সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
বিশ্বাস যেমনতর, ভক্তি তেমনতরভাবে আসবে এবং জ্ঞানও তদনুযায়ী।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
বাণীটির আলোচনা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন, বিশ্বাসের খাকতি থাকলে সব গোলমাল। ‘গভীর বিশ্বাসে সবই হ’তে পারে’—ঠাকুর বলেছেন।
ঠাকুর আমাদের বলেছেন ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠাপন্ন হ’য়ে চলতে। সব সময় তাঁর স্বার্থ লক্ষ্য ক’রে আমাদের প্রত্যেকের চলা উচিত। সবই তাঁর, এই ভাব মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা—এটাই সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণ। এর চেয়ে সঠিক বোধ আর কিছু নেই। বাইরে প্রচার করার এতে কিছু নেই। মনে-মনে বিশ্বাস করা চাই।
উপস্থিত সবাই একদৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে। গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে শ্রীশ্রীপিতৃদেব ব’লে চলেছেন—জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে তফাৎ কিছু নেই। একই নদীর শ্রোত ব’য়ে চলেছে। মাঝখানে একটা কাঠ বা বাঁশ দিয়ে রাখলাম। বাঁশ দিয়ে একই স্রোতের মধ্যে প্রভেদ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, এ আলাদা ও আলাদা। এই বাঁশ বা কাঠের জন্যেই এ-রকম মনে হচ্ছে। বাঁশটাই বাধা। এই বাধাই মায়া। যিনি পরমাত্মা তিনিই জীবের মধ্যে জীবাত্মা। মায়ার জন্যেই আমরা বুঝতে পারি না। কিভাবে জীবের মায়া কেটে যায়—শ্যামসুন্দর প্রশ্ন করল।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আত্মসমর্পণ করলেই মায়া কেটে যায়। আবার মায়া কেটে যাওয়া মানেই আত্মসমর্পণ করা।
—কোনটা আগে—আত্মসমর্পণ করা, না মায়া কেটে যাওয়া?
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মায়া কেটে গেলেও আত্মসমর্পণ আসে। কিন্তু সেটা সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক জন্ম লাগতে পারে। কিন্তু আত্মসমর্পণ তাঁর জন্য, করলেই হয়। করতে-করতে আত্মসমর্পণ আসে। ইষ্টকর্ম করতে-করতে আসে। এটা যেমন সহজ তেমনি কঠিন। সহজ কেন?—চোখ, কান, হাত, পা, স্ত্রী, পুত্র—কেউ আমার বশে নেই। সেজন্য, আমার সব—এ-বোধ না রেখে, তাঁরই সব—এ-বোধ হ’লেই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ আসে।
—আজ্ঞে, আত্মসমর্পণ কি ধীরে-ধীরে তাঁর জন্য করার মধ্য-দিয়ে হয়, নাকি একবারেই হ’তে পারে?
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আত্মসমর্পণ একবারেই হ’তে পারে। সহজেই হ’তে পারে। তাঁর জন্যই সব—এ-ভাব এলেই হ’তে পারে।
[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৭/১০/৭৩ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২১৮]