সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
জাল-ভক্তি মোটা-অহঙ্কার-যুক্ত, আসল ভক্তি অহঙ্কার-মুক্ত অর্থাৎ খুব পাতলা-অহঙ্কার-যুক্ত।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
জাল-ভক্তি ও আসল-ভক্তির উদাহরণ দিতে গিয়ে শ্রীশ্রীপিতৃদেব আসামের মহাপুরুষ শংকরদেবের এক কাহিনী ব্যক্ত করলেন। শংকরদেবের এক ভক্ত ছিল। নিজের খাওয়া-পরার পিছনে খুব কম ব্যয় করত। সবাই তাকে কৃপণ বলে জানত। শংকরদেব একবার তীর্থ ভ্রমণে যাবেন! অনেক টাকা দরকার। স্থির করলেন ঐ ভক্তের কাছে চাইবেন। তার বাড়ি গেলেন শংকরদেব। সে তো ভাবতেই পারেনি প্রভু এই কুঁড়েঘরে আসবেন। প্রভু তাঁর আসার উদ্দেশ্য খুলে বললেন। অবগত হয়ে সেই ভক্ত কিছু সময় চেয়ে নিয়ে তার বিষয় সম্পত্তি সব বন্ধক দিয়ে অর্থের এক পুঁটলি প্রভুর চরণে নিবেদন করল। —প্রভু, আপনার জিনিস, দয়া করে গ্রহণ করুন। প্রয়োজনমত কিছু অর্থ নিয়ে প্রভু তার সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাকী সমস্তই ফেরৎ দিলেন। এই হ’ল আসল ভক্তি।
আর একজন শংকরদেবের ভক্ত নামে বেশ পরিচিত ছিল। সে প্রায়ই বলে বেড়াত ‘এ সবই প্রভুর জিনিস’। ধনাঢ্য ব্যক্তি। দালান ঘর। সুন্দর ঘরবাড়ি ও বাগান। বাগানে নানারকমের সুন্দর সুন্দর গাছ। একদিন গুরু এলেন দেখতে। সে গুরুকে আদর-আপ্যায়ণ করে বসার ভাল আসন দিল। গুরু জিজ্ঞাসা করলেন—কেমন আছ? বিনয় দেখিয়ে ভক্ত উত্তর দেয়—আপনার দয়ায় ভালই আছি প্রভু! গুরু বললেন—চল তোমার বাগান দেখে আসি। শিষ্য গুরুর আগে আগে চলল বাগান দেখাতে। বাগানে সুন্দর সুন্দর দেশী-বিদেশী গাছ। গুরু জানতে চাইলেন—এ গাছগুলো কার? শিষ্য বলে প্রভু, এসবই ‘আপনার। একটা সুন্দর গাছ দেখিয়ে গুরু বললেন—এ গাছটা আমার প্রয়োজন। এ গাছটা এখনই কাট। শিষ্য তো ভাবতেই পারেনি প্রভু এভাবে চেয়ে বসবেন। গাছের পিছনে পরিশ্রম সে কম করেনি। ভীষণ মায়া বসে গেছে গাছের প্রতি। তাই বলে উঠল—না-না, এটা চাইবেন না। এটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু যদি চান—! গুরু বললেন—এ সবই তো আমার বললে। সে ইতস্ততঃ ক’রে বলে— হ্যাঁ, আপনারই ; তবে এ গাছ কাটতে বলবেন না। এটা ছাড়া অন্য কিছু হলে দিতে পারি। গুরু বুঝলেন তার ভক্তির জোর। এই হচ্ছে জাল-ভক্তির উদাহরণ।
[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১৯/৭/৭৬ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্টা ২২৬ – ২২৭]