অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “সংজ্ঞা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২০০ – ২১৯ পর্যন্ত মোট ১১১ টি বাণী রয়েছে। বাণীগুলোর মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।
চরিত্র বলে কা'রে
নিষ্ঠা-নেশা-প্রত্যয় যা'
চালায় জীবনটারে । ১।
রিপু মানেই সেই বৃত্তি যা'
বাঁচা-বাড়ায় হয় বাধা,
ইষ্টস্বার্থী যে-সব বৃত্তি
বৃত্তি হ'লেও কাটায় ধাঁধাঁ । ২।
চিত্তে যাহা গুপ্ত থাকে
চিন্তাতে তা' ব্যক্ত হয়,
গুপ্ত-সুপ্ত ভাব বিচরণ
পারম্পর্য্যে মনন কয় । ৩।
শরীর-মনটি যখন যা'তে
বিষাদে বেহাল হয়,
অশুচিতা তা'কেই বলে
অশৌচ তা'তেই রয়। ৪।
বৃত্তি-বাধা-নিরোধ যত
হয় যাঁহারই অবসান,
জীবন-চলন আপনি যবে
স্বতঃই ওরে বয় উজান,
অপ্রাকৃত তাঁ'কেই জানিস্
কসরৎ করা নাই সেখানে,
অপ্রাকৃত ব'লেই তখন
সুধীজনে তাঁ'য় বাখানে । ৫।
স্বভাব, সত্য, জীবন যা'তে
বোধে উছল করে,
মানুষ-প্রাণে সমবেদনায়
উতাল ক'রে ধরে,
সেই তুককেই কলাবিদ্যা
ব'লেই জানিস্ ওরে,
এ যা'তে নয়, বাতুল বকায়
লোককে বাতুল করে। ৬।
বৈশিষ্ট্যে যা' লুকিয়ে থেকে
চরিত্রকে চালিয়ে নেয়,
সেইটেই তো পুরুষকার
অর্জ্জনে যা' এগিয়ে দেয়। ৭।
তা'কেই বিধি কয়—
যে-রকমে যে-সময়ে
যা' করলে যা' হয়। ৮।
নিরুদ্ধ রয় মনে যা' তোর
তলিয়ে অপঘাতে,
আড়াল থেকে অজ্ঞাতে তোর
ডাইনী-দক্ষ হাতে
অবসাদ বা উত্তেজনায়
স্বভাব করে দাস,
ঐগুলোকেই জেনে রাখিস্
জীবের অষ্টপাশ। ৯।
সাধু বলি তা'রে—-
সুকর্ম্মে যে নাছোড়বান্দা
পিছোয় না যে ডরে। ১০।
অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে
ধর্ম্ম ব'লে জানিস্ তা'কে। ১১।
ধর্ম্ম বলে তা'য়—-
নিজের বাঁচা বাড়ায় যা'তে
অন্যে যোগান পায়। ১২।
যে আচরণ, বাক্য, কৰ্ম্ম
বাঁচাবাড়ার উৎস হয়,
তা'কেই জানিস ধৰ্ম্ম ব'লে
নইলে ধৰ্ম্ম কিছুই নয়। ১৩।
বাঁচা বাড়ার অপলাপ
যা'তে করে তা'ই পাপ। ১৪।
বাঁচার যা'তে অপচয়
তা'কেই লোকে পাপ কয়। ১৫।
বাঁচা বাড়ার অহিত আনে
মিথ্যা তা'রেই কয়,
অহিত-ভরা যথার্থবাদ
সেও সত্য নয়। ১৬।
সত্য তা'রেই কয়—-
যা' হ'তে তোর বাঁচা বাড়ার
হ'য়েই থাকে জয়। ১৭।
মিথ্যা কা'রে কয়?
