বর্ণাশ্রম নিয়ে অনুশ্রুতি ১ম খন্ড

অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “বর্ণাশ্রম ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৫৯ – ৬৯ পর্যন্ত মোট ৪৮ টি বাণী রয়েছে।
বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।

মানুষ কেমন অন্তরে—
আঁকা আছে সুষ্ঠুভাবে
বীজের জীবন-কন্দরে । ১।
এক যখন নয় কাহারও রূপ
সবাই আলাহিদা,
চাওয়া-চলাও তেমনিতর
যা'র যেমন চাহিদা । ২।
কারু সমান নয়কো কেউ
প্রয়োজনও তেমনি,
যা'র মেকদার তা'রই মত
পূরণ-প্রবণ যেমনি । ৩।
সংস্কৃতিই তো জন্ম পায়
তেমনি বিধান নিয়ে,
সংস্কারও হয় প্রস্ফুটিত
তেমনি কৰ্ম্ম দিয়ে;
প্রয়োজনেরও সমস্যা যা'
পূরণ করে সংস্কার,
কৰ্ম্মে দীপন ফুল্ল হ'য়ে
যা'র যেমনই জন্ম তা'র । ৪।
প্রয়োজন যেথায় রকমারি
পূরণও যখন অমনি,
স্বভাবও ছুটবে অযুতভাবে
শ্রেণীও হবে তেমনি। ৫।
শিরখানা তোর সাবাড় হ'ল
ছিন্ন হ'ল কৃষ্টি-খেই,
ভাঙ্গল শিষ্ট জীবন-দানা
বর্ণহারা হ'লি যেই!। ৬।
দেহ-বিধানে সংস্কৃতির
জৈবী দানা যেমন,
বীজও বহে সেই প্রকৃতি
পোয়াও হয় তেমন । ৭।
এক বৈশিষ্ট্যের রকমারি
বহুর সমাবেশ,
তাই নিয়ে তো বর্ণ হয়
জানিও বিশেষ। ৮।
সমাজ-দেহে বর্ণ-বিধান
যন্ত্ররূপে চলে,
এমনতর বিশেষ চলায়
সমাজ বাড়ে বলে । ৯।
গুণ-বৈশিষ্ট্য অধিগমনে
বিশেষ শ্রমের উৎকর্ষে,
ধাপে-ধাপে অধিবিদ্য
হ'য়ে নিখুঁত প্রজ্ঞা অর্শে;
চতুরাশ্রমের এই তো তুক
হাতে-মাথে বিদ্যাবান,
হ'য়ে ওঠে জন-সমাজ
তৃপ্তিতে গায় সামের গান। ১০।
বর্ণাশ্রম নয়কো যা'রা
আর্য্যকৃষ্টি মেনে চলে,
কিংবা আৰ্য্যীকৃত হ'য়ে
বর্ণাশ্রম-প্রার্থী হ'লে,
গুণব্যঞ্জনা-সক্রিয়তায়
বংশক্রমে ব্যক্তিগত,
অনুক্রমে যথাবর্ণে
করবি তা'রে সুসংহত । ১১।
বৈশিষ্ট্যবান সবাই কিন্তু
নিজ-বৈশিষ্ট্যে সবাই বড়,
পরিপূরক যা'রাই যতর
তা'রাই কিন্তু মান্যে দড়। ১২।
