সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
তুমি যদি সৎ-চিন্তায় সংযুক্ত থাকতে চেষ্টা কর, তোমার চিন্তা, আচার, ব্যবহার ইত্যাদি উদার এবং সত্য হ’তে থাকবে ; আর, সেই লক্ষণগুলিই ভক্তের।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীবড়দা—সৎচিন্তায় সংযুক্ত থাকলে কর্ম ও আচরণ সৎ হয়। অসৎ কথা মানে যা অজীবনীয়, এমন কথা। তা কেউ বলল তুমি শুনে যাচ্ছ, শেষে চললে উল্টোপানে। মানুষের যদি কুপ্রবৃত্তি থাকে সেই কথায় মন অপবিত্র হয়। আর যদি মৌ-প্রবৃত্তি থাকে তাহলে যেখানে ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা হয় সেখানেই সে থাকে। তাই ভালোটাই বেছে নিতে হয়। খারাপ শুনতে-শুনতে খারাপ ভাব আসে। সেই শুনতে-শুনতে খারাপ কাজ করে, শেষ পর্যন্ত শুধুই অশান্তি। তাই
“ঊষা নিশায় মন্ত্র সাধন
চলা ফেরায় জপ
যথা সময়ে ইষ্টনিদেশ
মূর্ত্ত করাই তপ।”
কিছুদিন করে-ধরে নিতে পারলে system-টাই তেমন হয়ে যায়। তখন না করলেই ভালো লাগে না। ঊষা নিশায় করতে হবে। যখন তখন নয়। প্রার্থনা, নাম-ধ্যানের সময় ঠিক করে নিয়েই অন্যান্য কাজ adjust করে নিতে হয়।
ভবানী—কাল এখানে প্রার্থনা হচ্ছিল, recitation হচ্ছিল আর এক জায়গায়।
শ্রীশ্রীবড়দা—আমি হলে এ recitation-এর সময়ই প্রার্থনা করে নিতাম। এই রকম করতে-করতে সব ঠিক হয়ে যায়। রাস্তায় ঘাটে প্রার্থনা করতে দেখে ব্যঙ্গ করবে কেউ কেউ। সৎ-চিন্তায় থাকা মানে সব সময় জপ করে চলা, ঊষায় (৪র্থ প্রহরে) বসে নাম করা, আমাদের দেশে এই প্রথা। কিছুদিন করতে-করতে (শেষে একটা) অনুভূতি পেকে যায়। তখন ভজন করতে হয়। সেটা নিশায়।
চলাফেরায় জপ . . . আমাদের এমন সুবিধা করে দেয় তা আর কওয়া যায় না। তুমি যে হারমোনিয়াম বাজাও, গান কর, চোখ বুজে থাক—কটা ইন্দ্রিয় কাজ করে? তুমি যে হাত দিয়ে বাজাও তা’কি টের পাও? অভ্যেস। নামটাও ওরকম। ঘরে বসে, পথে হাঁটতে হাঁটতে হয়। ঘুমের মধ্যেও দড়দড় করে হয়।
[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-৮/১২/৭২ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২১৯]