বাঁচা বাড়ার উল্টো চলায়
আনেই যা'তে ক্ষয়। ১৮।
সৎকর্ম্ম তা'কেই বলে
ব্যষ্টিসহ সমষ্টিকে,
বাঁচা বাড়ায় পুষ্ট ক'রে
ন্যায়তঃ নেয় বৃদ্ধি-দিকে। ১৯।
বাঁচা বাড়ার অভ্যুত্থানে
দীপ্ত চলায় চলে,
এই চলনে চলাকেই
ব্রহ্মচর্য্য বলে। ২০।
বৃদ্ধি-সেবায় আত্মনিয়োগ
হৃদয় পূর্য্যমাণ,
তা'রেই তো কয় ব্রহ্মচর্য্য
যা'তে বীর্য্যবান। ২১।
সৃষ্টি-নিয়ম সেজেগুজে
নানান্ পরিণতি
নিয়ে চলে কতই ধাঁজে
ধরে কতই গতি,
বোধে এলে সামঞ্জস্যে
পরিণামটি আনি'
বলতে পারে অনেক কথা—
তাই ভবিষ্যবাণী। ২২।
ভরদুনিয়ার যতেক জানা
একে সার্থক হয়,
পর্যায়ে ওঠে গেঁথে যেথা তা'
বিশ্ববিদ্যালয়। ২৩।
সম্বেগ যাহাতে কর্ম্মেতে ফুটে
দিয়ে আনে প্রাণে বর্দ্ধনা,
করে সিদ্ধিদান সেই অনুষ্ঠান
লোকে তা'কে বলে দক্ষিণা । ২৪।
গোত্র মানে বংশ বুঝিস্
একেই রেতের মূর্ত্তধার,
পারম্পর্য্যে বহুরূপে
অমর-চলায় চলন তা'র। ২৫।
শিল্পী কা'রে কয় ?
এমন ছাঁদেই মূর্ত্ত করে—-
চিৎএ সম্বেদয় । ২৬।
গুণপনায় মুগ্ধ হ'য়ে
বাখান করায় কয় স্তুতি,
বাগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশাতে
খোসামোদই হয় দূতী। ২৭।
সত্তা যখন গুণ ছাপিয়ে
গুণ বিনিয়ে করে কাজ,
গুণাতীতের সেই প্রকৃতি
সেইতো জানিস্ গুণীর রাজ। ২৮।
শ্রদ্ধা-অবশ আতুর-শোকে
বৃদ্ধি-তরে করলে দান,
তৃপ্ত ক'রে প্রীত হওয়া
তা'কেই ও তুই শ্রাদ্ধ জান্। ২৯।
স্মৃতির লেখা বোধগুলি তোর
চলার পথে মিলিয়ে নিস্,
তা'কেই বলে বিচার করা
বিচার-বুদ্ধি তাই জানিস।
বোধগুলি সব ক্রমান্বয়ে
করতে কাউকে সমর্থন,
জুড়ে-তেড়ে গুছিয়ে নিয়ে
করেই যখন সমীক্ষণ—
তা'কেই জানিস্ যুক্তি ব'লে
ন্যায়ের পথে চালায় সে,
ন্যায়-ভাবটি যাহার যেমন
তেমনি যুক্তি পায় সে। ৩০।
ভোগের তরেই ত্যাগ প্রয়োজন
অভীষ্ট-লাভ ভোগ,
ত্যাগের তরে ত্যাগ করে যে
ত্যাগ তাহারই রোগ। ৩১।
নিয়ম যখন শৃঙ্খলতায়
বাঁচায়-বাড়ায় উচ্ছলা,
সেইতো ন্যায়—আইনই তাই,
নয়তো শয়তান সচ্ছলা। ৩২।
কিসের লাগি' কী-ই বা পেতে
কেনই কী কাজ করছে কে,
এই না জেনে নিন্দা করে
ধৃষ্ট-স্বভাব পিশুন সে। ৩৩।
অস্তিত্বে তোর উপচে থেকে
যে-ভাব চলে রাত্রিদিন,