সংস্কৃতির পরিচর্য্যায়
নিয়ত চ'লে-চলে
প্রকৃতিতে দেহ-বিধানে
যে-সংস্থিতি ফলে,
সংস্কারে সেইটি থেকে
বংশ অনুক্রমে,
নানান ধাঁজে সেই গুণেরই
কৰ্ম্ম ফোটে শ্রমে;
বহু ধাঁচে সেই গুণেরই
রঙ্গিল সম্মিলন,
বর্ণের তুক এইটি জানিস্
মনীষীর কথন। ১৩।
গুণ-বৈশিষ্ট্যে দাঁড়িয়ে শ্রমে
উৎকর্ষেতে চলা,
বর্ণাশ্রমের এইতো নীতি
ঋষির মুখে বলা। ১৪।
বস্তুতঃ-যা' গোপন ক'রে
আসল ব'লে ভেজাল চালায়,
সত্যটাকে লুপ্ত ক'রে
মিথ্যা ভ'জে সকল খোয়ায়। ১৫।
দেহযন্ত্রের সুহৃৎ-চলন
পরস্পরের সহযোগে,
জীবন যেমন জ্যান্ত চলায়
উপচে তোলে উপভোগে,
সমাজদেহেও বর্ণ-বিধান
সুহৃৎ-চলায় পরস্পরে,
এক আদর্শ-সার্থকতায়
জনবৈশিষ্ট্যে পূরণ করে। ১৬।
যথাযথ পরিশ্রমে
জ্ঞানের যেথায় আহরণ,
সুধীজন করেন তা'রেই
আশ্রম ব'লে সম্বোধন । ১৭।
কৃষ্টি-পথে অর্জ্জি' অশেষ
জনন যবে সংস্কৃতি পায়,
ব্যক্তিত্বের ঐ উৎসৃজনে
পুষ্টিপোষণে বিশেষ ধায়;
ভরদেশেতে বিশেষ মানুষ
হাজার-করা একটি হ'লে,
কৃষ্টি-বোধে উন্নয়নে
অঢেল তালে দেশটি চলে;
বিশেষ পালে বিশেষভাবে
সকল দেশের জনপদে,
তাইতে বিশেষ স্বার্থ তা'দের
বাড়ায় বিশেষ সুসম্পদে;
বিশেষ গড়ন কৃষ্টি-ধরণ
কৃষ্টিপথেই বিশেষ হয়,
বিশেষ নিয়েই বিশেষ ভাগে
বর্ণ-থাকের হয় উদয়;
বিশেষহারা জাতটি জানিস্
বৃত্তি-চলায় সব খোয়ায়,
বিশেষেরে শ্রদ্ধা-দানে
ছোট্ট যা'রা বিশেষ পায়;
বিশেষ পানে নাইকো টান
দেখিস্ কোথায় অভ্যুত্থান?
বিশেষ জনে রক্ষা করা
জানিস্ জাতির ধৰ্ম্ম-মান;
প্রতিলোমে এই বিশেষই
সর্ব্বনাশে নিকেশ পায়,
প্রতিলোমে রাষ্ট্রেও তাই
জন্মে ইতর, নষ্ট তা'য়;
ওরে বেকুব অজান জাতটি,
তাইতো বলি বিশেষ ধর,
প্রতিলোমে রুদ্ধ ক'রে
বিশেষ জন্মে হ' তৎপর!। ১৮।
বর্ণাশ্রমে রক্ষা করি'
ব্রাহ্মী সমীক্ষা ধরি',
ইষ্টানুগ তৎপর চলন—
ঋষিবাক্যে আস্থাবান,
লোকহিতে আগুয়ান
হ'য়ে তুমি হও রে ব্রাহ্মণ!
