ধৈৰ্য্য ধর, বিপদ কেটে যাবে।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

ধৈৰ্য্য ধর, বিপদ কেটে যাবে।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব হরিপদদাকে আলোচনা করতে বললেন।

হরিপদদা—ইষ্টের চরণে মন রেখে নিয়মশৃঙ্খলা সহকারে চলা।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব আরও সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন—ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি বিবেচনা করে, ইষ্টের উপর ভরসা রেখে বিপদের মোকাবিলা করা, ধৈর্য্য ধরে কি ক’রলে কি হয় তা ভেবে নিয়ে, যেমন বিপদ তেমনভাবে মোকাবিলা করা।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব এই প্রসঙ্গে গল্প বললেন, একবার পাবনায় ঘরে আগুন লেগে গেছে, খড়ের ঘর উপরের চালে আগুন, কাছে জল নেই। সবাই চিৎকার করছে আগুন আগুন বলে, আরও অযথা ছুটোছুটি করছে, আমি শুনে—গিয়েই দেখি অনেক পুড়ে গেছে ঘরের, সবাই বলছে রক্ষা করা যাবে না। হঠাৎ মাথায় কি বুদ্ধি এল—একদল ছেলে দেখে বললাম নে ধুলো, জলের মত করে আগুনের মুখে দে। এইভাবে দিতে আরম্ভ করলে—একদল লোক চোখ রাঙ্গিয়ে উঠল। পুনরায় বললাম নে—চালা, বন্ধ করিসনে। ‘এই হেট’ বলে এক ধমক দিয়ে, সবাই মিলে ধুলো দিয়ে আগুন নেভায়ে ফেললাম।

আর একবার—আনন্দবাজারে আগুন সাংঘাতিকভাবে লেগেছে। সবাই হই-হই করছে। আমি গিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দূর থেকে জল আনিয়ে দিতে লাগলাম, ফলে হ’ল কি, বেশ কিছুক্ষণ দেওয়ার পর আগুন নিভে গেল। হঠাৎ মাঝখানে দেখি ভীষণ আগুন। ভীষণ আগুন দেখে প্রতি প্রত্যেকের মা নিজের ছেলে নিয়ে ব্যস্ত, ছেলেকে ঘরে নিয়ে যাবে বলে, হঠাৎ দেখি আমার মাও আমাকে টানছেন—ঘরে চল। অনেক কষ্টে হাতে-পায়ে ধরে তবে মাকে নিরস্ত করে, আবার এসে যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে আগুন নিভে গেল।

এরপর প্রশ্ন করলেন পরমেশ্বরদা।—সব বিপদ কি ধৈর্য্য ধরলে কাটবে?

শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—হ্যাঁ! সব বিপদই ঠাকুরের দয়ায় কাটে। যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে চলা যায়। এবার নিজে প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিলেন। প্রশ্ন হল—বাঘের সামনে পড়লে কি করা যাবে? ‘বাবারে খেয়ে ফেলবে’ বলে না কেঁদে কাছে যদি কোন গাছ থাকে সেখানে আশ্রয় নিতে হবে নতুবা রাস্তা ছেড়ে একপাশে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে, মরতে যখন হবে লড়াই করে মরব এই মনোবল নিয়ে লড়াই করা। যদি কোন অস্ত্র কিংবা যাই পাই না কেন, মরার আগে শেষ চেষ্টা করা দরকার।

ছোট আর একটা উদাহরণ দিলেন শ্রীশ্রীপিতৃদেব। নৌকার মাঝিদের উপদেশ মত চলতে হয়। তা না করে নৌকা দুলছে বলে এদিক-ওদিক করলে এমনিতে ডুবে যাবে। তা না হলে মাঝি মন-প্রাণ দিয়ে নৌকা বাঁচাতে চেষ্টা করে ও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সক্ষম হয়।

[তাঁর সান্নিধ্যে/তাং-১৯/৩/৭৪ ইং]

ইলা সরকার আলোচনা করছে। ও বলল—ধৈর্য্য ধরলে বিপদ কেটে যাবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বিপদ কি?

—বই হারিয়েছে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বই হারালে কি ধরনের বিপদ?

—পড়ার অসুবিধা।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সে তো অসুবিধা হল, বিপদ কি?

—বাড়ি গেলে বাবা মারবে তাই ধৈর্য্য ধরে খুঁজলাম। আগের থেকে ব্যস্ত না হয়ে ধৈর্য্য ধরে সকলের কাছে খুঁজতে হবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বাঃ বাঃ খুব ভাল বলেছে। ঠিক আছে নাকি, কমল কি বলিস?

কমল—আজ্ঞে।

[পিতৃদেবের চরণপ্রান্তে/তাং-১৩/৮/৭৯ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১১৮ – ১১৯]