চিন্তা-চলন কৰ্ম্মেতে যা'
ঠিকরে করে সব রঙ্গীন,
অধ্যাত্মভাব তা'কেই বলে
অভিজ্ঞতা তদনুরূপ,
ওরই জোরে মানুষ চলে—
কেউ বা চামার, কেউ বা ভূপ। ৩৪।
কর্ম ক'রে যাহা পাও
ইষ্টকাজে যদি দাও,
দিয়ে হ'লে ধন্যভাগ্—
তবেই কৰ্ম্মফলত্যাগ। ৩৫।
আবেগভরা উদ্যত যা'
উর্দ্ধ নেশায় চলে,
দক্ষ-কুশল সাহসিকতা
বীর্য্য তা'কেই বলে। ৩৬।
সন্ধিৎসাটি চালিয়ে ধী-এর
তুকটি ক'রে উপার্জন,
থাকবি-চলবি যেখানেই তুই
বুঝতে পারবি তাই তখন,
সর্ব্বজ্ঞতার ধাঁজটাই এই
বীজাকারে অন্তরে রয়
আবহাওয়াতে গজিয়ে ওঠে
বীজটি কভুই ব্যর্থ নয়। ৩৭।
প্রেষ্ঠ-বাঞ্ছা ইচ্ছা হ'য়ে
দক্ষ-পূরণ উচ্ছলে
চালায় যাহার সব প্রবৃত্তি—-
সেই তো সাধু সচ্ছলে। ৩৮।
আবেগভরা প্রেরণাটি
ফেঁপে তুললে মন,
প্রথম যখন হবে তাহার
কর্ম্মে বিনয়ন,
প্রেষ্ঠ-লাগি' নিবেদন তোর
হ'লেই জানিস্ তা'য়,
সেই কাজেরই সেই দক্ষিণা
দক্ষতা তা'য় পায়। ৩৯।
সব প্রবৃত্তি রত থাকে
ইষ্টকার্য্য ল'য়ে,
সেই সন্ন্যাসী, সেই তো যোগী—-
কাল নত যা'র ভয়ে। ৪০।
প্রেমী কা'রে কয় শুনবি ওরে?
শোনে প্রেমী সেই—-
নিজের স্বার্থ উজাড় ক'রে
প্রেষ্ঠস্বার্থী যেই। ৪১।
প্রত্যয়েরই প্রেরণাটি
অভ্যাসেতে জ্ব'লে,
ব্যবহারে উঠলে ফুটে
চরিত্র তা'য় বলে। ৪২।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা
কয় কা'রে তা' বুঝিস্,
বিদ্ধ অসৎ সদ্-বেধনে
তুলে যখন ফেলিস্। ৪৩।
সার্থকতার নিয়ন্ত্রণে
চলছে অবিরল,
সব-কিছুতে লক্ষ্য ঋজু
সেই তো সরল। ৪৪।
যা'-কিছু সব ভরদুনিয়ার
অর্থমালা নিয়ে,
সেই ভগবান্—সার্থকতায়
দাঁড়াস্ যাঁ'কে দিয়ে। ৪৫।
লোক-বিশেষের বিশেষ পূরণ
সেই স্বাভাবিক সাম্য ধরণ। ৪৬।
তাহাই জানিস্ ন্যায়—
হিংসা-পাতন বিফল ক'রে
সত্যে নিয়েই যায়। ৪৭।
যা' পেয়ে যা'র সঙ্গ করে
চর্চা করে যা'র,
হিত-প্রেরণায় উন্নত হয়
সাহিত্য সেই সার। ৪৮।
শ্রেয়ের নেশায় নিজে চলে,
অনুরক্তে অনুক্ষণ
চালিয়ে সুফল সুবোধ দানে,—
সুধী তাঁ'রেই শ্রেষ্ঠ ক'ন। ৪৯।
মিত্র জানিস্ সেই—
না ডাকলেও তুই, শত্রুরে তোর
দলন করে যেই। ৫০।
আত্মীয় তা'রে কয়—
স্বার্থতে তোর অটুট দাঁড়ায়
বিপদ্কালে বয় । ৫১।
শত্রু তা'রেই কয়—
