সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
ভক্তই প্রকৃত জ্ঞানী, ভক্তিবিহীন জ্ঞান বাচকজ্ঞান মাত্র।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আজ দীপ্তসুন্দর আলোচনা কর।
দীপ্তসুন্দর বাণীটি পুনরায় একবার পাঠ করতেই শ্রীশ্রীপিতৃদেব জিজ্ঞাসা করলেন—বাচক জ্ঞান কী?
দীপ্তসুন্দর—যে জ্ঞান ভাল জ্ঞান নয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব তাঁর আসনের এক কোণায় রাখা বাংলা অভিধান নিয়ে বাচক শব্দটির অর্থ দেখলেন, তারপর তিনি দীপ্তসুন্দরের দিকে তাকিয়ে বললেন—Dictionary (অভিধান) দেখতে জান?
দীপ্তসুন্দর—আজ্ঞে।
খোলা অভিধানটি দীপ্তসুন্দরকে দেবার জন্য তিনি নিত্যানন্দদার (মণ্ডল) হাতে দিলেন।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তোমার বাঁদিকের পাতার ডানদিকের কলামে আছে। খুঁজে দেখ।
দীপ্তসুন্দর—পেয়েছি।
—কী আছে, পড়।
দীপ্তসুন্দর পাঠ করল—কথক, বোধক, পাঠক।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বাচক মানে কথক। তাহ’লে বাচক জ্ঞান মানে কথার জ্ঞান, কাজের না।
—আজ্ঞে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব পুনরায় প্রশ্ন করেন—ভক্তই প্রকৃত জ্ঞানী। প্রকৃত মানে কী?
দীপ্তসুন্দর—ঠিক-ঠিক।
—ভক্তিবিহীন জ্ঞান মানে কী?
—যার ভক্তি নেই, অথচ জ্ঞান আছে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব বুঝিয়ে বললেন—সেই জ্ঞান কীরকম?—না বাচক জ্ঞান। বাচক জ্ঞান মানে কথার জ্ঞান। বাচক মানে কথক। কথক জ্ঞান মানে যে জ্ঞান শুধু কথায়-কথায়, অনুভবের মধ্যে নাই। অনুভব থাকলে তা’ স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে ফুটে ওঠে।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/ তাং-৩০/৬/৭৬ ইং ]
শ্রীশ্রীপিতৃদেব বাচকজ্ঞানের কথা বলতে গিয়ে তোতাপুরী ও নিগমানন্দ সরস্বতীর ঘটনা উল্লেখ ক’রে বললেন—তোতাপুরীর যখন ভক্তি এল তখন প্রকৃত জ্ঞান হ’ল। নিগমানন্দের কাহিনীও পড়েছি। অনেকের কাছে গিয়েছেন, অনেক গুরু ধরেছেন। Last (শেষের) গুরু বললেন, তুমি এবার ভক্তিসাধনা কর। ……… খুব বড় সাধক ছিলেন নিগমানন্দ সরস্বতী।
ভক্তির সাথে জ্ঞানের সম্পর্ক অতি নিবিড়।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৭/১০/৭৩ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭]