অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “বৃত্তিধর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৫৫ – ১৭৮ পর্যন্ত মোট ১৪৩ টি বাণী রয়েছে। ৫১ – ১০০ নং বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।
সংহতিতে ভাঙ্গন ধরায়
চাল-মোলায়েম যমের দূত,
এমন এদের সাহচর্য্যে
হর মানুষ হয় জ্যান্ত ভূত । ৫১।
নীতির নিয়ম অভ্যাসে আর
বৃত্তিটানের মহড়ায়
দ্বন্দ্বে বেঘোর হ'লেই মানুষ—
বুদ্ধিশুদ্ধি থৈ না পায় । ৫২।
নিজের ত্রুটির ধার না ধেরে
পরের ঘাড়ে দোষ চাপায়,
অহংমত্ত এমন বেকুব
ক্রমে-ক্রমেই নষ্ট পায়। ৫৩।
উপযুক্ত নয় যে যা'তে
দাবীদাওয়া সেইখানে,
অন্ধ-ইতর দৈন্য স্বভাব
চলে ব্যর্থ কুহক-পানে। ৫৪।
কাম-আবেশে বেহুঁশ চলন
ভাল-মন্দ নাই বিচার,
চোখের আড়াল না করলেও
ভালবাসা নাইকো তা'র। ৫৫।
স্বার্থবুদ্ধি অভিমানে
লাখ বছরেও জান ফোটে না,
হামবড়ায়ী অন্ধতমোয়
লাভ শুধু হয় বিড়ম্বনা। ৫৬।
প্রাণের টানে কাম যেখানে
শ্রেয়-উছলা,
বুদ্ধি-বিবেক শক্তি-সেবা
সেথায় উথলা। ৫৭।
শ্রদ্ধাহারা বুদ্ধি ইতর
গর্হিত উপভোগ,
ধুরন্ধরী ডাইনী-চলন
সেইতো কামুকরোগ। ৫৮।
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠা তোর
যায় তলিয়ে যেইখানে,
মরণ-হানায় আসছে বিপাক
ঐ পথেতেই সেই টানে। ৫৯।
সত্তাতে যেই আঘাত পড়ে
অহং ওঠে ফেঁপে,
বৃত্তি তখন আঁকড়ে ধরে
নানান্ ধাঁজে ঝেঁপে। ৬০।
পরশ্রীতে কাতর হ'য়ে
অযথা করে অত্যাচার,
দুর্ব্বিনীত আঘাত ছোটে
পিছু-পিছুই জানিস্ তা'র। ৬১।
অসৎ কাজে জেল্লা যা'দের
সৎ-এর বেলায় মিইয়ে যায়,
শিষ্টসেবী নয়কো জনম
ইতর ধাতু ব্যক্ত তা'য়। ৬২।
ভর-দুনিয়ায় প্রেরিতদের
বিভেদ-গাথায় নিন্দা করে,
সমর্থন তুই করিস্ নাকো
সে-জন হ'তে থাকিস স'রে। ৬৩।
অহংতালে দম্ভরাগী
বৃত্তি-ঝোঁকা যে,
ভাবে স্বাধীন, ঘোর পরাধীন;
অজ্ঞ মূঢ় সে। ৬৪।
যখন যেটার হয় প্রয়োজন
শরীর-মনের খোরাক দিতে,
না পেলেই তা' বিগড়ে যাওয়া—
সহনশীল নয় স্বভাবটিতে। ৬৫।
দুর্ব্বলতা অলস-চক্ষু
মিটিমিটি চায়,
বৃত্তিপথে দিয়ে হানা
বাগে পেলেই খায়। ৬৬।
আহব তোদের সেইখানে—
ইষ্টানুগ বাঁচাবাড়ায়
আঘাত-ব্যাঘাত যেইখানে। ৬৭।
বৃত্তিলোলুপ দ্রোহণ-স্বভাব
