পুরুষ ও নারী নিয়ে অনুশ্রুতি ১ম খন্ড (৪১-৮৯)

অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “পুরুষ ও নারী” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৭০ – ৮৮ পর্যন্ত মোট ৮৯ টি বাণী রয়েছে। ৪১ – ৮৯ নং বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।

শ্বশুর, ভাসুর, দেবর, ননদ
এদের প্রতি যেমন,
কথাবার্ত্তা সেবা-কায়দা
প্রাণের প্রসারণ;
যেমনভাবে করবি আপন
অভ্যাস-ব্যবহার,
সন্তানেরও হৃদয়টি তোর
ফুটবে সে-প্রকার। ৪১।
স্বামী-সম্পদ দৈন্যে দলিত
না হয় এমনভাবে,
পিতৃকূলের নাশিতে আপদ
কভু না বিরতি পাবে। ৪২।
স্বার্থ-ব্যাহত ধৃষ্ট-কুটিল
হইয়া শ্বশুরকুল,
পিতৃকূলেরে অযথা পীড়িলে
নাশিও তাহার মূল । ৪৩।
শ্বশুরকুলের ঋদ্ধি যেথায়
আঘাতে পিতৃকুল,
প্রাণপণে তা'র নিরসনে ক'রো
সিদ্ধ শ্বশুরকুল। ৪৪।
পিতৃকুলের দুর্দ্দিনে নারী
শ্বশুর-গৌরব বাহিয়া,
স্মিত বদনে অভয়ে দাঁড়াও
পিতৃদৈন্য নাশিয়া। ৪৫।
পিতৃকুলের সঙ্গতি যদি
শ্বশুরকুলে না দলে,
সে-সঙ্গতি নারী প্রাণ-উপচারে
সাধিও যাহাতে ফলে। ৪৬।
মাতৃত্বটি সত্যি সজাগ
জানিস্ মেয়ে সেইখানে,
পরের ছেলের দরদ-ব্যথায়
মাতৃ-ঝলক যেই প্রাণে। ৪৭।
সত্তাপ্রতীক একই পুরুষ
যত নারীর রয়,
সম্বন্ধে সতীন হয় তাহারা
সমসত্তা বয়;
অবলম্ব আশ্রয় এক
একই স্বার্থ একই টান,
বেদন-ব্যথা একই তা'দের
সার্থকতার একই স্থান;
এ-বোধ যখন অবশ-কাবু
বৃত্তি-রঙ্গিল স্বার্থ-কুটিল,
বাতুল-বেভুল দুর্দ্দশাতে
নারীর জীবন হয়ই জটিল। ৪৮।
স্বামীর টানে মনটি আছে
সতীনে নাই সম্প্রীতি,
স্বামীর টানটি স্বার্থ-কুটিল
মিথ্যাচারী দুর্নীতি । ৪৯।
সমান ব্যথার দরদী সতীন
সমান সুখের মূর্চ্ছনা,
সমান ঝঙ্কার প্রাণ বেয়ে যায়
হ'লেও ভিন্ন সর্জ্জনা। ৫০।
সতীন-পেটের ছেলেমেয়ে—
নিছক নিজের ব'লেই জানিস,
পালন-পূরণ করবি তা'দের
অটুটভাবে এইটি মানিস্। ৫১।
জ্যেষ্ঠা সতীন যত্ন ক'রে
সুখ-সুবিধা ছোট্টদের
না দেখলে তা'য় অলক্ষ্মীতে
উবেই আভা সম্পদের। ৫২।
সতীন-ছেলে নয়কো নিজের
এমন কথা ভাববি না,
স্বামীর সত্তা উড়িয়ে দিতে
এমন কিন্তু বলবি না। ৫৩।
পিতৃকুলেতে অবজ্ঞা ঢালিয়া
শ্বশুরকুলের ভজনা,
শুভ আমন্ত্রণ-হারা হয় নারী
ব্যতীপাতে ক্ষয় সাধনা। ৫৪।
বাপের বাড়ী হামেহাল
থাকলে নারী পয়মাল । ৫৫।
বাপের বাড়ী পুষলে মেয়ে
পুষ্টবৃত্তি মাথা তোলে,
প্রবৃত্তি তা'র বশ থাকে না
প্রায়ই নষ্ট অনেক স্থলে । ৫৬।
বাপের বাড়ী থাকে ভাল
সেই গৌরবে তৃপ্তি পায়,
শ্বশুর-গর্ব্বে প্রাণ নাচে না
অপটু তাঁ'য় রাখতে বজায়;
নারী এমন কুলক্ষণের,
জন্ম-জীবন নয় পুরণের,
গড়ন-আবেগ নাই সে-নারীর
