ধ্যান মানেই …. না।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

ধ্যান মানেই কোন-কিছু একটা চিন্তা নিয়ে লেগে থাকা। আর, তা-ই আমরা বোধ ক’রতে পারি—যা-ই আমাদের লেগে-থাকাটার বিক্ষেপ এনে দেয়, কিন্তু ভেঙ্গে দিতে পারে না।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

নির্দেশ পেয়ে ব্রজদা বাণীটির আলোচনা শুরু করলেন।

—দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন অন্যান্য বিষয় থেকে মন ছাড়িয়ে নিয়ে একটা বিষয়ে মন স্থির করি তখনই হয় ধ্যান। আমি যে বিষয় নিয়ে একনিবিষ্ট হলাম সেই বিষয়টা অন্য একটা চিন্তা এসে যদি disturb করে কিন্তু একেবারেই নষ্ট না করে তাহলে আমি বোধ করতে পারি ঐ বিষয়টা নিয়ে লেগে আছি।

প্রশ্ন তুললেন অন্নদাদা—একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছি সেটাই হল ধ্যান। এটা বোঝা গেল। কিন্তু যেটা নিয়ে চিন্তা করছি সেইটা বোধ করব, না যা আমাকে disturb করছে তা-ই বোধ করব? যেমন, আমি যদি একটা অঙ্ক কষতে বসেছি—আমাকে কেউ ডাক দিল। এখানে …..

অন্নদার প্রশ্ন বুঝতে পেরে শ্রীশ্রীপিতৃদেব উত্তর দিলেন—যদি টদি নিয়ে কথা কি! কোন একটা বিষয় নিয়ে লেগে আছি তো! কোন কিছু ঐ থেকে আমাকে disturb করল । ঐ disturbance-এ আমার ধ্যান ভেঙে গেল। এক্ষেত্রে আর ধ্যান হল কই? আর ঐ disturbance-এ আমার ধ্যান না ভাঙতে পারলে ঠিকমত ধ্যান চলছে বুঝতে হবে।

গুরুকিংকরদা (পান্ডে)—আজ্ঞে, এরকম হয় না—তা-ই আমরা বোধ করতে পারি যাই আমাদের লেগে থাকাটার বিক্ষেপ এনে দেয়—অর্থাৎ বিক্ষেপের বোধ আমরা করতে পারি যখন আমরা ঐ একাগ্র চিন্তা বা ধ্যান থেকে disturbed বা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি।

ননীদা (চক্রবর্তী)—ধ্যানের সময় ধ্যানের বিষয়ই আমার চেতনার মধ্যে থাকে। বিক্ষেপ বা বিক্ষেপের বিষয় সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা থাকে না। কিন্তু ধ্যান করতে-করতে যখন বিক্ষেপ আসে তখন আমরা ঐ ধ্যানের বিষয় থেকেই বিক্ষিপ্ত হ’য়ে পড়ি—কিন্তু একেবারেই ঐ বিষয় (ধ্যানের বিষয়) থেকে সরে যায় না। যেমন একটা গাছকে যখন দেখি তখন তার ডালপালা, রূপ, রঙ—এসব দেখি, অন্য কোন কিছু দেখি না। এমনকি তখন এটা একটা আমগাছ, কাঠালগাছ নয়—এবোধও থাকে না। এই অবস্থা হল ধ্যান। আর আমি যখন আমগাছকে আমগাছ বলে জানতে পারি তখন ঐ দেখা থেকে কিছু সরে গেছি বুঝতে হবে।

ননীদার উত্তরে গুরুকিংকরদা আবার প্রশ্ন তোলেন। বাণীটির ব্যাখ্যা নিয়ে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে দেখে শ্রীশ্রীপিতৃদেব গুরুকিংকরদাকে লক্ষ্য করে বললেন—ঠাকুরের বাণী সহজ করে বুঝতে হয়।

তা-ই আমরা বোধ করতে পারি—এ-কথার অর্থ নিয়ে এত বাকবিতন্ডার কী আছে! এর আগের লাইনে কী বলা আছে? ধ্যান কা’কে বলে তাই বলা আছে। এখানে বোধটা হল কিসের—ধ্যানের বোধ না বিক্ষেপের বোধ? এখানে ধ্যানের বোধই বলা হচ্ছে। ধ্যান হচ্ছে কিনা তা-ই আমরা বুঝতে পারি কী করে সেকথাই এখানে ঠাকুর বলছেন।

উদাহরণযোগে সহজ করে তিনি পুনরায় বললেন—ধর, তুমি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছ—ধ্যান করছ, তোমাকে মশা কামড়াচ্ছে, তোমার হাত উঠছে মশা তাড়াতে কিন্তু তোমার ধ্যান ঠিক চলছে, যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করছ তাই করছ—ঐ চিন্তা ভেঙে যাচ্ছে না। এটাই হল ধ্যান। মশার কামড়ের একটা বোধ থাকছে, কিন্তু তাতে তোমার ধ্যান ভেঙে যাচ্ছে না।

আরও ঊর্ধ্বে উঠলে সে বোধও থাকে না। এই যেমন, আমরা কথা বলছি, আমার গায়ে বাতাস লাগছে কিন্তু disturb বোধ করছি না, অনুভবও করছি না। বাতাস লাগছে ঠিকই কিন্তু আমি যখন তোমার সাথে কথা বলছি তখন তা (বাতাস লাগার বোধ) আমার অনুভূতির মধ্যে নেই।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১৫/৩/৭৯ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩১৭]