উন্নতিরে হিংসা ক'রে
আনেই পতন-ক্ষয়। ৫২।
ইষ্টস্বার্থে চিন্তাই ধ্যান
প্রজ্ঞা-প্রতীতি জন্মে,
এই পথেতেই সিদ্ধি আনে
অনুভুতি হয় কর্ম্মে। ৫৩।
দু'কুল-দোলা মনটি থেকে
প্রশ্ন-শূন্য হয় যখন,
বিশ্বাস বলে তা'কেই জানিস্
অচ্যুত মন হয় তখন। ৫৪।
পূর্ব্বাজ্জিত কর্মফল
চরিত্রে যা' ব্যক্ত,
তা'কেই জেনো দৈব বলে
যা'তে তুমি রক্ত। ৫৫।
জানার পাল্লা ছাপিয়ে ব'য়ে
কৃতকৰ্ম্মফল
যে রূপ ধ'রে দাঁড়িয়ে থাকে—
অদৃষ্ট তা'য় বল্। ৫৬।
বাঁচা-বাড়ার নিখুঁত জ্ঞান যা'
কুড়িয়ে নিয়ে ঋষি যাঁরা,
সাজিয়ে তাঁ'রা পথ করেছেন
সহজ যা'তে চলার ধারা;
যা'র পালনে শাসন-সেবায়
উন্নতিতে ধায় জনপদ,
তা'কেই জানিস্ শাস্ত্র ব'লে
ভরদুনিয়ায় ঐ সম্পদ। ৫৭।
দয়া আনে রক্ষা জীবের
রক্ষাকেই দয়া কয়,
জীবন দিয়ে পালবি দয়া
ভগবান্ দয়াময়। ৫৮।
বৃত্তি-আঠায় লেপ্টে থাকে
ছোট্ট হৃদয়খান,
জীবকোটি তুই তা'রেই জানিস
অজানাতেই স্থান। ৫৯।
প্রেষ্ঠনেশার অটুট টানে
বৃত্তি-সমাহার,
ঈশ্বরকোটি তাঁ'কেই জানিস্
শ্রেষ্ঠ জনম তাঁ'র। ৬০।
যুগপুরুষ জন্মসিদ্ধ
মন্ত্রপ্রতীক তিনি,
সিদ্ধগুরু তাঁ'কেই বলে
সাধনসিদ্ধ যিনি। ৬১।
অভীষ্টটি পাওয়ার পথে
কথায়-কাজে বিনিয়ে চলা,
তা'রেই জানিস্ প্রার্থনা কয়
প্রার্থনা নাম তাইতে বলা। ৬২।
করতে গিয়ে সপর্য্যায়ে
যেমনই যা' করতে হয়,
তেমনি করা দাঁড়িয়ে যা'তে
প্রাজ্ঞ তা'কেই সবাই কয়। ৬৩।
পৃথক যা' তা' তেমনি থেকে
একীভূত যে বোধটি পেকে,
বৃহৎ-জ্ঞানে হয় আসীন—
তখনই তো ব্রহ্মে লীন। ৬৪।
পৃথক থেকেও একীভূত
তা'কেই বলে ব্রহ্মীভূত। ৬৫।
প্রেষ্ঠ-চিন্তা, তাঁ'র চাহিদা
প্রাণভ'রে যা'র থাকে—
পূরণ-প্রয়াস আবেগ নিয়ে
ধ্যানীই বলে তা'কে । ৬৬।
বৃত্তিগুলি জেনেশুনে
সমাবেশ আর সমাধানে,
ইষ্টস্বার্থে সার্থকতায়
গুছিয়ে আনেন ইষ্টটানে;
দর্শন যাঁ'র এমনতর
অমনতর নিয়ন্ত্রণ
ঋষি ব'লে তাঁকেই জানিস্
মন্ত্রদ্রষ্টা তিনিই হ'ন। ৬৭।
জন্মগত সংস্কার সব
লুকিয়ে থাকে অন্তরে,
চরিত্রেতে ফুটলে তা'রা
দুনিয়া তেমন নেয় ধ'রে;
তা'কেই জানিস্ দৈব ব'লে
সুপ্ত উপ্ত ক্ষমতা রে,
ব্যক্ত হ'লে পুরুষকার
রাখিস্ পালিস্ ঠিক তা'রে। ৬৮।
