মিলনের আকুলতাকে …. না।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

মিলনের আকুলতাকে কিছুতেই ত্যাগ ক’রো না, তা’ হ’লে বিরহের ব্যথা মধুর হবে না—আর, দুঃখের ভিতর শান্তিকে অনুভব ক’রতে পারবে না।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব শুভাশিসকে (চ্যাটার্জী) আলোচনা করতে নির্দেশ দিলেন।

শুভাশিসকে ইতস্ততঃ করতে দেখে শ্রীশ্রীপিতৃদেব জিজ্ঞাসা করলেন—আকুলতা মানে?

শুভাশিস—আগ্রহ।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—খুব আগ্রহকে আকুলতা বলে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন মিলনের আকুলতাকে ত্যাগ ক’রো না। বিরহ মানে কী?

শুভাশিস—ছেড়ে যাওয়া।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ছেড়ে থাকা। যখন দেখা হয় না, তখন বিরহ। আসার খুব ইচ্ছা, কিন্তু আসতে পারি না। ছেড়ে থাকার মধ্যে কষ্ট আছে, ব্যথা আছে। মিলনের আকুলতা মানে কাছে আসার আগ্রহ। এই আগ্রহ যদি তীব্র হয়, তাহলে আনন্দ থাকবে। তুমি কলকাতায় আছ, ঠাকুর দেওঘরে আছেন। ঠাকুরের কাছে তোমার আসার খুব আগ্রহ। একে বলে মিলনের আগ্রহ। এত আগ্রহ, কিন্তু আসার সুযোগ নেই। তাতে কষ্ট আছে, ব্যথা আছে। একে বলে বিরহ। কাছে আসার যে আগ্রহ যে আকাঙ্ক্ষা এতেই শান্তি। আমি চাচ্ছি ঠাকুরের কাছে থাকতে, তাঁর জন্য মন কাঁদছে, এতেই আনন্দ, এতেই শান্তি। কাছে আসার খুব আগ্রহ আছে বলেই আনন্দ ও শান্তি আছে।

ঠাকুরকে ভালবাসি, তাঁকে একান্ত আপন করে নিয়েছি বলেই তাঁকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়। আমি আগে হয়ত মাছ খেতাম, যেই জানলাম ঠাকুর মাছ খাওয়া পছন্দ করেন না, অমনি মাছ ছেড়ে ছিলাম।

সতীশদার এক প্রশ্নের উত্তরে সতীশদার দিকে তাকিয়ে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—স্ত্রী-পুত্র ছেড়ে হয়ত বম্বেতে তোকে থাকতে হচ্ছে—তাদের জন্য ব্যথা অনুভব করছিস। স্ত্রী চিঠি লিখল, পড়ে আনন্দ পাচ্ছিস্‌। তোর চিঠি পড়ে সেও আনন্দ পাচ্ছে। পূজায় ছুটি আছে। ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া হবে। তাই ছুটি যত কাছে আসছে তত আনন্দ হচ্ছে। ছুটি পড়তেই বাড়ির জন্য বেরিয়ে পড়লি, সেদিন আনন্দ বেড়ে গেল। বাড়ির নিকটবর্তী রেল-স্টেশনে পৌঁছে গেছিস আনন্দ আরও বেড়ে গেল স্ত্রী- পুত্রের প্রতি আমাদের টান থাকেই। এই ভালবাসায় আমাদের বৃদ্ধি নাই। কিন্তু ইষ্ট বা গুরুর প্রতি অনুরাগে, আমাদের উদগতি হয়। মদ-মাংস যা-ই খাও, আর বেশ্যাসক্তই হও যখনই তাঁকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসলে তখনই তাঁর কাছে পৌঁছে গেলে—ঐ প্রেমের আগুনে যত পাপ-তাপ সব ধুয়ে-মুছে যাবে।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১/১১/৭৬ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৯৯]