সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
“যদি মানুষ হও তো নিজের দুঃখে হাস, আর পরের দুঃখে কাঁদ।“
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ঠাকুর বলছেন-‘যদি মানুষ হও’। আমরা সবাই তো মানুষ আছি। আসলে তা নয়, যদি প্রকৃত মানুষ হতে চাই, তা হলে কি করতে হবে। ঠাকুর বলছেন—অপরের দুঃখে সমব্যথী হয়ে বেদনা অনুভব করে তার ব্যথা নিরাকরণের জন্য যা’ যা’ করা লাগে, তা করা লাগবে। আর নিজের ওপর আঘাত, দুঃখ এলে তা সহ্য করা লাগে। ভাবতে হয় পরমপিতার ইচ্ছায় হয়েছে, পরমপিতা সারায়ে দেবেন। অবশ্য ইষ্ট যার জীবনে যথাসর্বস্ব, তিনি এ কথা বলতে পারেন, নতুবা এমন কথা বলা ঠিক নয়। বললে ভণ্ডামি করা হবে। অকপট ইষ্টনিষ্ঠ হওয়া দরকার। নতুবা ফল ভাল হয় না।
কোনও মানুষের যদি ফোঁড়া হয় তা তো যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু ঠাকুর বলছেন—বন্ধুকে দুঃখ না দিতে । তা হলে কি করব। আজকাল অনেক ওষুধ বেরিয়েছে তা দিয়ে অজ্ঞান করে তারপর ফোঁড়া কাটা দরকার।
আর একটা উদাহরণ। ভাইয়ের জ্বর হয়েছে। ভাত খাওয়ার জন্য কাঁদছে। তাকে ভাত খেতে না দিলে তাকে তো দুঃখ দেওয়া হচ্ছে। হ্যাঁ, তা তো দেওয়া হচ্ছে। এখানে ভাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে—জ্বরের মধ্যে ভাত খেলে জ্বর আরও বাড়বে, কষ্টও বাড়বে। যদি তাড়াতাড়ি ভাল হতে চাও আর ভাত খেতে চাও, তা হলে আরও দু-একদিন কষ্ট করা লাগবে। নিয়মমত ওষুধ খেতে হবে। এইভাবে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় ভাই বুঝবে।
হাত দেখে হঠাৎ এক ব্যক্তি বললে তোমার রাজলক্ষণ দেখতে পাই। পঞ্চমুখে প্রশংসা করছে। তার উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে ভাববিহ্বল হয়ে পড়লাম। সুযোগ বুঝে কিছু সোনা অল্প দামে দিতে চায়। ঘটনা এমনই মোড় নিল কিছু বোঝার আগে ঐ ছদ্মবেশী কাজ সেরে কেটে পড়ে। পরে ঐ সোনা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে নকল সোনা, টাকা তো গেলই, যাকে বিক্রি করেছিলাম ঐ ব্যক্তি চিটিংবাজ বলে থানায় ডায়েরি করে, তখন জেল খাটাই হল শেষ পরিণতি । নিজের অদূরদর্শিতার জন্য হাসিমুখে “শাস্তি” মাথায় তুলে নিলাম।
[ তাঁর সান্নিধ্যে/তাং-১৩/৪/৭৭ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৯৪, ৯৫]