ধীর হও, তাই ব’লে আলসে, দীর্ঘসূত্রী হ’য়ে প’ড় না। 

সত্যানুসরণ -এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

ধীর হও, তাই ব’লে আলসে, দীর্ঘসূত্রী হ’য়ে প’ড় না।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব স্বপ্নাকে প্রশ্ন করলেন—ধীর হওয়া কাকে বলে, আর আলসে্-দীর্ঘসূত্রীই বা কাকে বলে বল।

রানী (মুখার্জী) স্বপ্নার পাশেই বসে রয়েছে। স্বপ্নাকে চুপচাপ থাকতে দেখে বললেন—রানী পড়।

রানী—আমার মা আমায় একটা কাজ করতে বলল। সেই কাজটা আমি ধীর হয়ে করব। ধীর হয়ে করলে কাজ সুন্দর হবে, নিখুঁত হবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব— কিন্তু যখন তোমার মা তোমাকে কাজটা করতে বলছেন তখন হয়ত তুমি একটা কাজ করছ, তাহলে কেমন করে করবে? আবার তুমি ধীরে-ধীরে ক’রে হয়ত একঘন্টা লাগালে: কিন্তু এমনও তো হতে পারে একজন সবদিক নজর রেখে দশ মিনিটেই কাজটা সেরে ফেলল। তাছাড়া তোমার মা যখন তোমায় কাজ করতে বলছেন তখন তুমি অন্য কাজ করছ; তাই তুমি যদি বল “পরে করব” তাহলে এ-থেকে তুমি আলসে দীর্ঘসূত্রী কি-না বোঝা যায় কি-করে?

রানী নিরুত্তর থাকায় শ্রীশ্রীপিতৃদেব নিজেই বাণীটি বুঝিয়ে বললেন—আল্সে মানে কী?—বসে আছে তো বসেই আছে, কাজ করতে চায় না; মা বলছেন—এই কাজটা কর্‌, বসে আছিস্‌ কিজন্য? সে বলছে—পরে করব, পরে করব। অথচ খামাকা বসে আছে।. . . কাজ করার সময় চাঞ্চল্য থাকলে কাজের ক্ষতি হয়। ধীর হওয়ার অর্থ চঞ্চল না হয়ে, বিরক্তি প্রকাশ না করে কাজ করা—সুস্থির হয়ে কাজে মনোনিবেশ করা। আর যে কাজ করতে পরাঙ্মুখ সে-ই আলসে। দীর্ঘসূত্রী মানে কী?—সূত্র মানে তো সূতো। অনেক সময় দেখা যায় চিঠি লেখার আছে, কিংবা কিছুটা লিখেছি, বাকিটা লেখা হয়নি, অন্য কাজেও মন দিতে পারছি না; ওই যে আগের কাজটা (চিঠি লেখা) সারা হয়নি ও-ই আগাতে দেয় না। চিঠি লেখার আছে, কাজ পড়ে আছে অথচ যদি না লিখি তাহলে মনে একটা অশান্তি আসে। যখন কোন একটা কাজ সময়ে না ক’রে ভাবি একটু পরে করব, একটু পরে করব, সামান্য চিঠি তো কালকেই লেখা যাবে এইরকম ক’রে একটা কাজ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখার নাম দীর্ঘসূত্রীতা।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২১/১/৭৬ ]

ধৃতিবল্লভ বলল—আমি ধীর হব, তা বলে আস্তে আস্তে করে আলসে হয়ে যেন না পড়ি।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আল্‌সে হবে কখন? ধীরে ধীরেই তো কাজ করছি। ধীর তো হলাম—আল্‌সে হলাম কি করে?

ধৃতি—ধীর হলে আলসে দীর্ঘসূত্রী হয়ে যাবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প আছে না?

ধৃতি চুপ থাকলে বললেন—আর কে পড়েছে?

এবার সুখেন বলল—কোন কাজ আমি এমনভাবে ধীরে-সুস্থে করছি-যাতে খুব ভাল হয়। কিন্তু এমনই ধীরে ধীরে করব না, যাতে এক মাস লেগে যায়।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কালকে করব, আচ্ছা একটু পরেই করব, একটু বসে নিই—একটু বিশ্রাম করে নিই। এইভাবে যে কাজটা এক ঘন্টা লাগত—সেটা হয়তো ক’দিন লেগে গেল। তাই বলছিস তো?

সুখেন—আজ্ঞে হ্যাঁ।

[ পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/তাং-২৫/৬/৭৯ ইং ]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৭৯, ৮০]