সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
“তোমার গালে চড় মারলে যদি ব’লতে পার, কে কাকে মারে, তবে অন্যের বেলায় বল, ভালই। খবরদার ! নিজে যদি না ভাবতে পার, তবে অন্যের বেলায় ব’লতে যেও না।“
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
মেয়েদের মধ্যে পাঠ করল মিনতি (গাঙ্গুলি), ধীরা (মণ্ডল) ও প্রতিভা (প্রধান)।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব মিনতিকে অর্থ বলতে নির্দেশ করলেন। মিনতিকে ইতস্ততঃ করতে দেখে তিনি বললেন—তোমার গালে চড় মারলাম, তুমি কি ভালই বলবে? তুমি তো কেঁদে ফেলবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব ধীরাকে একই প্রশ্ন করলেন।
ধীরা—আমার গালে চড় মারলে তখন জিজ্ঞাসা করব, কেন মারলে?
ছেলেদের মধ্যে পাখী পাঠ করেছে। শ্রীশ্রীপিতৃদেব একই প্রশ্ন পাখীকে করলেন।
পাখী—আমি বলব যিনি মারবার তিনিই মেরেছেন।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কেউ তোমাকে চড় মারলে তুমি তেড়ে আসবে না?
পাখী—আজ্ঞে না, তেড়ে আসব না।
সতীশদা—চড় খেতে খেতে গাল ফুলে যাবে।
প্রতিভাকে শ্রীশ্রীপিতৃদেব একই প্রশ্ন করলেন।
প্রতিভা—আমার গালে যদি কেউ চড় মারে আমি তখন যদি বলি কে কাকে মারে, সবই তাঁর ইচ্ছা, তিনিই মেরেছেন, তখন অন্যের বেলায় আমার বলা সাজে—তিনিই ইচ্ছাময়, তিনিই মেরেছেন তোমাকে। তা না ভাবতে পারলে তা বলতে যাওয়া ঠিক নয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—নিজের বেলা যদি ভাবতে পারি কে কাকে মারে তখনই শুধু অন্যের বেলা বলতে পারি তা’। কিন্তু অন্যের বেলায় কিছু মনে করি না, বলি কে কাকে মারে, নিজেকে কেউ চড় মারল, সঙ্গে-সঙ্গে লাফিয়ে উঠে তাকে পাল্টা আঘাত করতে গেলাম তা কিন্তু ঠিক হবে না।
আমার ছাওয়াল প্রতিবেশীর ছেলেকে মেরেছে, ঐ ছেলের বাবা পাল্টা লাঠি নিয়ে মারতে এল আমার ছেলেকে, তখন বললাম ছেলেমানুষ মেরেছে ছেড়ে দিন। অন্যদিকে আমার ছেলেকে যেদিন অন্যের ছেলে মারধর করল, তখন আমি লাঠি নিয়ে এ প্রতিবেশীর বাড়িতে চড়াও হলাম রণং দেহি মুর্তি নিয়ে। এমনটা হলে চলবে না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সাধক রামপ্রসাদের জীবনের ঘটনা তুলে ধরলেন।—সাধক রামপ্রসাদ-এর কাছে মা-ই জগতের কর্ত্রী। তিনিই চালিকাশক্তি। তাই তিনি আঘাতকারীকে প্রত্যাঘাত না করে বলতে পারেন—ওর কোন দোষ নেই, মায়ের ইচ্ছা ছিল, তাই ওর হাত দিয়ে মেরেছেন।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-৫/২/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৯৩, ৯৪]