এই আর্য্য-অনুশাসন
রেখো মনে অনুক্ষণ—
বর্ণ-নির্বিশেষে হয়
এই আচরণ। ১৯।
প্রত্যয় কর বজ্র-কঠোর
যাজন-সেবায় নাচিয়ে তোল,
বিদ্রোহে দল্ বিরোধ যতেক
উদ্দামে জাগা কৃষ্টি-রোল;
কৃষ্টি-চলনে সাম্যেতে চল্
পরস্পরের স্বার্থ হ'য়ে,
সাম্য-পায়ে বর্ণ, কৃষ্টি
বন্ধনে তোল্ ক্রমান্বয়ে;
পুরুষোত্তমে হ'য়ে সমাহার
এমনি চলনে আর্য্যছেলে,
রক্তে ফুটাও তরুণ অরুণ
স্বস্তি-নৃত্যে জীবন ঢেলে । ২০।
জীবন-চলন প্রয়োজনে
জনবৈশিষ্ট্য রক্ষা করা,
এইটি জানিস্ আর্য্যনীতি
এর ব্যাঘাতই জীবনহরা। ২১।
ইষ্টানুগ দক্ষ ক'রে
ব্যষ্টিপূরণ-স্বার্থ রাখা,
বিপ্র জানে ঐ পথেতেই
আত্মস্বার্থ দীপ্ত আঁকা। ২২।
বাঁচতে নরের যা'-যা' লাগে
তাই নিয়েই তো বর্ণ জাগে;
স্বভাব-পটু শ্রমোৎপাদন
তাই দিয়ে সব করে প্রাণন
বংশক্রমিক উৎকর্ষণ
গুণ ও কৰ্ম্ম নিয়ন্ত্রণ,
এই নিয়ে চার বর্ণ-বিভাগ
বিপ্র আদি চারটি থাক্-
এ না হ'লেই সর্ব্বনাশ,
ভাঙ্গে রাষ্ট্র, জাতি দাস । ২৩।
রকমভেদে জন-জাতিকে
সাজাবি এমন ক'রে—
উঁচুর ঝোঁকে অবাধ হবে
ধৰ্ম্ম রাখবে ধ'রে। ২৪।
বর্ণাশ্রমের সব ব্যাঘাত
জ্ঞান-খড়্গে কর্ নিপাত। ২৫।
বজ্র আনি' ধর্ খরশান
ম্লেচ্ছবুদ্ধি নিকেশ কর,
চণ্ডপাপে দণ্ড হানি'
পণ্ডকারী চূর্ণ কর্। ২৬।
যে-বর্ণ হ'তে ব্রাহ্মণ হয়
বংশক্রমিকতায়,
বিপ্র হ'য়েও সেই গুণেরই
পূরণ-প্রভা পায়। ২৭।
পৌরোহিত্যে বিপ্র শ্রেষ্ঠ 
ব্রহ্মবিৎও হয়,
বিপ্র-ব্রাহ্মণ সবার শ্রেষ্ঠ
তা'র কাছে কেউ নয়। ২৮।
দ্ব্যন্তর-বিপ্র পারশব
বিপ্রাচারী তা'রা সব,
বিপ্ররক্ষায় অস্ত্রধারী—
এ যথা নয়, পতন তা'রই । ২৯।
দ্ব্যন্তর-বিপ্র পারশবে
বিপ্র যদি না ধরে,
পারশব-সহ বিপ্র
ক্ষয়েই ওরে মরে। ৩০।
ইষ্টপ্রীতি প্রাণভরা যা'র
পূরণ-গড়ন ধাঁজ,
মানুষকেই যে স্বার্থ গণে
ভালবাসার রাজ;
তাঁ'রেই জানিস্ বিপ্র ব'লে
ব্রহ্মাবিদের ঘর,
নরের কুশল প্রাণে গাঁথা—
ঈশের অনুচর। ৩১।
রক্ত অরুণ বজ্রবেগে
ক্ষত্র আবার ওঠরে জেগে;
আর্য্যকৃষ্টির যা' ব্যাঘাত
বীর্য্যদাপে কর নিপাত!। ৩২।
ইষ্টানুগ ক্ষতত্রাণী
কুশল-তৎপর,
সেই মননে গবেষণার
লিপ্ত নিরন্তর;
দুর্ব্বিপাকে দণ্ডধারী
লোক-পালক আর্য্যাচারী,
আর্ত্তপূরক ক্ষত্রিয় ধাত—