দৃপ্ত সম্পদ ক্ষয়েই ধায় । ৫৭।
মেয়ের চাকরী মহা পাপ
বিপর্য্যন্ত শ্বশুর-বাপ। ৫৮।
অসতীত্বের কুয়াসী স্তর
মেয়ের চাকরী করা,
ধী-টি জানিস আবছা হ'য়ে
লোভেই পড়ে ধরা। ৫৯।
যে-মেয়েরা চাকরী করে
জনন-জাতি তা'রাই হরে। ৬০।
বৃত্তিঝোঁকা হ'লেও নারী
বংশে উচ্চ হ'লে,
শ্রেষ্ঠ-পানে ধায়ই নজর
নীচকে ঠেলে চলে। ৬১।
বৃত্তি অবশে যে-নারীর
নষ্টে নম্য, মতি অস্থির। ৬২।
স্বামী ছাড়া পুরুষপ্রাণা
মারছে উঁকি নষ্টাপানা। ৬৩।
নষ্টা নারী তা'রেই কয়
স্বামী ছেড়ে যে অন্যে বয়। ৬৪।
স্বামীদ্বেষিণী নারী যা'রা
প্রসব করে কু,
আদর্শহীন হ'লে পুরুষ
বৃত্তিমুখী মেকু। ৬৫।
পরের বাবা, পরের দাদা
পরের মামা বন্ধু যত,
এদের বাধ্য-বাধকতায়
সম্বন্ধটি যাহার যত;
অনুরোধ আর উপরোধে
ব্যস্ত সারা নিশিদিন,
কামুক মেয়ে তা'কেই জানিস্
গুপ্ত কামে করছে ক্ষীণ। ৬৬।
বৃত্তিলোলুপ আবিল চাওয়ায়
স্বার্থ-শোভার প্রয়োজন,
কুটনিগিরি ক'রে যবে
অবশ করে মেয়ের মন;
সেই ফাঁদেতে নিজে প'ড়ে
অসতী হয় মেয়ে—
বৃত্তিতাড়ায় সকল হারায়
অধঃপাতে যেয়ে। ৬৭।
নারী যখন পুরুষ নিয়ে
বন্ধুবান্ধবতায়,
ভাববিলোলী সহানুভূতি
সেবায় এগিয়ে যায়;
নারীর ব্যথায় নাই কোন টান
ব্যস্ত পুরুষ নিয়ে,
অলক্ষিতে কাম-পেত্নী
ধরেছে তা'রে গিয়ে। ৬৮।
অসতীত্বের কুটিল ঝোঁকই
ছাড়ায় আপন কুলে,
মানগরবী দম্ভদাবী
কুলটা ক'রে তুলে। ৬৯।
স্বামীছাড়া পুরুষ-সঙ্গে 
গোপন-পথে ঘরে,
যেতে নাইকো জানিস্ মেয়ে
রাখিস্ মনে ক'রে। ৭০।
স্বামী ছেড়ে পুরুষান্তরে 
গেলে টান তা'য় ধরলে পরে,
কামবিলোলী অবশতায়
মেয়েরা সতীত্ব হারায়। ৭১।
ভ্রষ্টা নারী তা'রেই জানিস্ 
স্বামী ছেড়ে যেই,
বৃত্তিটানের কুহক নেশায়
পরের ধরে খেই;
পাতিব্রত্য ভানেই থাকে
ভজে অন্য পুরুষ,
গোপন উপপত্নী হয়
ভ্রষ্টা মেয়েমানুষ। ৭২।
পাতিব্রত্যে হ'লেও পতিত 
স্বামীর কুলেই ভ্রষ্টা র'য়ে,
বৃত্তিঘাতী অনুতাপে
পতিপ্রাণতায় আরো হ'য়ে,
প্রায়শ্চিত্তে যথাবিধি
হ'তে থাকলে চলায়মান,
লোকচক্ষুর অজানপথেই
হ'য়ে থাকে তার উত্থান;
কিন্তু যদি পুনঃ-পুনঃ
দিশাহারা বৃত্তিচাপে,
ভ্রষ্টপথেই চলতে থাকে
কৃতঘ্নী হয় রিপুর দাপে;
অশেষ পাপের নিঠুর আঘাত
জীবন-জনন করেই নিপাত,
এখনও নারী সাবধান হ'
পতির চর্য্যায় অটুট র'। ৭৩।
একমুখতায় অবহেলে 
বৃত্তিমুখী গেলি হ'য়ে,
তাই অসতী তরল মতি,
শ্রেষ্ঠ একে চল্ ব'য়ে। ৭৪।
অসতী হ'লেই সর্ব্বনাশ 
কুলটার তো আরও,
দ'গ্ধে-দ'ন্ধে সে তো মরেই
মরণ সমাজেরও। ৭৫।
অসতী যদি হয়ই কেউ
হয় না যেন কুলটা,
মরবে তা'তে দ'গ্ধে ওরে
বাড়বে তা'তে পাপ-ঘাটা। ৭৬।
পাগলী বেকুব মেয়ে আমার! 
