,
হুকুমদারী তা'রই সাজে
শক্তি গাহে তা'রই জয়। ১২৪।
গুণগ্রাহিতা-মুখর হ'য়ে
স্নেহপূর্ণ শাসন সেবায়,
সুফল চলায় জীবন চলে
দাঁড়িয়ে দীপন প্রতিষ্ঠায়। ১২৫।
ভাবের আবেগ রুদ্ধ হ'য়ে
অভিব্যক্ত নাই হ'লে,
ভাবটা যে তোর নিথর হবে
উঠবে না স্বভাব ফলে। ১২৬।
লোক-ক্ষুধা মিটল রে যেই
আদর-সেবা করলি না,
মর্য্যাদা যে ডুবল রে তোর
সম্পদে পা ফেললি না। ১২৭।
উৎস যা' তোর রক্ষণা তা'র
সুখ-সুবিধার চেষ্টা
যেই হারালি, ভর-জীবনে
ঘুচবে না তোর তেষ্টা। ১২৮।
ইষ্টাদর্শে পায়ে দ'লে
যেই গোলামী ভজে—
জীবনপথে হরেক কাঁটা
লোভে বংশ মজে। ১২৯।
সুচিন্তাতেই বিভোর র'লি
করলি না তো কাজে—
নরক-পথটি শ্বেত পাথরে
বাঁধলি ব'সে বাজে! ১৩০।
কোন-কিছুর ভারটি নিয়ে
যদিই তা' শেষ করতে নারিস,
না-পারায় তুই বিবশ হ'য়ে
ভূতের মত ছুটবি জানিস্। ১৩১।
নীতি দাবী করে না কারু
স্বস্তি-নেশাই নীতিকে ডাকে,
নীতি ধ'রেই বাঁচা, বাড়া
ওঠেই বেড়ে বাধার ফাঁকে। ১৩২।
ইষ্টস্বার্থ অটুট রেখে
যে-কর্ম্মেই না জুটলি,
সেবার পরশ পেয়েই তেমনি
গোলামিত্বে টুটলি। ১৩৩।
জন্ম নেছ একা কিন্তু
পরিস্থিতির মধ্যে,
বাঁচা-বাড়া রয়েছে তাই
তাহাদেরই সাধ্যে। ১৩৪।
ভূত্যেরে তুই ভাবলি আপন
ভর্ত্তারে বাদ দিয়ে?
ভর্ত্তারই দান ভৃত্যে জোগায়
দেখ কৃতঘ্ন চেয়ে! ১৩৫।
যা' ব'লে কিছু নিবি কারু
করবি হ'য়ে অকপট,
না করলে তুই ঝুলিয়ে দিলি
লাভের পথে অন্ধপট। ১৩৬।
অসৎভরা অন্যায় যা' উৎখাতে তা'র পুণ্য তোর! প্রশ্রয় বা ঔদাসীন্যে জানিস্ কিন্তু নরক ঘোর। ১৩৭।
কসরতেতে সংযমী যেই
হ'তেই যাবি তুই,
কোন্ ফাঁকে তা'র বাঁধন ভেঙ্গে
ফেলবে তোরে নুই'। ১৩৮।
কৃতজ্ঞতা ভুল হ'য়ে যায়
স্বার্থে অন্যায় দাবী,
উপকারীতে নাই অনুকম্পা
মিত্রে সন্দেহ-ভাবী,
বৃত্তিস্বার্থ ফুরিয়ে গেলে
সম্বন্ধ মিটে যায়—
এমন দেখলে বুঝে চলিস্
ছোঁয়াচ না লাগে গায়। ১৩৯।
যে-চাহিদায় ঝুঁকবি রে তুই
সেইটিই মন ভাববে,
যা' ক'রে তা' পেতে পারিস্
তা' থেকে কিন্তু সরবে,
পেতেই যদি চাস্ রে পাগল
সেইটি তবে কর্,
যে-করাতে ঝোঁক দিলে তোর
পাওয়াই হবে বর। ১৪০।
খুঁজিয়া জীবনী যত পাঁতি-পাঁতি করি'
সুবিচারে ভাল-মন্দ করিয়া বিচার,
নিজের জীবনটাকে উপযুক্ত করি'
প্রস্তুত থাকিও ভ্রমে পাইতে নিস্তার। ১৪১।
ভাবা যা' তা' ফুটলে করায়
প্রকৃত তখন হয়,
প্রকৃত হ'লেই জানিস্ ওরে
পাওয়ার উপচয়;
প্রকৃত যদি নাই হ'লি তুই
পাওয়া হবে না তোর,
ভাবের জলে তৃষ্ণা কি যায়?
তৃষ্ণায় রইবি ভোর! ১৪২।