জাল-ভক্তি-যুক্ত …বেরোয়।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীদু’টি হলো:

জাল-ভক্তি-যুক্ত মানুষ উপদেশ নিতে পারে না, উপদেষ্টারূপে উপদেশ দিতেই পারে ; তাই কেউ উপদেশ দিলে মুখে চটার লক্ষণ, বিরক্তির লক্ষণ, সঙ্গ-পরিহারের চেষ্টা ইত্যাদি লক্ষণ প্রায় স্পষ্ট প্রকাশ পায়।

আসল-ভক্তি-যুক্ত মানুষ উপদেষ্টার আসন নিতে একেবারেই গররাজি। যদি উপদেশ পায়, তার মুখে আনন্দের চিহ্ন ফুটে বেরোয়।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

প্রশ্ন—আসল ভক্তিযুক্ত মানুষ উপদেষ্টার আসন নিতে কেন গররাজি?

নিত্য—নেবে কেন? তার কর্ত্তা যে আছে, তাই কর্ত্তা সাজতে চায় না।

শ্রীশ্রীবড়দা—কর্ত্তা সাজতে চায় না কেন?

নিত্য—তার কর্ত্তা আছে ব’লে।

শ্রীশ্রীবড়দা—’আসন’ নেওয়া মানে কি?

অরুণ—উপদেষ্টা সাজা।

শ্রীশ্রীবড়দা—যেমন ‘সত্যানুসরণ’ ঠাকুর লিখেছেন। অতুলবাবু বললেন—এতদিন এখানে থাকলাম, কত কি মহামূল্য কথা শুনলাম—কত দিন আবার এমন সব কথা শুনতে পাব না—শেষে ঠাকুর লিখে দিলেন। আবার তোমার সঙ্গে জিতেনের দেখা; দেখামাত্রই উপদেশ ছাড়তে লাগলে—শেষ পৰ্যন্ত তোমার কাছে উপদেশ শুনতে আর আসে না।

জনৈক—যাজন ক’রতে যে উপদেশ দিতে হয়।

শ্রীশ্রীবড়দা—যাজন করতে শ্রীশ্রীঠাকুরের গুণকীর্তন ক’রতে হয়। যদি উপদেশ দেয়, শেষ পর্যন্ত মানুষ তাদের কাছে এসে চিমটি-ই দেয়।

আমার প্রয়োজন হ’লেই তো উপদেশ নি’ই—উপদেশ দেবার কিছুই নেই। যাজন ক’রতে যদি উপদেশ দিতে শুরু কর, তবে কেউ শুনবে না তোমার কথা। বিনয়ের সঙ্গে, ভালবাসার সঙ্গে, মমতার সঙ্গে যারা উপদেশ দেয়, তারা বুঝতেই দেবে না—সুযোগ পেলেই তারা ঠিক জিনিসটা ধরিয়ে দেয়।

[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-১৯/৪/৭২ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২২৭]