যদি অসতী হ'য়েই থাকিস্,
অনুতাপের আগুন জ্বেলে
ইষ্টানুগ তপে ফেলে
বৃত্তি-আবিল মন-কুলটায়
আগেই নিকেশ করিস্ । ৭৭।
কুলটাও যদি হয়েই থাকিস্ 
বর্ণঘাতী হ'স্ না,
নীচের অনুগমন ক'রে
কুজননে সমাজ ভ'রে,
অপার নরক সামনে ক'রে
আরও নরকে ধাস্ না। ৭৮।
শয়তানেরই কুহকী চর 
মেয়ে তোদের সর্ব্বনাশে,
কাঁপিয়ে দিয়ে আর্য্যদেবে
বিক্ষোভিত করে ত্রাসে;
এখনও তোরা নিঝুম ঘুমে?
ছোট্ রে দিয়ে অট্টহাস,
লক্ষ্যভেদী পদাঘাতে
বর্শা ছাড়ি' কর্ নিকাশ। ৭৯।
ধর্ষণমুখী যদিই বা হ'স্
পরাক্রমী মেয়ে,
মারবি না হয় মরবি তখন
রাখিস্ কীর্ত্তি ছেয়ে! ৮০।
ইতর নীতির প্রগতি-পথ 
শম্ভুশূলে কর্ নিরোধ,
মেয়ে আমার, সতি আমার!
খড়্গশূলে রোধ বিরোধ । ৮১।
বহ্নিশিখায় খোপা বেঁধে 
পাপহননী ত্রিশূল ধর্,
সিংহ-ধাওয়ায় খড়গ নিয়ে
অসুরবুদ্ধি নিপাত কর্। ৮২।
শার্দ্দুলেরে বাহন ক'রে
সাপের ফণার মালা প'রে
কালবোশেখী ঝঞ্ঝাবেগে
ছোট্ রে নারী ছোট্ রে ছোট;
দত্যিদানার নীচবাহানা
আর্য্যাবর্তে দিয়ে হানা
ঘূর্ণীপাকের বেতাল গাঁথায়
হুলিয়ে-ভুলিয়ে দিচ্ছে চোট;
দশপ্রহরণ দশহাতে ধর
বক্ষ বিদরি' ধ্বংসি' ইতর,
সূর্য্যরাগী বজ্র তেজে
আর্য্যনারী! শত্রু টোট্। ৮৩।
বুকের আগুন দাউদহনে 
সাধ্বী মেয়ে জ্বালিয়ে তোল্,
বৃত্তিজ্ঞানীর ইতর নীতি
পুড়িয়ে হুলুর কররে রোল। ৮৪।
ওরে সতি! সাধ্বী মেয়ে!
আর্য্যনীতির ব্যাঘাত যা'।
সাপের মুখে চুমুক দিয়ে
উগরে সে-বিষ নাশ্ রে তা'। ৮৫।
সাধ্বী তোরা নারী তোরা 
ফাগুন রাগে আগুন জ্বাল্,
দুব্বিনীত ইতরামি যা'
জ্বালিয়ে ফ্যাল্ পুড়িয়ে ফ্যাল্। ৮৬।
শঙ্খ ফুঁকে অমর হাঁকে 
উচ্চ রোলে পুরুষ-বুক,
তাথৈ থিয়ায় নাচাও নারী
বর্ম্মে ঢেকে মৃত্যুমুখ। ৮৭।
আর্য্যকৃষ্টি-মাতাল সাড়ী
পর্ রে আর্য্য মেয়ে,
আর্য্যগর্ব্বে গরবিনী
চল্ দোদুলে ধেয়ে;
অমৃতেরই ভাণ্ড করে
পদ্মবনে অমর স্বরে,
ছেলেপিলেয় কৃষ্টি-হাওয়ায়
অমর মদির কর্ যেয়ে। ৮৮।
সতীর তেজে ঝল্সে দে মা 
      নিঠুর-কঠোর অন্ধকারে, 
মদন-ভস্ম বহ্নি-রাগে 
    বৃত্তিরিপু দে ছারখারে;
 প্রণবতালে ইষ্ট-মন্ত্রে 
    ঝঙ্কারি' তোল্ সকল তন্ত্রে,
  বিষাণ-হাঁকে রুদ্র দোলায়
     বজ্র হানি' মৃত্যুদ্বারে;
 আয় ছুটে আয়, আয় মা আমার!
     ধর দীপকে আর্য্যতান, 
ফুলিয়ে তোল্, দুলিয়ে তোল্ 
     তাথৈ তালে আর্য্যমান । ৮৯।