অন্তরে যা’ গোপন ক’রবে তাই বৃদ্ধি পাবে।

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

অন্তরে যা’ গোপন ক’রবে তাই বৃদ্ধি পাবে।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

আদেশক্রমে সপ্তর্ষী আলোচনা শুরু করল।

সপ্তর্ষি—আমি যদি চুরি করি এবং তা যদি গোপন না করি তাহলে যে আমার থেকে বড় সে আমাকে শুধরে দেবে। বলবে, চুরি করা খারাপ। কিন্তু যদি চুরি ক’রে তা’ গোপন করি তাহলে ওটা—চুরি করার ভাবটা আমার মধ্যে থাকবে এবং তা’ বৃদ্ধি পাবে।

এরপর নির্দেশমত পল্লব আলোচনা শুরু করল—আমি যদি মিথ্যা কথা বলি এবং তা স্বীকার না করি অর্থাৎ গোপন করি তাহলে তা’ বেড়ে বেড়ে যাবে। কিন্তু যদি স্বীকার করি তাহলে গুরুজনেরা আমার দোষ ধরিয়ে দেবে এবং আমার পরিবর্তন হবে।

ধৃতি—আমি যদি রোজ প্রার্থনার সময় ঠাকুরবাড়ী না এসে খেলতে যাই এবং ঐ খেলতে যাওয়ার ঘটনা গোপন করি বা মিথ্যা বলি তাহলে ঐ দোষ আমার মধ্যে পেয়ে বসবে এবং তা বৃদ্ধি পাবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—খেললে, তাতে কী হ’ল? খেলাটা বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। বিরাট খেলোয়াড় হয়ে গেলে। ভালই হ’ল। খেলে খেলে World Famous (বিশ্ববিখ্যাত) হয়ে গেলে। তাতে কী হ’ল? ক্ষতি কী হ’ল?

আলোচনার সুবিধার জন্য শ্রীশ্রীপিতৃদেব এর আগের বাণীটি পাঠ করতে বললেন। ঐ বাণীটিতে সংকীর্ণতা বা পাপের কথা বলা হয়েছে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—পাপ সম্বন্ধে বলা হচ্ছে। এখানে খেলাটা কি পাপ হচ্ছে?… ধর, তুমি কোন গুরুর কাছে দীক্ষা নিলে, কাউকে বললে না। দীক্ষা নিয়ে ঐ পথে চলতে চলতে মহাসাধক হয়ে গেলে। অন্তরে গোপন ক’রে মহাপুরুষ হয়ে গেলে। এরকম হয় না?

উপস্থিত সকলে সম্মতি প্রকাশ করলেন।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আবার, জীবনবৃদ্ধির অন্তরায় যা তা যদি গোপন করা যায় তাহলে তা, বৃদ্ধি পাবে। ধর, তুমি নাম নিলে, কাউকে বললে না। ঠাকুর যেভাবে চলতে বলেছেন সেভাবে না চলে নিজের খেয়ালমাফিক চলতে লাগলে। জীবনবৃদ্ধির উল্টো রকমে চলতে শুরু করলে। ফলে কী হবে? নাম নেওয়ার উদ্দেশ্য পরিপুরিত হবে না। ওই উল্টো চলনাই তোমাকে পেয়ে বসবে।

কতকগুলো জিনিস গোপন করতে হয়। যেমন, দান করা, নিঃস্বার্থ সেবা দেওয়া—এসব কারো কাছে বলতে হয় না। বললে নিঃস্বার্থ হয় না। ঠাকুরের বলাই আছে—দান, সেবা—এসব যত গোপন করা যায় ততই মঙ্গল। অহংকার থেকে ত্রাণ পাবে। কিন্তু পাপ গোপন করতে নেই। খেলতে যাওয়া তো পাপের নয়। পাপ হচ্ছে, মিথ্যা কথা বলা। যদি মা-র কাছে বল, ঠাকুরবাড়ী যাচ্ছি, কিন্তু যাচ্ছ খেলার মাঠে তাহলে তো মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। মিথ্যা বলা পাপ। তাই এভাবে চললে তোমার পাপ বেড়ে যাবে। ঠাকুর তাই জীবনবৃদ্ধির যা অন্তরায় তা গোপন না করার কথা বলছেন।

[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তারিখ-১৬/৬/৭৭ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮]