সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
নিজের মৃত্যু যদি অপছন্দ কর, তবে কখনও কাউকে ‘মর’ ব’ল না।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
আদেশ পেয়ে শান্তদীপা (রায়চৌধুরী) আলোচনা শুরু করল—আমার যদি মরতে ইচ্ছা না হয় তাহ’লে কাউকে ‘মর’ বলব না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তুমি মরতে পছন্দ কর নাকি?
শান্তদীপা—না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তাহ’লে? ‘মর’ কেউ বলে নাকি?
শান্তদীপা—বলে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কখন বলে?
শান্তদীপা—ঝগড়ার সময়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তুমিও বল নাকি?
শান্তদীপা—আজ্ঞে হ্যাঁ।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কেন বল?
শান্তদীপা—ঝগড়ার সময় রাগের মাথায় বলি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ঠাকুর বলছেন নিজের মৃত্যু যখন অপছন্দ কর তখন কাউকে ‘মর’ বলো না। কোন অবস্থায়ই না। আমাদের দেশে অনেক সময় বাবা-মাও ছেলেপুলেদের প্রতি রাগের রশে ‘মর্-মর্’ ‘গোল্লায় যা’ ইত্যাদি অপ্রিয় কথা বলে থাকে। কারণ, আমাদের সত্তাধর্মই হচ্ছে অস্তিত্বকে রক্ষা করে বৃদ্ধির পথে চলা।
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীপিতৃদেব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতার উল্লেখ করলেন।
বিধবা মোক্ষদা পুণ্যার্থীদের সাথে গঙ্গাসাগর মেলায় যাবে। তার একমাত্র পুত্র রাখাল যাত্রী-নৌকায় আগে-ভাগে এসে বসেছে—নাছোড়বান্দা—সেও যাবে। শিশুর বায়নায় মা অতিষ্ঠ হয়ে রাগান্বিত স্বরে বলেছিল—’চল্ তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে’। মেলাশেষে ফেরার পথে নৌকা প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে। নৌকাড়ুবির আশঙ্কায় যাত্রীরা মাঝিদের কথামত যার যা মানত ছিল অর্থ-বস্তু ইত্যাদি নদীগর্ভে নিক্ষেপ করে। প্রবল অনিচ্ছাসত্বেও শেষপর্যন্ত রাখালকে নদীগর্ভে বিসর্জন দিয়ে আসতে হয়েছিল মোক্ষদাকে।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/ তাং-৮/২/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৯৫, ৯৬]