শ্রেষ্ঠে নতি নাইকো যাহার,
আইন-কানুনে তা'রাই জোগায়
খোরাক চৌর্য্য-কৃতঘ্নতার । ৬৮।
দূরদৃষ্টি যতই খতম
রকম ততই অসৎ-পথে,
রঙ্গিল লোভে দম্ভদাহে
ডাকে জীবন কূট-অসতে। ৬৯।
ভাল-মন্দ যাই না আসুক
বৃত্তিবশে যাসনে বেঁকে,
ইষ্ট বজায় দেখবি যা'তে
যতই পারিস্ নিবি ডেকে । ৭০।
সৎমুখোসী বন্ধু যা'রা
'করতাম'—ব'লে সম্বেদনে
বিপদ গেলে দাঁড়ায় এসে,
নেহাৎ এটা রাখিস্ মনে । ৭১।
বাঁচাবাড়ার হক্ চাহিদা
ঠকিয়ে যা'রা চলবে লোকের,
সুদে-আসলে একদিন তা'
শুধতে হবে জানিস্ তা'দের। ৭২।
প্রেরিত-তীর্থ আরাধনায়
দ্বন্দ্ব আনে ম্লেচ্ছ সে-ই,
বৃত্তিচতুর যুক্তি এদের
যুক্ত করে নরকেই। ৭৩।
মনের মাঝে চিন্তা কামের
ঢেউয়ের মত চলতে থাকে—
শিষ্ট যেমন, সংহত তা'
উন্নতি তা'য় তেমনি ডাকে । ৭৪।
অবিন্যস্ত অর্থ-বিহীন
এমন বৃত্তি-মহড়ায়,
যে-অঙ্গেরই চালন করে
সে-অঙ্গটি নিকাশ পায় । ৭৫।
বৃত্তিগুলো চলবে যখন
প্রেষ্ঠপূরণ-উচ্ছলায়,
দক্ষ-বিনয়দীপ্ত অহং
নাচবে মোহন চলৎপায়। ৭৬।
বৃত্তি-বেহুঁস্ পাগলা-ধাঁজে
বাঁচাবাড়ায় ক'রেই ক্ষয়
বেকুব-চালাক দম্ভীরা সব
সার্থকতায় ব্যর্থ হয়। ৭৭।
সব প্রবৃত্তি সমাহারে
যা'ই ক'বি আর করবি,
সুফল পথে বাস্তবতায়
কৃতীর মুকুট পরবি। ৭৮।
কামের তোড়ে প্রাণ যেখানে
অবশ চলায় ধায়,
জানিস্ সেথায় জীবন-গতি
বেকুব চলন পায়। ৭৯।
জাতিবর্ণ-নির্ব্বিশেষে
পূরণতেজা যা'রাই হোক,
তা'দের সেবায় বিরোধ ঘটায়—
রক্তশোষক তা'রাই জোঁক। ৮০।
পরচর্চ্চায় সহস্রমুখ
শুধরানে নাই আগ্রহ,
আপনার দোষ নাই নজরে—
ছোটেই পিছু নিগ্রহ। ৮১।
তল্ছা কামের থাকলে রোখ্
সঙ্গনেশার মত্ত ঝোঁক,
ভয়-সমীহ শ্রদ্ধা-মান
দূরত্বজ্ঞান হবেই ম্লান,
আদর-সোহাগ মাখামাখি
স্পর্শলিপ্সা ডাকাডাকি,
জাহান্নমের ইসারাটি
ডাকছে তোরে জানিস্ খাঁটি,
সামাল বেকুব সাবধান হ'
মন টেনে তুই দূরেই র'। ৮২।
বৃত্তিধান্দায় বাতুল চালাক
সন্দেহী ধুরন্ধর,
না ঠকলে সে পায় না মজা—
আত্মম্ভরীর ঘর। ৮৩।
চলা-বলার চুক দেখিয়ে
কইলে শোধন-কথা,
অপমানে আটাশ হ'স্ তুই
পাস্ কত রে ব্যথা;
ভাল কইলে শত্রু হয় সে
জব্দে লেগে যাস্,
ফাঁসের বাহার এত ক'রেও
লাগবে নাকো ফাঁস ? ৮৪।
বৃত্তিভোগের নেশা যত
ধরবে তোরে ক'ষে,
