অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “শিক্ষা ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৩০ – ৩৬ পর্যন্ত মোট ৪০ টি বাণী রয়েছে।
বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।
মাটি ফুঁড়ে জন্ম যা'দের
মা'র পোষণে যেমনি গজায়,
চলতি পথে লক্ষ্য যেমন
প্রকৃতি তা'য় তেমনি সাজায়। ১।
যেমনভাবে যে-সময়ে
সক্রিয় হয় যে-সংস্কার,
অমনি শিশু সেই তালে রয়
চলন-বলন করতে তা'র;
ঐটি দেখে ধরবি তখন
ওরে শিক্ষক বুদ্ধিমান,
আলাপ-কথায় খেলার তালে,
অভ্যাসে কর্ দক্ষপ্রাণ;
ভালমন্দ সে-সংস্কারে
কেমন বা কী করতে হয়,
এমন তালিম ক'রে দিবি
স্বভাবে গাঁথা রয়ই রয়। ২।
সহজাত সংস্কারে ঝোঁক জুড়ে দিবি এমনি যত, জানার পাল্লা বাড়বে তেমনি অভ্যাসে দক্ষ হবে তত; সহজাত সংস্কারেরই তোষণ-পোষণ আর স্ফুরণে, তুচ্ছ ক'রে শিখাতে গেলে শিক্ষা যাবেই ঠিক মরণে, তাইতে আগে সহজাত সংস্কারে তুই পুষ্ট কর, তারপরেতে তেমনি জুড়িস্ বাড়িয়ে তুলতে আরোতর। ৩।
করার পথে চলতে গেলে
এতই ঠকা শেখাই দায়,
অতো ঠকে শিখতে গেলে
জীবনে কি পাড়ি পায়?
শিখেছে যে তা'র কাছে তাই
শেখায় শরণ নেওয়াই ভাল,
নইলে যে তোর বোকা সাহস
ভরজীবনই ঠকিয়ে গেল। ৪।
আচার্য্যে নাই অনুরতি
শিখতে যাচ্ছে কী?
শ্রদ্ধা, প্রশ্ন, সঙ্গ, সেবায়
শিক্ষা ছাড়া সব মেকী। ৫।
ইষ্টপ্রাণ জনসেবা
কৰ্ম্ম সেই মননে,
এই তো শিক্ষার মূল
রাখিও স্মরণে। ৬।
ব্রহ্মচর্য্যে সদগুরু-সঙ্গ
ভিক্ষা, তপস্যা, সেবা অঙ্গ। ৭।
শিক্ষা যেথায় শ্রমের সাথে
আদত শিক্ষা জানিস্ তা'তে। ৮।
অভ্যাস, ব্যবহার ভাল যত
শিক্ষাও তা'র জানিস্ তত। ৯।
মুখে জানে ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার মুখে ছাই। ১০।
শেখাবার মত দায়িত্ব-ভরা
ভরদুনিয়ায় কী কাজ আছে,
শিক্ষক-স্বভাব বিচ্ছুরণে
উপচে ওঠে ছাত্র মাঝে। ১১।
সবই জানিস্ শিক্ষারই দান
শিক্ষাতেই সব গজিয়ে ওঠে,
শিক্ষাতে তাই আনবে, যা'তে
উন্নততর ঝোঁকটি ফোটে;
উন্নতিপ্রাণ জ্ঞান-গবেষণ
কৰ্ম্মনিষ্ঠ তৎপরতা,
শিল্পমুখর শিক্ষা আনে
দক্ষনিপুণ ক্ষিপ্রতা। ১২।
বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ যা'তে
উন্নত-ঝোঁকে পরিপুষ্ট,
তা'কেই বলে আদত শিক্ষা
তা' বিনে ও হবেই দুষ্ট। ১৩।
বৈশিষ্ট্যে তোর নাকাল ক'রে
হ'লি কতই বিদ্যাবান,
শিখতে গিয়ে সাজলি খোজা
জনম ছাপটি করলি ম্লান। ১৪।
ঈর্ষ্যা, আক্রোশ, হীনত্বে তোর
করলি শিক্ষার উদ্বোধন,
প্রকৃতি তোর নীচুই রইল
বৃহৎ ইতর জীবন-মন। ১৫।
শিখলি যে তুই কত-শত
বোধ তো কিছুই ফুটল না!
