গোপন অভিপ্রায়ে … ধ’রবে। – ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

গোপন অভিপ্রায়ে চালককে ‘অন্তর্য্যামী, সবই জানতে পারছ’ —ব’লে চালাকি ক’রলে নিজেই পতিত হবে, দুর্দ্দশায় ঘিরে ধ’রবে।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

অতসী ভুক্ত আলোচনা করার নির্দেশ পেয়ে পুনরায় পাঠ করে বলল—আমি যদি খারাপ কাজ করি, এবং গোপন করার ইচ্ছায় মনে-মনে ভাবি, তিনি অন্তৰ্যামী সবই জানতে পারছেন—

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মনে মনে কেন? জোরে জোরে বলা যায় না? গোপন অভিপ্রায় মানে কি?

অতসী চুপ থাকায় শ্রীশ্রীপিতৃদেব নিজেই বলে দিলেন—যেমন, ঠাকুর বললেন—তুই কি পাশ? তখন বললি—আপনি তো অন্তৰ্যামী সবই জানেন—আমি কি বলব!—এটা গোপন করার ইচ্ছা। মনে-মনে ভাবতে হবে কেন? হয়ত ঠাকুর কিছু জিজ্ঞেস করছেন, বারে বারে জিজ্ঞেস করা সত্বেও গোপন করতে চাইছে। সে ভাবে, অনেক লোক আছে, এখানে যদি বলি তাহলে আমার মান থাকবে না। কাজের ব্যাপারেও তাই।

অতসী—খারাপ কিছু করলে গোপন করব না।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তাঁর কাছে ভাল-মন্দ কোন কাজই গোপন করব না। সবই বলব। সব সময় অকপট থাকব। খারাপ কাজ তো সবাই গোপন করতে চায়। গোপন করে কি অভিপ্রায়ে? ভাল না হলে মনে করে আমার সম্মান কমে যাবে, লোক হেয় মনে করবে। ঠাকুর বলছেন—এমন করলে খারাপ হবে, দুর্দশা ঘিরে ধরবে।

[পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/তাং-১৪/৯/৭৯ ইং]

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বাণীটি পাঠের সময় আমার একটা ঘটনা মনে পড়ল। শ্রীশ্রীঠাকুর এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন—কতদূর পড়েছেন, এত সুন্দর ইংরাজী কোটেশান দিয়ে বক্তৃতা দেন। উত্তরে ঐ দাদা—’আপনি অন্তর্যামী, সবই জানেন’ বলে উত্তর দিলেন। ঠাকুর মোটেই সন্তুষ্ট হলেন না। অন্তত দশবার একই প্রশ্ন করলেন, “কতদূর পড়েছেন?” ঐ দাদা একইভাবে উত্তর দিলেন। এইভাবে তাঁকে যথার্থ উত্তর না দিয়ে চালাকি করলেন।

যদি সত্যি কথা বলতেন (যা আমি অন্যের কাছে শুনেছি) যে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেব বলে প্রস্তুত হয়েছিলাম কিন্তু দেওয়া হয়নি, এই সত্য কথা যেমন অন্যের কাছে বলেছেন, তেমনি তাঁর কাছে বললেই হতো।

শ্রীশ্রীঠাকুর শুনে খুশী হতেন। হয়তো বলতেন—নেন, এবার ম্যাট্রিক দিয়ে দেন। তারপর আই এ, বি এ পাশ করার জন্য বলতেন। তারপর বলতেন এম এ দিতে হবে। কিন্তু ব্যক্ত না করার জন্য তাঁর এই আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হলেন, এইভাবে পন্ডিত হয়ে রইলেন। তাঁর সাথে চালাকি করলেন বলেই সব মানুষ সহজেই তার থেকে দূরে সরে গেলেন, আস্তে আস্তে যোগাযোগ ছিন্ন হল সবার সাথে। এত মানুষের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবার পর ভাবতে লাগলেন কেন বঞ্চিত হচ্ছেন? কেন এমন দুর্দ্দশা হল?

[তাঁর সান্নিধ্যে/তাং-১৯/৪/৭৪ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৪৮ – ১৪৯]