জীবন যা'তে সুস্থ-স্বস্থ
সব অবস্থায় সহজ থাকে,
সেই ক্রিয়াতেই প্রাণের আয়াম
প্রাণায়াম তাই বলে তা'কে। ৬৯।
বৃত্তিজাত লোভ যখনই
অসৎরোখে বেচাল ধায়,
ফিরিয়ে তা'রে সৎ-এ লাগাস্—
প্রত্যাহারই বলে তা'য়। ৭০।
স্বতঃপূর্ণ সংক্ষেপী যা'
ফুটিয়ে তোলে মন্ত্রণা,
গজিয়ে তুলে উৎসে ধাওয়ায়
তাহাই কি বীজমন্ত্র না ? ৭১।
মনন-জ্ঞানে সম্ভাবনে
অর্চ্চনায় তা' ধরি,'
অজানা যা' জানায় এনে
মানে নিশ্চয় করি',
বস্তুনিহিত তত্ত্ব-মন্ত্র
দর্শনে ফুটে ওঠেই যা'র,
মন্ত্রদ্রষ্টা তিনিই ঋষি
অন্ধতমের তিনিই পার। ৭২।
যে-অবস্থায় পড়ুক নাকো
স্বল্পায়াসে হয়ই জ্ঞান,
জন্মসিদ্ধির লক্ষণই এই
স্বভাবগত সহজ ধ্যান। ৭৩।
যোগ-তপস্যা সাধনে সিদ্ধ
কৃপাসিদ্ধও হয়,
সিদ্ধ হ'লে মন্ত্রশক্তি
তবেই উপজয়। ৭৪।
অনুরাগের অটুট আলোয়
চলেই ইষ্টযাগে,
সেইতো হ'ল আসল যোগী
যোগীই বলে তা'কে। ৭৫।
বীর্য্য-শ্রী-যশ-জ্ঞান-বৈরাগ্য
ঐশ্বর্য্য সব দীপ্ত যেথায়,
যে-প্রতীক ঐ সকলই
বিকিরিত হয় প্রতিভায়,
যা'-কিছুরই পূরণপুরুষ
সেইতো জানিস্ ভগবান,
পুণ্যশ্লোকী মূর্ত্তিটি সেই
সব যা'-কিছুর শ্রেষ্ঠ স্থান। ৭৬।
সুখই আসুক, দুঃখ আসুক,
আপ্রাণতা অটুট বয়,
বিকারহারা সেই মানুষে
লোকে নির্বিকার কয়। ৭৭।
বাক্য-মনের ওপার যিনি
ভাববোধনা বাক্যে যাঁ'র,
নিকাশ-প্রকাশ যায় না করা
প্রাণের সাড়াই বোধ যাঁহার,
"অবাঙ্মনসো গোচরম"
ব'লে বাখানে ঋষি যাঁ'রা,
প্রাণেই দীপ্ত তাঁ'র প্রতিভা
আসীন প্রাণে তাঁ'রই ধারা। ৭৮।
কোনও একের অটুট নেশায়
বুকের টানটি উঠলে ফুটে,
স্বার্থ ক'রে তা'কেই যখন
আপন স্বার্থ দেয় রে লুটে,
ঐ যে প্রাণের আবেগটুকু
বুকভরা তোর হৃদয়কাড়া,
যোগ ব'লে তুই তা'রেই জানিস্
ওর চেয়ে নেই শক্তি বাড়া। ৭৯।
আত্মাতে যে সৃষ্টি-ধারা
সূক্ষ্ম স্থূলে বয়,
আধ্যাত্মিক জগৎ তা'কেই
সুধীজনা কয়। ৮০।
কলুষহারা অস্তিবোধ
বৃত্তি-রংএ রঙ্গীল নয়,
সত্ত্বগুণী তা'কেই বলে
সুধীজনা এইটি কয়। ৮১।
পদার্থটি যা'কে ধ'রে
ঘনীভূত রয় মূর্তিমান,
ঘনরূপী জড় তা'রে কয়
চেতনসত্তা তাহার প্রাণ। ৮২।
ইষ্টস্বার্থে সেবার সাথে
কৰ্ম্ম-পথটি ধ'রে,
ভাবা-করার সঙ্গতিতে
জ্ঞান আহরণ করে,