স্মৃতির বলদ্ হ'লি শুধু
একমুঠো ভাত জুট্ল না?। ১৬।
দায়িত্বভরা যা'কিছু তা'র
সবার সেরা শিক্ষকতা,
ইষ্টনিষ্ঠ স্বভাব ছাড়া
অধ্যাপনা বর্ব্বরতা। ১৭।
ঝোঁক না বুঝে শিক্ষা দিলে
পদে-পদে কুফল মিলে। ১৮।
শিক্ষকের নাই ইষ্টে টান
কে জাগাবে ছাত্রপ্রাণ। ১৯।
থাকলে ছাত্রে ইষ্টে টান
তবেই জাগে করার প্রাণ। ২০।
লেখাপড়ায় দড় হ'লেই
শিক্ষা তা'রে কয় না,
অভ্যাস, ব্যাভার সহজ জ্ঞান
না হ'লে শিক্ষা হয় না। ২১।
ব্যবহার আর অভ্যাসের
সঙ্গতি যা'র যেমনই,
লেখাপড়া যাই না জানুক
শিক্ষা কিন্তু তেমনই। ২২।
শেখায় কওয়ায়, করায় না
গুরুত্ব তা'র দাঁড়ায় না। ২৩।
শিখতেই যদি চাস্—
শ্রদ্ধাভরে পরিচর্য্যায়
শোনায়-করায় ধাস্। ২৪।
বোঝাবার এক সোজা পথ
কী আছে তা' জানিস্?
সমঝা পথের ভিতর-দিয়ে
বুঝের পথে আনিস্। ২৫।
শেখাই যদি সাধ—
হাতে-কলমে না শিখলে তোর
সবই যে বরবাদ। ২৬।
জানতেই যদি চাস্—
আলস্যহীন অনুরাগে
জ্ঞানীর পানে ধাস্। ২৭।
বুঝতে রাখবি শিশুর মত
সন্ধানী তোর শ্রদ্ধানতি,
মুগ্ধ নেশায় বুঝবি তাহা
করায় নিবি দক্ষগতি। ২৮।
স্বতঃস্বেচ্ছ অভিধ্যানে
ছুটলে আবেগ কাজের পথে,
শিক্ষা তখন সহজ পায়ে
গজিয়ে ওঠে মনোরথে। ২৯।
আলোচনায় দেখে-শুনে
কিংবা করায় আসে বুঝ,
তর্ক-নিকষে প্রশ্ন ক'ষে
বাড়েই বড়াই আর অবুঝ। ৩০।
লেখাপড়া শিক্ষা দিতে
এমনি ধাঁজে শেখাস্ তা'য়,
শেখার লোভের অটুট টানে
শিক্ষা-চাপে টের না পায়। ৩১।
অভ্যাস-ব্যাভারে সৎ-এতে ঝােঁক
প্রবৃত্তি পারে না ফিরাতে রোখ,
সেবাপটু শিক্ষকে টান
সেই ছাত্র হয় মতিমান। ৩২।
পরিবারটি সহজ শেখায়
গেঁথেই তুলতে চাস্ যদি,
গবেষণাগার শিল্প-কুটীর
পাল্ কৃষি-ভুঁই নিরবধি। ৩৩।
বংশক্রমিক যে-জীবিকা
তা'রই পূরণ-টানে,
শিক্ষায় জ্ঞানের ব্যাপকতা
বৃহৎ বৃদ্ধি আনে। ৩৪।
উপাধি দেখেই শিক্ষার হিসাব
করতে গেলেই ঠকবি,
অভ্যাস-ব্যাভার-ঝোঁকেই বিদ্যা
নইলে বেবুঝ থাকবি। ৩৫।
আপ্রাণ ইষ্টনিষ্ঠ যিনি
সাশ্রয়ী আচারে অর্জিত জানা,
সমাহারী পর্য্যায়ী জ্ঞান
ভাবায়-করায় দীপ্তটানা,
সেবা-সম্পদ সহানুভূতি
আপন-করা বুকের টান,
শিক্ষক ব'লে তা'কেই জানিস্
তিনিই বাস্তব বিদ্যাবান। ৩৬।
শিক্ষকেতে শ্রদ্ধাশীল
সেবাপটু ঝোঁক,
দোষ দেখার কু-অভ্যাসে
নাইকো যা'র রোখ;
সুচিন্তায় করণীয় যা'
উদয় হ'লেই জ্ঞানে,
বুঝে-সুঝে জোগাড় ক'রে
মূর্ত্ত ক'রেই আনে;
সন্ধিৎসাটি বুঝ-পরায়ণ
দক্ষ কৰ্ম্ম-বুদ্ধি,
সেই ছাত্রই পায় অচিরে
সর্ব্ব কৰ্ম্মে শুদ্ধি। ৩৭।
শিক্ষাতে আন্ শ্রদ্ধা-সেবা
ব্যবহারে বৃদ্ধি-সুর,
অভ্যাসে হ' দক্ষনিপুণ
দৈন্য-পিশাচ কর্ রে দূর। ৩৮।
শ্রদ্ধাচর্য্যা প্রশ্ন-সেবায়
অনুনয়ী আলোচনা,
এই হ'চ্ছে বোঝার রীতি
এতেই কৰ্ম্ম-উদ্দীপনা। ৩৯।
মাতৃভক্তি অটুট যত
সেই ছেলেই হয় কৃতী তত। ৪০।