সত্যানুসরণ -এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যদি ভাল চাও তো জ্ঞানাভিমান ছাড়, সব্বারই কথা শোন; আর, যা’ তোমার হৃদয়ের বিস্তারের সাহায্য করে তাই কর।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সুবীরকে আলোচনা করার আদেশ দিলেন।
সুবীর—এই বাণীতে ঠাকুর বলছেন তুমি বেশি জানার অভিমান না রেখে সকলেরই কথা শোন। কিন্তু করবে তা-ই, যা’ তোমার হৃদয়ে বিস্তার নিয়ে আসে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—একটা উদাহরণ দাও।
সুবীর—রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। পাশে এক বাগানে আমগাছে আম পেকে আছে—রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছে। আমার পাশের ভদ্রলোক বলছে, যাও পাঁচিল টপকে আমটা পেড়ে নিয়ে এস। আমি শুনলাম তার কথা। কিন্ত তা করব না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কেন করব না?
সুবীর—তা করা জীবনবৃদ্ধির অন্তরায় হবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তা কেন হবে? পেড়ে খেলে পেট ভরবে, তা কি জীবনবৃদ্ধির অন্তরায়?
সুবীর—অপরের জিনিস না বলে নিলে তা জীবনবৃদ্ধির অন্তরায়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—অপরের জিনিস না বলে নিলে জীবনবৃদ্ধির অন্তরায় কেন?
সুবীর—তাতে সংকীর্ণতা আসে। আর যা সংকীর্ণতা এনে দেয় তা-ই পাপ।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—পুণ্য কী?
সুবীর—যা জীবনবৃদ্ধির সহায়ক।
শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণলাল চট্টোপাধ্যায় (শ্রীশ্রীপিতৃদেবের বৈবাহিক) গতরাতে আশ্রমে পৌঁছেছেন। শ্রীশ্রীপিতৃদেবের সম্মুখের দিকে একটি আসনে বসে উনি বাণীর আলোচনা শুনছেন। তিনি বললেন—সব্বারই কথা কি শুনব?
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কান যখন আছে শুনতেই হবে। এখানে শোনা মানে শ্রবণ। ছেলেটা একেবারে কথা শোনে না— এর মানে কী? (অজিত গাঙ্গুলীদাকে জিজ্ঞাসা করলেন)
অজিতদা— মানে, যা বলা হয় তা করে না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ। এখানে শোনা মানে পালন করা, মেনে চলা।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৯/৩/৭৮ইং ]
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সুস্মিতাকে (স্বামী) বাণীটি আলোচনা করার নির্দেশ দিলেন। সুস্মিতা বাণীটি পাঠ করে চুপ করে থাকাতে বললেন— হৃদয় মানে অন্তরে, বিস্তারে অর্থাৎ যাতে বেড়ে যাওয়া যায় তাতে। ঠাকুর কী বলেছেন?
সুস্মিতার নিরুত্তরে নিজেই বললেন—কেউ হয়তো এম.এ পাশ, সে ভাবে আমি খুব জানি—আর সবাইকে ছোট মনে করে। আবার কেউ হয়তো কিছুই জানে না—ভাবে আমি সব জানি। ঠাকুর বলেছেন ঐ জ্ঞানাভিমান ছাড়তে, আর যে যা বলে তাই শুনতে। আবার সবার কথা শুনলে তো পাগল হওয়া যাবে। তাই বলেছেন—ঐ করতে-করতে যেটা তোমার হৃদয়ের বিস্তারে সাহায্য করে বুঝতে পারছ সেটা কর।
[ পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে /তাং-২১/৫/৭৯ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৪৬]