ভক্তি-জ্ঞানের সমাহারে
সার্থকতায় চলে,
তাইতো হ'ল রাজবিদ্যা
রাজযোগই তা'য় বলে। ৮৩।
জৈবীখোলস প'রে যখন
বৃত্তি নিয়ে আত্মা র'ন,
বাঁধন-ঘেরা সেই সত্তাই
জীবাত্মাতে ব্যক্ত হন। ৮৪।
বৃত্তিবাতুল ঘোরাল চিন্তা
হ'য়ে মননপ্রাণ
নিয়ন্ত্রণ সামঞ্জস্যে করে
পর্যায়ে সমাধান,
আনলে তাহা একীকরণে
কেন্দ্র-সার্থকতায়,
তা'রেই জানিস্ আসলভাবে
সমাধি বলে তা'য়। ৮৫।
একটি চেতন আপনধাঁজে
নানান রূপে চলেছে ব'য়ে,
নিরন্তর সে অথাম চলা
রকমে রকম যাচ্ছে হ'য়ে,
নিজেরই নানান হওয়ার তালে
একে অন্যের সংমিশ্রণে,
চলছে হ'য়ে যাচ্ছে ব'য়ে
সুধী আত্মা তা'রেই গণে। ৮৬।
ইন্দ্রিয় যবে চেতনরাগে
সূক্ষ্ম সাড়া বয়,
অতীন্দ্রিয় তা'কেই বলে
এ ছাড়া কিছু নয়। ৮৭।
ক্ষয়ের সাথে হয় যেখানে
ক্ষর পুরুষ তা'য় বাখানে। ৮৮।
হ'য়ে যাহার নাইকো ক্ষয়
অক্ষর পুরুষ তা'রেই কয়। ৮৯।
ক্ষয়ের সাথে হ'লেও যিনি
খোয়ার-হওয়ার পার,
ক্ষরাক্ষরের অতীত পুরুষ
তিনিই সবার সার। ৯০।
লোক-মঙ্গল হয় যাহাতে
বাঁচা-বাড়ায় থাকে,
সত্য ব'লে তা'রেই জানিস্
সৎ-ই বলে তা'কে । ৯১।
বাস্তবে রয় ক্রমবিকাশ
যথার্থ তা'র থাকে,
মিথ্যা যা' তা' সত্তাহারা
যতই বাড়াও তা'কে। ৯২।
যুগগুরু আচার্য্যগুরু
কিংবা শ্রেষ্ঠজনের মান
হেলা-ফেলায় যে-ই ভাঙ্গুক—
ম্লেচ্ছই তা'র ইতর প্রাণ। ৯৩।
গোলাম-বুদ্ধি তাই—
স্বার্থে হুকুম তামিল ছাড়া
প্রাণ-প্রেরণা নাই । ৯৪।
অহং যখন অহংকারে
অন্যে ক'রে বিমলিন,
ইতর রঙ্গিল অহং ব'লে
জানিস্ তা'রে নিত্যদিন। ৯৫।
ক্ষমতা লভিয়া মানুষ যাহারা
তৃপ্তি-বর্দ্ধনে করে না ত্রাণ,
মরণের দূত জানিস্ তা'রাই
শয়তানপ্রিয় ছোট শয়তান। ৯৬।
আদর্শে তোর মুষড়ে দিয়ে
যবেই স্বার্থ-অনুগামী,
ক'রে পাওয়ায় অন্ধ-অবশ
নিছক জানিস্ তাই গোলামি। ৯৭।
নিরোধবৃত্তি যা' আছে তোর
পাশ তা'রে কয় বুঝিস্,
ঐগুলিতে স্বভাব মাটি
প্রাণ ফোটে না জানিস্;
প্রবৃত্তি-পাশ আটভাবেতে
ছেঁদেই রাখে জৈবীগুণ,
ঘৃণা-লজ্জা-মান-অপমান
মোহ-দম্ভ-দ্বেষ-পৈশুন। ৯৮।
কু-আচারী চলন যা'দের
অসৎ কথা কয়,
বাঁচা-বাড়ার উল্টো নীতি
ম্লেচ্ছ তা'রাই হয়। ৯৯।
পূর্ব্বঋষি মানে না যা'রা
জানিস্ নিছক ম্লেচ্ছ তা'রা। ১০০।
