ক্ষিপ্র হও, …ফেলো না।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ -এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

ক্ষিপ্র হও, কিন্তু অধীর হ’য়ে বিরক্তিকে ডেকে এনে সব নষ্ট ক’রে ফেলো না।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব শাম্বতীকে (চ্যাটার্জী) আলোচনা করতে বললেন।

শাশ্বতী—আমি একটা কাজ করছি। কাজটা করতে যেয়ে—

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কী কাজ করছ, সেটা বল—।

শাশ্বতী—আমি জামা সেলাই করছি, খুব তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করছি, কিন্তু সময় লাগছে; তাড়াতাড়ি হচ্ছে না দেখে অধীর হ’য়ে পড়ছি, বিরক্তি আসছে, তার ফলে জামাটাই নষ্ট করে ফেললাম।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার দাদা ও মায়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন—কী, ঠিক আছে? তাড়াতাড়ি করতে হবে ঠিকই, কিন্তু কাজটা যাতে সর্বাঙ্গসুন্দর হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে যদি অধীর হই, তাতে বিরক্তি এসে পড়বে,—তখন সব নষ্ট হয়ে যাবে। (সমুখের দাদাদের পানে তাকিয়ে) ভালই বলেছে শাশ্বতী—কী বল্‌?

গুরুকিংকরদা—আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই বলেছে।

সুরেনদা (মিস্ত্রী)—’ক্ষিপ্র হও’ কী রকম?

শ্ৰীশ্রীপিতৃদেব (সুরেনদার দিকে তাকিয়ে)—যে তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারে, তাকেই ক্ষিপ্র বলে।

সতীশদা—ক্ষিপ্র হলেও ধীর তো হতে পারে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—যে যত গভীরভাবে কাজে মনোনিবেশ করে তার ক্ষিপ্রতা তত বোঝা যায় না।

অতঃপর শ্রীশ্রীপিতৃদেব টাটানগরের এক ডায়নামোর উদাহরণ দিয়ে বললেন—সেই ডায়নামোটা এত জোরে ঘুরছে যে মনে হচ্ছে স্থির রয়েছে। কত লোক এটা দেখার জন্যই যায়। (ক্ষণিক থেমে) আবার ক্ষিপ্র হতে হয়, তা’ বলে অধীর হয়ে পড়তে নেই। যতজোরে গেলে হয় অধীর হয়ে তার চেয়ে বেশী জোরে যেতে চাচ্ছি, তাতেও কাজের সিদ্ধির অন্তরায় সৃষ্টি হয়, কাজ পণ্ড হয়।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২২/১/৭৬ ইং]

আজ মায়েদের আলোচনায় স্নেহলতা-মা (কর) বাণীটি পাঠ করে বলেন—ক্ষিপ্র হওয়া মানে কোন কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা, কিন্তু যদি অস্থিরতা এসে যায়, ধীর-স্থির ভাব না থাকে তাহলে সব নষ্ট হয়ে যায়।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব (উপস্থিত জনদের)—ঠিক আছে?

—আজ্ঞে।

[ পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/তাং-২৬/৬/৭৯ ইং ]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৮০, ৮১]