সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
তুমি যদি সত্য দেখে থাক, বুঝে থাক, তবে তোমার কায়মনোবাক্যে তা’ ফুটে বেরুবেই বেরুবে। তুমি তাতে হারিয়ে না যাওয়া পর্য্যন্ত কিছুতেই স্থির থাকতে পারবে না; সূর্য্যকে কি অন্ধকারে ঢেকে রাখতে পারে ?
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব কমলা মিত্রকে আলোচনা করার আদেশ দিলেন।
কমলা-মা—এখানে ঠাকুর বলেছেন যে তোমার যদি ঠাকুরের প্রতি নিষ্ঠা-ভক্তি থাকে তা’হলে ফুটে বেরোবেই। তোমার চলা-বলা, তোমার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে তা প্রকাশ পাবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—’তুমি যদি সত্য দেখে থাক’ এখানে সত্য মানে কী?
—যা মঙ্গল তা-ই সত্য।
—তাহ’লে কী হ’ল?
—আমি যদি মঙ্গল বুঝে থাকি, দেখে থাকি অর্থাৎ ইষ্টের প্রতি যদি আমার নিষ্ঠা-ভক্তি থাকে তাহ’লে তা’ আমার চাল-চলনে প্রকাশ পাবেই।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব পুনরায় প্রশ্ন করলেন—ইষ্টের প্রতি নিষ্ঠা-ভক্তি কেন?
কমলা-মা—কেননা, ইষ্টই মঙ্গল। তিনি মঙ্গলের প্রতীক।
—কেন? কাদের নিকট মঙ্গল?
—সকলের নিকট মঙ্গল।
—কেন তিনি সকলের নিকট মঙ্গল? ইষ্ট সকলের নিকট মঙ্গল হবেন কেমন ক’রে?
—কেননা, তিনি জীবন-বৃদ্ধির সহায়ক।
কমলা-মার উত্তর শুনে শ্রীশ্রীপিতৃদেব খুশি হ’য়ে বললেন—হ্যাঁ, এইজন্যই ইষ্টের প্রতি নিষ্ঠা-ভক্তি থাকলে তা প্রকাশ পাবে। ইষ্ট জীবন-বৃদ্ধির সহায়ক। তাই তাঁকে ধ’রে মানুষ জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চললে চাল-চলন, কথাবার্তা, হাব-ভাবে তার প্রকাশ থাকেই।
সতীশদা—আজ্ঞে, ‘সত্য’ কথার অর্থ পরিষ্কার হ’ল না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, বল্ না কী অর্থ।
সতীশদা—’সত্য’ শব্দ এসেছে ‘অস্’ ধাতু থেকে । ‘অস্’ ধাতুর অর্থ বিদ্যমানতা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—অস্ + শতৃ=সৎ। সৎ মানে বিদ্যমানতা। যিনি বিদ্যমানতার মূর্ত প্রতীক তিনি হ’লেন ইষ্ট। তিনি বিদ্যমানতার মূর্ত প্রতীক ব’লে তাঁকে ধ’রে যারা চলে তাদের বিদ্যমানতা অটুট থাকে—তারা বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। এজন্যই বলা হয় ইষ্ট মঙ্গলময়—ইষ্ট মঙ্গলের মূর্ত প্রতীক।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার শিপ্রা-মাকে বাণীটির বাকি অংশ আলোচনা করতে বললেন।
আলোচনা-শেষে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—তার মানে, তুমি তাতে অর্থাৎ সত্যে তন্ময় না-হওয়া পর্যন্ত কিছুতেই স্থির থাকতে পারবে না। সত্যরূপ সূর্যকে কি অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার ঢেকে রাখতে পারে?
[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৯/৮/৭৬ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৫৭]