সত্যানুসরণে প্রাপ্ত বাণীটি হলো:
“দুর্ব্বল মন চিরকালই সন্দিগ্ধ, —তারা কখনই নির্ভর ক’রতে পারে না। বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে— তাই প্রায়ই রুগ্ন, কুটিল, ইন্দ্রিয়পরবশ হয়। তাদের নিকট সারাটা জীবন জ্বালাময়। শেষে অশান্তিতে সুখ-দুঃখ ডুবে যায়, —কি সুখ, কি দুঃখ ব’লতে পারে না; ব’ললে হয়ত বলে ‘বেশ’, তা’ও অশান্তি ; অবসাদে জীবন ক্ষয় হ’য়ে যায়।“
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব ধীরাকে আলোচনা করতে বললেন।
ধীরা—দুর্বল মন চিরকালই সন্দিগ্ধ, মানে—যার মন দুর্বল সে সব-সময় সন্দেহের চোখে সবকিছু দেখে থাকে। এরকম যারা, তারা হয় রুগ্ন, কুটিল ও ইন্দ্রিয়পরবশ। তাদের শরীর শুকনো দেখায়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—যোগীপুরুষ যারা, তাদের দেখলে মনে হবে শুকনো, কিন্তু সাংঘাতিক তেজ। রোগা মানে কি?
গুরুকিংকরদা—পলকা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ । আর রুগ্ন মানে? (ধীরাকে)
ধীরা—অসুস্থ শরীর।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মানে, রোজই কিছু-না-কিছু লেগেই থাকে। আজ পেট খারাপ, কাল মাথাধরা, পরশু মাজায় ব্যথা-এরকম। কুটিল মানে কী?
ধীরা—কুটবুদ্ধিসম্পন্ন।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—শঠ, অপরকে ঠকানোর মন সবসময়। সোজা মন নয় যার। ভাল জিনিসকেও খারাপ দেখে। (ক্ষিতীশ সেনগুপ্তের দিকে তাকিয়ে) কি মাস্টারমশাই, কুটিল মানে কী?
ক্ষিতীশদা—ভাল জিনিসকে যে ভাল চোখে দেখতে পারে না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—কুটিল লোকেরা ইন্দ্রিয়সর্বস্ব, কামক্রোধাদি ইন্দ্রিয় দ্বারা পরিচালিত। ভাল খাওয়া, ভাল পরা, বেশী ঘুমান, ইন্দ্রিয়পরায়ণ ব্যক্তিদের লক্ষণ। বেশী ঘুমানটাও ভাল না। আমাদের দেশের great man (মহান ব্যক্তি) যাঁরা তাঁরা কখনো দিনের বেলায় ঘুমাতেন না। অনেকে ডাক্তারের পরামর্শমত দুপুরে বিশ্রাম করে নানা কারণে। তাদের কথা অবশ্য আলাদা।
আজ বাণীর এই অংশটুকু আলোচনাতেই সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেল।
[ পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/ তাং-৩১-৫-৮০ ইং ]
প্রভাতদা (চক্রবর্তী) আলোচনা করার নির্দেশ পেয়ে পুনরায় বাণীটি পাঠ করে বললেন—দুর্বল মানে—শক্তিহীন—যে কোনকিছুতে আস্থা রাখতে পারে না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সন্দিগ্ধ মানে কি?
—দোদুল্যমান।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সন্দিগ্ধ মানে সন্দেহ করা।—নির্ভর করা মানে?
—নিঃশেষে ভরণ করা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—রুগ্ন মানে কি?—পলকা, হালকা নাকি?
—আজ্ঞে?
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আবার রুগ্ন মানে রোগযুক্ত। কিছু না কিছু লেগেই আছে।— কুটিল মানে কোন জিনিস সহজভাবে বোঝে না। হয়ত গুরুকিংকর কোন জিনিস আমায় দিল, ভাবলাম এটা দিল কেন? নিশ্চয়ই জিনিসটা বাসি। গুরুকিংকরকে জিজ্ঞেস করলাম —দেওঘর কোন্ দিক দিয়ে যাব? গুরুকিংকর বলল—এই দিক দিয়ে। তখন ভাবছি, নিশ্চয়ই কোন প্যাঁচ আছে—এদিকে বলার মধ্যে।—ইন্দ্রিয়পরবশ মানে?
প্রভাতদা—ইন্দ্রিয় যখন যা চায় তাই করে, ইন্দ্রিয়ের দাসানুদাস।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—দাসানুদাস মানে?
—ইন্দ্রিয়ের সেবা করে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বললে হয়তো বলে ‘বেশ’ মানে কি? কী বললে হয়তো বলে ‘বেশ আছি’? বেশ আছি বলছে কিন্তু অবসাদে জীবন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। —অবসাদ কখন আসে? —যে কর্মের মধ্য দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে পারা যায় না; শারীরিক, মানসিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারা যায় না, সে সব কর্ম করলে অবসাদ আসে। যা যা করলে শরীর-মন ভাল থাকে তা না করে যা যা করলে শক্তি হাস হয় তাই যে করে। অনেকেই আফিং খায়। এমনভাবে খায়, যার ফলে শক্তি হাস হয়। কেমন করে ব্যবহার করলে শক্তিবৃদ্ধি হবে তা জানে না —ইন্দ্রিয়ের বশেই সে চলে। তখন সে ক্ষয়ের পথে চলে।
[ পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/তাং-৩১-৫-৮০ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ – পৃষ্ঠা ১০, ১১]