তাই তো রাজার জাত! । ৩৩।
বেদবজ্র মন্ত্র গভীর—
জাগ্‌ রে বৈশ্য তুলি' তুঙ্গ শির,
পুণ্যদানপণ্যে জাতিদৈন্যহর
আর্য্যরাষ্ট্র অটুট কর্। ৩৪।
সমাজ-জীবন লওয়াজিমা
সংগ্রহেরই তরে,
ইষ্টতৎপরতায় যা'রা
জ্ঞান-গবেষণ ধরে;
প্রয়োজনের আপুরণে
বাঁচিয়ে রাখে মানুষ,
দানধর্ম্মী তা'রাই বৈশ্য
তা'রাই শ্রেষ্ঠী পুরুষ। ৩৫।
সর্ব্বকাজে দিয়ে কাঁধ
রক্ষে দ্বিজ নাহি বাধ,
আর্য্যপন্থী আর্য্যচর
সেবাপ্রাণ সুতৎপর;
সুবর্দ্ধনে ক'রে বহন
শুচীকৃত যা'রা-
ইষ্টানুগ তা'রাই শূদ্র
সমাজ-মেরু তা'রা। ৩৬।
সমীচীন সুশৃঙ্খলায়
নিষ্ঠাধারায় চললি না,
উদার বেকুব ঠাট্টা-ভয়ে
কৃষ্টিরই ধার ধারলি না? ৩৭।
বড়র যা'রা নিন্দা করে
ছোটই তা'রা অন্তরে,
নরকদেশে চলন তা'দের
কোন্ অজানা কন্দরে। ৩৮।
বৈশিষ্ট্যকে করলে হত-
দেশের-দশের জাতির ধূয়োয়,
জ্ঞানের আলোক যায়ই নিভে
জীবন পড়ে মরণ-কুয়োয়। ৩৯।
মূঢ়মত্ত মূর্খ যা'রা
আত্মহত্যা ডেকে আনে,
দেশে ওরাই না বাড়লে কি
আঘাতে বর্ণ-বিধানে? ৪০।
এক-আদর্শহীন সমাজ
পড়ে দরিয়ায় মাথায় বাজ,
টুকরো-টুকরো হ'য়ে মরে
সাধ্য কি কা'র রাখে ধ'রে! ৪১।
জাতে-বর্ণে আঘাত করে
বাতুল চালে সে-দেশ মরে। ৪২।
বিশেষ ধারার চাতুর্ব্বর্ণ্যে
ফুৎকারে বিষ উড়িয়ে দ্যায়,
বৃত্তিস্বার্থী-একসাইরা
লণ্ডভণ্ডে ক্ষ'য়েই যায়। ৪৩।
শূদ্রই তো জাতির চাকা,
বৈশ্য জোগায় দেশের টাকা,
ক্ষত্রিয়েরা রাজার জাত
সবার পূরণ বিপ্র ধাত । ৪৪।
বিপ্ৰই হ'স্ ক্ষত্রিয়ই হ'স্
হ'স্ না বৈশ্য অর্থবান,
বর্ণ-সঙ্গতি যেই হারাবি
হবেই কৃষ্টি অন্তর্দ্ধান । ৪৫।
পিতা-মাতা পত্নী-পুত্র
পড়শী-স্বজন নিয়ে চলে,
ইষ্টকৃষ্টির উছল ধারায়
গার্হস্থ্যাশ্রম তা'রেই বলে । ৪৬।
ঘর-সংসার পাড়া-পড়শী
ছাপিয়ে উঠে বিস্তারে,
থাকবি যখন ইষ্টপথে
বানপ্রস্থ কয় তা'রে। ৪৭।
হলায়ুধের হল হেঁকে নে
ওরে আর্য্যকৃষ্টি-ঘোষী,
বিপ্র তোরা স্ফীত বক্ষে
ধীরে দাঁড়া কোষা-কোষী;
বীর্য্যবক্ষী ক্ষত্র আবার
ধর্ রে দণ্ড, ধর্ রে অসি,
বৈশ্য দাঁড়া পাচন হাতে
গোধন-ধান্যে দৈন্য ধ্বসি';
আর্য্য তোরা রুদ্র বেগে
আবার দাঁড়া দৃপ্ত রিঝে
রিক্তি মরণ মুক্তি-তপে
বীর্য্য-দাপে শূদ্র-দ্বিজে ! ৪৮।