বাস্তব ভোগ উধাও হবে
ইষ্ট যাবে ধ্ব'সে। ৮৫।
আত্মস্বার্থী ভোগ-লালসায়
বিলোল ভালবাসা,
কাম্য নিয়ে স্বার্থসিদ্ধি
সেই তো সর্ব্বনাশা। ৮৬।
কামের রোখে পড়লে বাধা
ছিঁড়বে টান ছুটবে সাধা,
শিথিল ধাঁধা চ'টেই লাল
আপসোসেতে বীতরাগী চাল,
দোষ দিয়ে সে বেড়ায় স'রে
নিজে ভাল—জানায় পরে। ৮৭।
একনিষ্ঠ ইষ্ট-পূজায়
প্রত্যাখানী বিরাগপ্রাণ,
লোকসেবা আর তীর্থ-ধুয়োয়
বৃত্তিপূজোয় ভ্রাম্যমাণ,
ইতোভ্রষ্টস্ততোনষ্টে
নিছক ক'রে আত্মদান,
বিভ্রান্তি আর বিচ্ছিন্নতায়
হা-হুতাশে অবসান । ৮৮।
নিজত্ব যা'র আবেশমূঢ়
প্রবৃত্তিতে চলৎশীল,
শ্রেয়-সেবী হ'তেই ভাবে—
স্বাধীনতায় পড়ল খিল । ৮৯।
যে-ভাব হ'তে ত্রাণ চাহিস্ তুই
সে-ভাব ফেরা আগে,
তবেই রেহাই পারবি পেতে
ফুটবি শুভ রাগে। ৯০।
বাঁচাবাড়ার প্রয়াস-পথে
বৃত্তিগুলির উপভোগ,
সহজ মানুষ এমনি চলে
সার্থকতায় পেতে যোগ। ৯১।
বৃত্তি-পূরক প্রেষ্ঠ-নেশায়
অহং ঘোষে হামবড়াই,
স্বার্থ কুটিল দ্বন্দ্বে আগুন
বিনয়-কাতর সর্ব্বদাই । ৯২।
আদর্শেরে করলি হেলা
লাভ না দেখে তাঁ'র
হেলা-ফেলায় চললো জীবন
এখনও তা' ছাড়্। ৯৩।
ষড়রিপুর ছয় কুঠুরী
লাখ-চাহিদার বাস,
আপন নেশায় বাতুল সবাই
নাই কোন নিকাশ;
রিপু-রঙ্গিল নেশায় পাগল
চাহিদাগুলিকেই
বৃত্তি ব'লে জেনে রাখিস,—
যেমন বুঝিস্ যেই। ৯৪।
হামবড়ায়ী বৃত্তি-স্বার্থী
ঠগবাজী নীচমন,
স্বার্থধর্ম্মী ভীরু হয় সে
সন্দেহী অনুক্ষণ। ৯৫।
তাচ্ছিল্যেরই অভিমানে
হ'লি কবি বৈজ্ঞানিক,
হামবড়ায়ে সৈন্য হ'লি,
নয়তো হ'লি দেশপ্রেমিক,
ওই খিদমতে করলি কতই
মিটল কি রে ঝাল?
ইষ্টস্বার্থে করলে ও-সব
যেত রে জঞ্জাল! ৯৬।
ইষ্টহারা নিষ্ঠা যা'দের
ভ্রাতৃভাবের উপাসক,
শ্রেষ্ঠ যা' তা'য় অষ্টরম্ভা
হীনত্বই তার জনক। ৯৭।
করার ঝোঁকটি নিবু-নিবু
বাধায় নাজেহাল,
এমনি হ'লেই দেখিস্ খুঁজে
কোথায় কামের জাল। ৯৮।
ইষ্টপ্রীতি মলিন যখন
ইচ্ছায় অবসাদ,
নিশ্চয় জানিস্ কাম-ডাইনী
ধরেছেই তো কাঁধ। ৯৯।
বৃত্তিক্রম সার্থক হ'য়ে
প্রেষ্ঠেই গেঁথে উঠল না,
কোথায় তবে ব্যক্তিত্ব তোর
বৈশিষ্ট্য তো রইল না;
ব্যষ্টিত্বের এই অহংরাগে
ঠিকরে টুকরো কতই হ'লি,
বৃত্তিলাভের ধাঁধায় প'ড়ে
আত্মজ্ঞানটি হারিয়ে র'লি ! ১০০।