সত্যানুসরণে প্রাপ্ত বাণীটি হলো:
“সর্ব্ব প্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক’রতে হবে। সাহসী হ’তে হবে, বীর হতে হবে। পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি ঐ দুর্ব্বলতা। তাড়াও, যত শীঘ্র পার, ঐ রক্তশোষণকারী অবসাদ-উৎপাদক Vampire কে (ভ্যাম্পায়ার একজাতীয় বাদুড়; ইহারা নির্ব্বিবাদে ঘুমন্ত জীবজন্তুর রক্ত শোষণ করিয়া থাকে)। স্মরণ কর তুমি সাহসী, স্মরণ কর তুমি শক্তির তনয়, স্মরণ কর তুমি পরমপিতার সন্ধান। আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে, তোমার ধর্ম্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।”
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেবের আদেশে স্বপ্না আলোচনা শুরু করল।
স্বপ্না—ঠাকুর আমাদের দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলছেন। রক্তশোষণকারী বাদুড় যেমন ঘুমন্ত প্রাণীর রক্ত শোষণ করে থাকে, দুর্বলতাও আমাদের ক্ষমতা শোষণ করে। প্রত্যেকে পরমপিতার সন্তান। ধর্মরাজ্যে ঢুকতে পারব তখনই যখন আমরা দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব (হরিপদদাকে)—কী, ঠিক আছে?
হরিপদদা—দুর্বলতা কী?
স্বপ্নাকে নিরুত্তর দেখে শ্রীশ্রীপিতৃদেব হরিপদদাকে উত্তর দিতে বললেন।
হরিপদদা—অসৎকর্মের ফলে দুর্বলতা আসে। দুর্বলতা মনের। ইষ্টের উপর নির্ভরশীলতার অভাবেও মন দুর্বল হয়ে পড়ে।
গুরুকিংকরদা—রোগ-অসুখের ফলেও দুর্বলতা আসে।
হরিপদদা—এখানে শারীরিক দুর্বলতার কথা তো আসছে না।
বম্বে থেকে কয়েকজন দাদা এসে পৌঁছেছেন। প্রার্থনার পূর্বেই শ্রীশ্রীপিতৃদেব তাদের দেখেছেন। জিনিসপত্রাদি একপাশে রেখে তারা বসেছেন বড়নাটমণ্ডপে। এখনো তাদের প্রাতঃকৃত্যাদি হয় নাই। শ্রীশ্রীপিতৃদেব দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত নূতন বাথরুমে প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে নিতে বললেন । কিন্তু জানা গেল ঐ বাথরুমে জল নেই। তাই শ্রীশ্রীপিতৃদেব চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকেন কে ওদের জল এনে দেবে।
যজ্ঞেশ্বরদা (যাদব) ব্যবস্থা করতে উঠতে যাচ্ছিলেন।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব তা দেখে বললেন—তুই উঠে কি করবি? ঠাকুরবাড়ির দারোয়ান রামানন্দদাকে (সিং) বললেন—যা, দ্যাখ্ গা জল দিল কি-না। বম্বে থেকে আসছে—আমাদের সহানুভূতি থাকা দরকার।
রামানন্দদা বম্বের দাদাদের সঙ্গে নিয়ে বাথরুমের দিকে গেলেন।
বাণীর প্রসঙ্গ ধরে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—সকলেই শুনছে বাথরুমে জলের ব্যবস্থা করা দরকার, এখানে সবাই বসে মন দিয়ে যে পাঠ শুনছে তা-ও নয়, আছে অন্য চিন্তা। মনে করলাম করা দরকার কিন্তু করলাম না, neglect (তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য) করলাম— এ-ও দুর্বলতা । যখন কোনো কিছু করার সময় আমাকে তা’ করতে দেয় না, পরে সেজন্য নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। এমনি কত রকমের দুর্বলতা আছে।
গুরুকিংকরদা—এমনও লোক আছে বাবাকে বাবা বলে পরিচয় দেয় না এ-ও দুর্বলতা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—এর মানে? হয়তো সত্যিকার বাবা নয়, তাই বলে না। দুর্বলতার দরুন করা উচিত বিবেচনা করি, কিন্তু করি না, —মনে সন্দিগ্ধভাব। একটা কবিতা পড়েছিলাম—“পাছে লোকে কিছু বলে’. ..।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব নিজেই প্রশ্ন তুললেন—দুর্বলতাকে পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি বলছেন কেন ঠাকুর? স্বপ্নাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
স্বপ্না—দুর্বলতাই পাপ।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব— হ্যাঁ, কখন দুর্বলতা আসে? রিপু দ্বারা যখন আমরা আক্রান্ত হই তখন দুর্বলতা আসে। তখন মন অক্ষমতা প্রকাশ করে। কোনো একটা রিপু দ্বারা আক্রান্ত হলে বাকি রিপুগুলোও তখন চেপে ধরে। আমাদের সর্বপ্রথম দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। আর কোনো পয়েন্ট আছে?
হরিপদদা—ধর্ম্মরাজ্যে ঢোকা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব স্বপ্নাকে জিজ্ঞাসা করলেন—কেমন করে ধর্ম্মরাজ্যে ঢোকা যায়?
স্বপ্না—সদ্গুরুর দীক্ষা নিতে হবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যা, ঠিক বলেছ।
[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১০/২/৭৮ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ – পৃষ্ঠা ৫, ৬]