ভূতের মতন বৃত্তি চেপে
করলে অসাড় শূন্য,
ওকেই বলে নিছক জানিস্
গ্রহেরই বৈগুণ্য। ১০১।
উৎসহারা বেকুব-পারা
অধঃপাতী রীতি,
তা'কেই জানিস্ অসুর বলে
বাঁচা-বাড়ার ভীতি। ১০২।
দৈন্যে ভরা ইতরমন
পরের ভালয় কাতর হয়,
পরশ্রীতে সঙ্কোচ আনে
পরশ্রীকাতর তা'রেই কয়। ১০৩।
গাছে তুলে মইটি কাড়ে
দান ফিরিয়ে লয়,
ইতর-হৃদয় সেই পিশাচে
দত্তহারী কয়। ১০৪।
বাঁচা-বাড়ার নীতি নিয়ে
ইষ্টে থেকে অধিষ্ঠান,
সেই নীতিতে পরিস্থিতির
তুলেই ধরে মনপ্রাণ,
যাজক জানিস্ তা'কেই বলে
ইষ্টস্বার্থী প্রাণের টান,
হৃদয়-ভরা পরাণ-কাড়া
তাহার সেবার অভিযান। ১০৫।
পথের খবর দিয়ে সবায়
উপদেশ আর সেবার টানে,
দিশাহারা জীবন-পথে
আশার আলো জ্বালিয়ে প্রাণে,
আদর্শেতে যুক্ত ক'রে
উচ্ছলতায় ধ'রে তোলে,
অধ্বর্য্যু নাম তা'রই জানিস্
পথে যুক্ত করে ব'লে। ১০৬।
জনপদের প্রত্যেকেরই
ইষ্টীপূত ঋদ্ধিপথে,
সেবার ডাকে বিষাণহাঁকে
কৃষ্টিবাণীর অমর রথে;
স্বস্ত্যয়নী বৰ্ম্ম পরি'
যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি,
আয়ুধ ধরি' অবাধ চলায়
চালায় যে-জন লোকপ্রকৃতি;
দুঃখ-দৈন্য আহব জয়ে
জীবন-ডাকে ডাকে সবায়,
ইষ্টপ্রাণ চালক সাথী
ঋত্বিক্ সেই লোক-সহায়। ১০৭।
ইষ্টরাগে অটুট যিনি
সাধন-আচার-শীলবান,
আচার্য্যগুরু তিনিই জানিস্
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠাবান । ১০৮।
পূরণ-গড়ন-প্রেক্ষী স্বভাব
সমব্যথী সঙ্গতি,
যজমানের হিতসাধনে
আগেই চলে যা'র গতি,
ব্রহ্মবেদী সংস্কারটি
জন্মগত স্বভাব যা'র,
ঋষিরেতের উৎসৃজনী
পরিণতি যে-সত্তার,
স্বভাব-সুলভ প্রজ্ঞজাতক
এমন যে সেই পুরোহিত,
বুকের লোহিত রক্ত দিয়েও
যজমানের করেই হিত। ১০৯।
ইষ্ট জানিস্ পুরুষোত্তমে
আসেন ধৰ্ম্মস্থাপনায়,
গুরু জানিস্ তাঁ'রই পার্ষদ
তাঁ'কেই বহেন দুনিয়ায়। ১১০।
পূর্ব্বতনী যুগপুরুষের
ক্রমবিকাশ পরিণতি,
আরোতরে উছল করে
জানিস্ যাহার সংহতি—
উপচিয়ে সে পূর্ণ করে
পূর্ব্বতনে স্তরে-স্তরে,
গজিয়ে ওঠে বিশ্বপটে
জনন-নীতি ধন্য ক'রে,
যেমন যুগে তেমন মানুষ
স্থিতির পূরণ গড়ন বয়,
উচ্ছলতায় চলেই চলে—
পূর্ণাবতার তাঁ'রেই কয়। ১১১।