সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যদি সুন্দর হ’তে ইচ্ছা থাকে, তবে বিশ্রীতেও সুন্দর দেখ।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সপ্তর্ষিকে আলোচনা করতে বললেন।
সপ্তর্ষি—আমার যদি সুন্দর হ’তে ইচ্ছা থাকে তবে যে দেখতে খারাপ তাকেও সুন্দর দেখব।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—একটা লোক দেখতে খুব বিশ্রী, তাকে কেমন ক’রে সুন্দর দেখব?
সপ্তর্ষি চুপ ক’রে আছে দেখে তিনি মুরলীকে জিজ্ঞাসা করলেন।
মুরলী—কোন ছেলে পড়াশুনায় ভাল, কিন্তু অন্য একটা কাজে কাঁচা, তাকে যদি কেউ বলে—’ও খারাপ ছেলে’ তখন আমি বলব—’না, ও তো পড়াশুনায় ভাল।’ আমি ওর ভাল গুণটাই দেখব।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—তাহলে কী দাঁড়াল সুন্দর কী? সুন্দর কাকে বলে?
কেউ কিছু বলছে না দেখে তিনি পুনরায় বললেন—সুন্দর মানে মনোহর, যা মনকে হরণ করে, আকৃষ্ট করে। ঠাকুর বলেছেন, যদি সুন্দর হ’তে ইচ্ছা করে তবে বিশ্রীতেও সুন্দর দেখ, বিশ্রী মানে কী? বিশ্রী মানে যার সৌন্দর্য্য নাই—যা মনকে সহজে আকৃষ্ট করে না।
বিশ্রীতেও সুন্দর দেখব কেমন করে? পরমপিতা কোন জিনিসই সম্পূর্ণ খারাপ সৃষ্টি করেননি। যে কোন জিনিসের মধ্যে কিছু না কিছু ভাল থাকেই। আমাদের ভালটাই দেখতে হবে। কারও ধর, চেহারা খারাপ, কিন্তু তার ভিতর এমন গুণ আছে যা সচরাচর অন্য মানুষের মধ্যে দেখা যায় না, সে হয়ত পরের দুঃখ দেখলে চুপ করে বসে থাকতে পারে না, ছুটে যায়—পরোপকার করাই তার স্বভাবজ ধর্ম।
কারও হয়ত নাক খারাপ, চোখ ভাল। কারও চোখ খারাপ, নাক ভাল। কারও দাত খুব সুন্দর—এরকম আর কি! কেউ হয়ত লেখাপড়ায় ভাল নয়, কিন্তু ভাল গাইতে পারে। আবার দেখা যায় কেউ হয়ত ভীষণ দুষ্টু কিন্তু যখন যা করে sincerely (নিষ্ঠাসহকারে) করে, খারাপ কিছু করলেও তা অকপটে স্বীকার করে। ঠাকুর আমাদের প্রত্যেকের ভিতর ভালটাই দেখার কথা বলেছেন, আবার এমনও হ’তে পারে—আমার কাছে মনে হচ্ছে ঐ লোকটা খারাপ, বদ্-মেজাজী কিন্তু ভাল ক’রে জানলে বোঝা যাবে সে আসলে তা’ না, তার যে গুণের অভাব আছে বলে মনে করছি হয়ত বাস্তবিকই সে তেমন নয়—(দাদাদের পানে তাকিয়ে) এরকম হয় না?
অনেকেই একবাক্যে উত্তর দিলেন—আজ্ঞে হ্যাঁ, অনেক সময় এরকম হয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—এ-বিষয়েও নজর রেখে চলতে হবে।
এবার তিনি তীর্যকে জিজ্ঞাসা করলেন—বিশ্রীতে সুন্দর কেমন করে দেখব?
তীর্য—একজন দেখতে খারাপ কিন্তু তার একটা ভাল গুণ আছে। আমি ওই ভাল গুণটাই দেখব।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কিছু না কিছু ভাল গুণ থাকবেই থাকবে। সেটা যদি খুঁজে বার করি, সেটা যদি দেখি তাহলে বলব—না, লোকটা ভালই!
সতীশদা—এমন কেউ নাই যার কোন গুণ নাই।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, হয়ত আমার চোখে ধরা পড়ছে না, সেজন্য কারও খারাপ দেখতে হয় না। ধর, একটা মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর, একটা ছেলে দেখতে খুব সুন্দর; হয়ত কিছুদিন পর বসন্ত রোগে ভুগে ছেলেটির চেহারা বিশ্রী হয়ে গেল, কিংবা মেয়েটির এ রোগে ভোগার জন্য আর বিয়েই হ’ল না—এরকম কত কী হয়! কিন্তু তার কল্যাণ চিন্তা করলে ওসব চোখেই পড়ে না। কারও সৌন্দর্য্য দেখতে হ’লে তার মঙ্গল বা কল্যাণ চিন্তা করতে হয়। এর চেয়ে সৌন্দর্য্য দেখার আর ভাল উপায় আছে নাকি? আর কোন উপায় নাই। সেজন্য পরমপিতার কাছে তার মঙ্গল প্রার্থনা করতে হয়, নিজেও তার মঙ্গল চিন্তা করতে হয়।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৪/১০/৭৬ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৮৯-২৯০]