সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
নাম-যশ ইত্যাদির আশায় যদি তোমার মন ভক্তের আচরণ করে, তা’ হ’লে তো মনে কপটতা লুকিয়ে রয়েছে, —তৎক্ষণাৎ তাকে মেরে বের ক’রে দাও। তবেই মঙ্গল, নতুবা সবই পণ্ড হবে।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব বাণীটি মুরলীকে (সাউ) আলোচনা করতে বললেন।
মুরলী—আমি ঠাকুরবাড়ি আসি, ভাবি লোকে ভাববে ঠাকুরের ভক্ত, বড়দা ভালবাসবে, নাম হবে—এরকমভাবে চলা কপটতা। এভাবে চললে সব পণ্ড হয়ে যাবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ক্যান্, সব পণ্ড হবে ক্যান্?
মুরলী—আমি তো প্রকৃত ভক্ত নই।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—ঠিক বলেছ—আমি তো লোকদেখানোর জন্য করছি। যে-রকম করলে প্রকৃত উন্নতি হয় সেরকম করছি না। একদিন লোকে ধরে ফেলবে ভন্ডামি। ঠাকুরের অনুশাসনবাদ মেনে চললে কল্যাণ হয়, মঙ্গল হয়—জীবনবৃদ্ধির পথে আগাতে থাকে। আর লোকদেখানি ব্যাপার থাকলে, ভণ্ডামি করে চললে জীবনবৃদ্ধি হয় না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার বোধিব্যাসকে (ভট্টাচার্য) বাণীটি আলোচনা করতে নির্দেশ দিলেন।
বোধিব্যাস—কিছু পাওয়ার আশা করে করছি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—পাওয়ার আশা করে কী করছ?
বোধিব্যাস—ভক্তের আচরণ করছি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কী কী করলে ভক্তের আচরণ হয়? সপ্তর্ষি বল ভক্তের আচরণ কথাটার মানে কী?
সপ্তর্ষি—ঠাকুর যা’-যা’ বলেছেন সেইমত আচরণ করা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ভক্ত যা করে সেই ভাব দেখান।
‘ভক্তের আচরণ কাকে বলে?’ এই প্রশ্নের উত্তরে তীর্য বলল—নাম, ধ্যান, কীর্তন, প্রার্থনা এইসব করা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ভক্তেরা মনপ্রাণ দিয়ে করে, আর কপটরা লোকদেখানোর জন্য করে। ভক্তেরা নির্জনে করে, আর কপটরা লোকদেখানোর জন্য প্রকাশ্যে করে। ভক্তেরা যজন করে, যাজন করে, ঠাকুরের গুণ-কীর্তন করে। যাজনের মধ্যে কি ভণ্ডামি করা যায়? নিজের স্বার্থ যেখানে ভণ্ড সেখানে যাজন করে। ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য করে না। যাজনের মধ্যেও কপটতার আচরণ করে। তলে-তলে ইচ্ছা থাকে লোকে জানবে, নাম হবে। যারা প্রকৃত ভক্ত তারা প্রসাদ কণিকামাত্র নেয়; যারা প্রকৃত নয় তারা বলে ‘আরেকটু দেন’ ‘আরেকটু দেন’। এরই নাম কপটতা।
এই কপটতা নিয়ে ভণ্ডামি নিয়ে যদি চলতে থাকি তাহলে জীবনবৃদ্ধি হবে না। তাই কপটতাকে রাখা চলবে না, প্রকৃত ভক্ত হতে হবে—জীবনবৃদ্ধির পথ ধরে চলতে গেলে। কপটতা নিয়ে চললে জীবনবৃদ্ধির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৯/৮/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৫৩ – ২৫৪]