শিক্ষা নিয়ে অনুশ্রুতি ২য় (১-৫০)

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “শিক্ষা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১২৩ – ১৩৯ পর্যন্ত মোট ৯৫ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ১ – ৫০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

বিবেচনা নিয়ে অভ্যাস
তা'তেই জ্ঞানের অধ্যাস। ১। (অধ্যাস = অধিষ্ঠান)
চরিত্রহীন শিক্ষক 
ছাত্রের জীবন-ভক্ষক। ২।
পঠন, পাঠন, লেখা
তিন মিলনে শেখা। ৩।
বাস্তবতার পরিচয়ে
বোধ ফোটেনি যা'র—
অনুশীলন আর অভ্যাসেরই
দক্ষ-কুশল টানে,
বিদ্যা ধড়ে যতই থাক্ তা'
বাস্তবতার বা'র,
(সব) হাওয়াই আলো ঝাঁঝাল কথা
অবশ চক্ষু-কানে। ৪।
বলায়-করায়-চলায় যদি
শিক্ষাটা নাই ফুটলো,
বুঝলি না তুই, ওতেই যে তোর
শিক্ষাটি চোখ মুদলো । ৫।
শিক্ষা দিবি কী ?
আচারে না থাকলে শিক্ষা
কথার ঝিকমিকি । ৬।
লেখাপড়ায় নাইকো বিদ্যা
সহায়ক তা'র বটে,
বিদ্যাবত্তা মানেই জানা
কেমনে কী ঘটে। ৭।
যেমনতর বিদ্যাবত্তা
ঐতিহ্যকে বাতিল করে—
দাঁড়াহারা হয় যদি তা'
সে-পাণ্ডিত্য কেউ কি ধরে ? ৮।
বাচক বিদ্যা যতই শেখ
তা'তে কিছু হো'ক না হো'ক,
অনুশীলনী কৃতি ছাড়া
বাড়বে নাকো জ্ঞানের ঝোঁক। ৯।
চলায়-বলায় কুশল যে-জন
কুশল যাহার বোধ-বিবেকে,
এমনতর মানুষ পেলে
শিখিস্ তা'কে ধ'রে থেকে। ১০।
অশিক্ষিতে শিক্ষা দেওয়া
বরং অনেক সোজা হয়,
কুশিক্ষিতের শিক্ষক হওয়া
সেটাই কঠিন, সোজা নয়। ১১।
শিক্ষা বনাম জল্পনাতেই
কাটছে যে তোর নিশিদিন,
বাস্তবেতে নাইকো কিছু
হ'চ্ছে ক্রমেই বোধ যে ক্ষীণ। ১২।
বাস্তববিদ্ যতই তুমি
বিজ্ঞ তুমি ততই ঠিক,
জবর-কাটা চলন যতই
অজ্ঞ-দিশা তোমায় ধিক্। ১৩।
সর্ব্ব শাস্ত্রের সব সমাহার
বোধদীপনায় নেহাৎ বড়,
সুসন্দীপনী আবৃত্তিতে
জ্ঞান আসে তাই হ'য়ে দড়। ১৪।
কোথায় কীই বা কোনরূপে রয়
দীপ্ত হ'য়ে কোন্ গুণে?
চলন-বলন কেমনতর
শাস্ত্রে-সাহিত্য-দর্শনে !
প্রাজ্ঞ বোধের ভাগ্য যে এই
ভজন-বুদ্ধ পার্ব্বণে,
বুঝে-সুঝে মিলিয়ে নিস্ তুই
রাখিস্ তা' বোধ-দর্পণে । ১৫।
যেটুক জানিস্ যেটুক বুঝিস্ 
খাটাস্ সে-সব মঙ্গলে,
জানা-বোঝার তাল পাকাস্ নে
কল্পনারই জঙ্গলে। ১৬।
দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস্ 
আচার্য্যকে ক'রে সার,
আচরণী বোধ-চয়নে
জ্ঞানের সাগর হ' না পার। ১৭।
বই প'ড়ে তুই হ'লি যে বই
বইয়ের নিদান ধরলি না,
ধ'রে ক'রে না চললে কি
জাগবে বোধের নিশানা ? ১৮।
চর্য্যা নাইকো যা'র 
জ্ঞান কোথায় বা তা'র ?
