দীনতাহীন অহঙ্কারী …..না।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

দীনতাহীন অহঙ্কারী ধনী প্রায়ই অবিশ্বাসী হয়, আর তার হৃদয়ে স্বর্গের দ্বার খোলে না।

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

শ্রীশ্রীবড়দা অরুণ জোয়ারদারকে আলোচনা করতে বললেন।

অরুণদা—অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিকতার জন্য ধনী নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তাই অহংকারী হয়, সে নির্ভর করতে পারে না।

সতীশদা—আর অবিশ্বাসী হয় কেমন ক’রে?

অরুণদা—এই আত্মকেন্দ্রিকতার জন্য সে অবিশ্বাসী হয়।

শ্রীশ্রীবড়দা—আত্মকেন্দ্রিকতার জন্য অবিশ্বাস এল কি না?

অরুণদা—আজ্ঞে তার জন্য সে নিজে যা’ ভাবে যা’ দেখে, … তাই সব। তার উপরে কিছু নেই।

শ্রীশ্রীবড়দা—অহংকার কি?

অরুণদা—আমিত্ব বোধ। দু’রকম আমি আছে—এক আমি সীমায়িত, আর হল ব্যাপ্ত আমি।

শ্রীশ্রীবড়দা—সে তো ঠিকই। অহংকার মানেটা বুঝতে পারলাম না।

অরুণদা—আমি যেটা বোধ করি, ভাবি সেইটাই একমাত্র ঠিক। ‘আমি কর্ত্তা’ এই বোধ।

শ্রীশ্রীবড়দা—আমি কর্ত্তা বোধ থাকে সেই জন্য মনে করে আমার চাইতে আর বড় কে থাকতে পারে! স্বর্গ মানে?

সতীশদা—সুখের স্থান।

শ্রীশ্রীবড়দা—সুখ মানে কি? নরম বিছানায় শুয়ে থাকব, রাবড়ি কিনে খাব, কোন ঝঞ্জাট থাকবে না। ভাল কাপড় পরব, গহনা পরব, সাধারণ মানুষের এই বোধ।

সতীশদা—সুখ নানা রকম আছে—জাগতিক, পারমার্থিক।

শ্রীশ্রীবড়দা—যারা সাধক তাদের কি পারমার্থিক সুখ থাকে না? যে প্রকৃত সুখ পেয়েছে সেই বোঝে। যে মনে করে ভাল খাব, নড়ব না, চড়ব না, হজম করতে পরিশ্রম করব না। হাটব না। তাতে নানা রকম বাত Diabeties, Blood pressure বিভিন্ন রোগ দেখা দেবে। অনেক সাধুসন্ত দেখা যায়, চোখে শুধু জ্যোতি। দু চারখানা রুটি খাচ্ছে, ২০/৩০ মাইল আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। world-এর বড় বড় গবেষকরা বলছেন নুন মিষ্টি একদম বাদ দাও। পেঁয়াজ, মাংসও খুব কমিয়ে দাও। কম খাবার দরুণ রোগ কমে যায়। কর্মক্ষমতার দরুণ তারা একটা কিছু চায়। তার জন্য ঈশ্বরের দিকে ছোটে, পরমানন্দ লাভ করে। আমরা যা খাই—নুন ঝাল খেতে খেতে প্রবৃত্তির অধীন হয়ে পড়ি, ইন্দ্রিয়পরবশ হয়ে পড়ি। খাবার সঙ্গে প্রবৃত্তির কোন মিল নেই? তোমার রাগ বেশী, এমন diet ডাক্তার দেবে যাতে রাগ কম হয়। খাদ্যের মধ্যে দিয়ে সংযত হবার ব্যবস্থা আছে।

—স্বৰ্গ কি?

সতীশদা—স্বর্গ বলতে সুখ বোঝায়।

শ্রীশ্রীবড়দা—আমি একরকম বুঝি। তুই একরকম বুঝিস্‌, কেউ বারোমাস আম খায়। একজন জমিদার আমাদের ওখানে ছিল। রোজ ইলিশ মাছ খাওয়া চাই। তাই নিয়েই তোড়জোড়। সুখের বোধ এক এক রকম। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আবার ইন্দ্রিয়ের পরিগ্রহও একটা সুখ, কেউ কেউ মনে করি। যেমন মদ খায়, খেতে খেতে শেষে একদম Liver Damage করল।

গুরুকিংকরদা—সুখস্য মূলং ধর্ম। জীবন বৃদ্ধির ধর্ম। আমরা আদর্শ ধরে চলতে পারলেই সুখ।

শ্রীশ্রীবড়দা—আমরা তো অনেকেই আদর্শ ধরে চলছি। সবাই তো সুখ পাচ্ছি না!

শ্রীকন্ঠদা—আমি কর্ত্তা, ভাবটা চলে গেলে, তিনি কর্ত্তা ভাব এলেই সুখ আসে।

শ্রীশ্রীবড়দা—ইন্দ পরিতৃপ্তিই সুখ, সাধারণত সবাই মনে করে। কিন্তু দেখা যায় তাও পরিণামে দুঃখ আসে।

সতীশদা—সুখের Definition কি?

শ্রীশ্ৰীবড়দা—Definition জানি না, আমি যা বুঝি তা বলতে পারি। আমি বুঝি পরার্থে কষ্ট ভোগ করা বা ইষ্টার্থে যে যত কষ্ট সহ্য করতে পারে সে তত বড় সুখী। দুঃখ বাদে সুখী হই না। রাত আছে বলে দিন। সবচেয়ে বড় হলো ইষ্টার্থে কে কত দুঃখ সহ্য করতে পারে। হনুমানের মুখ পুড়ে যাচ্ছে, কোন খেয়াল নেই। কষ্ট ছাড়া সুখই নাই। কত মা’র জীবন যায়, ছেলে হবার জন্য। তুমি যতই কর গাড়ী বাড়ী—ওতে সুখ নেই। ঠাকুর বলেছেন—ইষ্ঠার্থে যত কষ্ট হবে, ততই মলিনতা কেটে যাবে।

[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-২৭/৫/৭৫ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৮২ – ১৮৩]