যদি মুগ্ধ ক’রতে …. হও।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

যদি মুগ্ধ ক’রতে চাও, তবে নিজে সম্পূর্ণভাবে মুগ্ধ হও।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব প্রদীপকে আলোচনা করতে বললেন।

প্রদীপ—মুগ্ধ মানে বিভোর। যদি আমি অন্যকে বিভোর করতে চাই তবে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিভোর হ’তে হবে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মুগ্ধ মানে মনোহর, বিমোহিত; ইংরাজীতে যাকে ‘charmed’ বলে। মোহিত, বিভোর মানে কী?

প্রদীপ চুপ ক’রে আছে দেখে তিনি বললেন—বিভোর মানে ভরপুর হওয়া। এখানে তা’ নয়। ‘Charm’,-এর মধ্যে আকর্ষণ করা আছে। তাহ’লে কী হ’ল—বল।

প্রদীপ—যদি অন্যকে মুগ্ধ করতে চাই তবে আগে নিজেকে মুগ্ধ হ’তে হয়।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কেমন ক’রে?

—একজন হয়তো মাটির পুতুল তৈরি করছে। তা’ দেখে আমি মুগ্ধ হ’লাম। পরে আমি ও-রকম একটা পুতুল তৈরি করলাম। এতে অন্যে মুগ্ধ হ’ল।

—তুমি যে মাটির পুতুল দেখে সম্পূর্ণভাবে মুগ্ধ হ’লে সেটা বোঝা যাবে কেমন ক’রে?

প্রদীপকে নিরুত্তর থাকতে দেখে তিনি বললেন—এমন লোক আছে যে গান গাইতে পারে না, কিন্তু অন্যের গান শুনে মুগ্ধ হ’য়ে যায়। কেউ মাটির পাত্র তৈরি করল। দেখে মুগ্ধ হ’য়ে গেলাম। কিন্তু ওটা তৈরি করতে আগ্রহী হলাম না। অপরকে মুগ্ধ করানো আমার উদ্দেশ্য নয়। এ-রকম হয় না? কি প্রদীপ, কথা বলছ না যে।

প্রদীপ—আজ্ঞে, তাই।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মুগ্ধ হওয়া যায় কী ক’রে? মুগ্ধ হওয়া যায় অনুভূতির দ্বারা। এমন একটা ওরকম ভাবের description (বর্ণনা) দিই,— হয়তো ঠিকমত দিতে পারি না, তবু ঐ ভাবের description-এ অন্যে charmed (মুগ্ধ) হয়। এই যেমন, ঠাকুরের ভাবে মুগ্ধ হই তবে ঐ ভাবের description হয়তো ঠিক দিতে পারি না; তবু তাঁর কথা শুনে মানুষ মোহিত হয়, charmed হয়। গোড়ায় প্রকৃতভাবে নিজেকে মুগ্ধ হ’তে হবে। কি, ঠিকমত বুঝতে পারছো তো!

প্রদীপ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। এবার একে-একে তিনি ধৃতিসুন্দর ও ধৃতিবল্লভকে জিজ্ঞাসা করলেন এ বাণীটির অর্থ ওরা শ্রীশ্রীপিতৃদেবের ব্যাখ্যামত বুঝিয়ে বলতেই তিনি মেয়েদের নির্দেশ করলেন বলতে। মেয়েরাও ঠিক-ঠিক ব্যাখ্যা করল।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৪/১০/৭৬ ইং ]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৮৯]