চর্য্যাবিহীন জ্ঞান-পোষণার
মূল্য কোথায় আর ? ১৯।
শ্রদ্ধানিষ্ঠা আলোচনা,
কৃতি-অনুসরণ,
সার্থকতার বিভবে হয়
ধন্য সে-জীবন। ২০।
অনুশীলনী প্রভা যদি
বোধবিভায় না ফুটল তোর,
আয়ত্ত ক'রে জ্ঞান-দীপনায়
হ'লি নাকো জ্ঞানবিভোর। ২১।
হাবড়-জাবড় করলে কিন্তু
শিক্ষা হয় না কোন কালে,
সদ্‌-বিবেকে সরল ক'রে
অভ্যস্ত হ' সুতাল-তালে। ২২।
জ্ঞান পেতেই তোর করতে হবে
হাতে-কলমে ভেবে-বুঝে,
বাস্তবতায় সুসন্দীপ্ত
রাখতে হবে বুঝে-সুঝে। ২৩।
দেখবি যেমন নিখুঁতভাবে
করায় করবি নিখুঁত তেমন,
নিখুঁত করার এই অভ্যাসে
বৃদ্ধি পাবে জ্ঞানের অয়ন। ২৪।
জ্ঞান-অয়নে চলবি যত
দেখে ক'রে সমীচীন,
বৃদ্ধি পাবে জীবন তোমার
তেমনি পাওয়ায় হবে না হীন। ২৫।
বোধ-অভ্যাসে না এলে কিছু
দক্ষদীপ্ত সুসন্বেগে,
হয় না সিদ্ধি, পায় না বৃদ্ধি,
উচ্ছলিত হয় না রাগে। ২৬।
আবৃত্তি কর্ ভাবে-কর্ম্মে
ধারণায় তুই ধ'রে নে না,
প্রজ্বলিত প্রবাহে তা'য়
আয়ত্তেতে এনে নে না। ২৭।
বই পড়াই শুধু বিদ্যা নয়কো
বিদ্যা—করায়, হাতে-কলমে,
অনুশীলনী কৃতি-দীপনায়
স্মৃতিদীপ্ত সৎ-করমে। ২৮।
বিদ্যমানের বিদ্যাবত্তা
সম্বিৎ নিয়ে বেঁচে থাকে,
দেখা-শোনা-করা-বোঝায়
পুষ্ট ক'রে তোল তা'কে । ২৯।
বাস্তবতায় যা' জানিস্ তুই
বিদ্যা কিন্তু তাহারই নাম,
বাস্তবতার সঙ্গতিতে
নিষ্পাদনের পরম ধাম। ৩০।
শিখতে গেলে শিখবি যা' তুই
দেখে-শুনে দিশে কর্,
বিনিয়ে রেখে মাথায় সেটা
যেমন করবি তেমনি ধর্। ৩১।
সৃষ্টি করার নিবেশ নিয়ে
সত্তার দিকে রেখে ধী,
সত্তাপোষী করণ-কারণ
সেই দিকে সব নে সাধি । ৩২।
আবিষ্কারে মন রেখে তুই 
পরিষ্কারে বুঝে-সুঝে,
উপযোগী যেমনি দেখবি
করবি তেমনি নিটোল বুঝে। ৩৩।
ধারণমুখী ধী-টি রাখিস্ 
বীক্ষণাটি তীক্ষ্ণ যেমন,
দীক্ষণাকে তেমনি ক'রেই
লাগাস্ কাজে লাগে যেমন। ৩৪।
সুসংস্কার ও সত্তাকুশল
যা'তেই তোমায় ধ'রে রাখে,
সেই শিক্ষায় দক্ষ হ'য়ে
অমর কর জীবনটাকে। ৩৫।
জ্ঞান-আবেগে ভাববৃত্তি 
ক'রে রঙ্গিল, তৃষ্ণাতুর,
সব জানাকে আয়ত্তে আন্
হ' বিশেষে ভরপুর। ৩৬।
বহু বিশেষের সমন্বয়ে
এক বিশেষের উদ্ভাবন,
সব-কিছুরই চেনা-জানা
ঐ বিশেষের নিরূপণ। ৩৭।
কার্য্য-কারণ-পরিণতি
বোধ-বিকাশের সূত্র যেই,
কার্য্যকারণ-অবস্থিতি
যে-জন জানে জ্ঞানী সেই । ৩৮।
বিশ্লেষণ আর সংশ্লেষণের
জানাগুলির বিচারণায়,
বোঝ্—বিশেষের স্ফুরণ কেমন
রূপ আর গুণের সুসঞ্জনায়। ৩৯।
দক্ষ-কুশল প্রবর্ত্তনা
সৃষ্টি করাই শিক্ষার ধারা,
শিক্ষায় দক্ষ হ'বি যেমন
প্রতিফলনেও তেমন সাড়া। ৪০।
পড়াশুনা লাখ কর না
হাতে-কলমে করবে যা',
ধীইয়ে-ধীইয়ে বিনিয়ে-বিনিয়ে,—
তা'র সমান কিছুই না। ৪১।
চৰ্য্যা-চলন করণ-বলন
শোভন যাহার যেমনি,
বিদ্যাবত্তা বোধদীপনাও
তাহার কিন্তু তেমনি। ৪২।
অনুকম্পাই বোধের বাহক
বোধই আনে জানা,
এমন আবেগ নাই যেখানে
জ্ঞান সেখানে কানা। ৪৩।
কী হ'লে কী করতে হয়
কী হয় কেমন হ'লে,
কী বা ভাল কী বা মন্দ
বুঝিস্ কুতুহলে । ৪৪।
বুঝবি যেমন করবি তেমন
বোধকে খাঁটি ক'রে,
ঐ করাই তো সুস্থি আনে
স্বস্তি রাখে ধ'রে । ৪৫।
লেখাপড়া জানিস্ না-জানিস্ 
বাস্তব পরিচয় নিরেট কর,
পর্য্যায়ে তা'র সুদূরপ্রসারী
কী ফল দাঁড়ায় সেটাও ধর্। ৪৬।
লেখাপড়া করবি যখন 
মন-মাথাতে নিস্ এঁকে,
লিখে সেটা পরখ করিস্
যায় কি না-যায় তা' বেঁকে। ৪৭।
ভেবে যেটা বলবি মুখে
বাস্তবে তা' মিলল কিনা,
ধারণা কি শুদ্ধ হয় রে
এমনতর কর্ম্ম বিনা ? ৪৮।
ইষ্টনেশা ঠিক থাকে তো
শিক্ষা উছল হয়,
নইলে শিক্ষা অবশ মনে
গোলামিকেই বয়। ৪৯।
ভাষার কিন্তু কমই মানে
বোধ যদি তোর বোবা হয়,
সঙ্গতিশীল বোধভাতি যে
অস্তিত্বেরই দিগ্বলয়। ৫০।