সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যাঁর মন সৎ বা একাসক্তিতে পূর্ণ—তিনি সৎ বা সতী।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
প্রিয়নাথদা (বোস)—সৎমানে ‘এক’-এর ভক্ত। এক কথায় বহুতে আসক্ত নয়।
শ্রীশ্রীবড়দা—বহু মানে একাধিক নয়। শিব, দুর্গা, কালী, নারায়ণ যার কাছে সেটা সৎ। সর্বোপরি নারায়ণ। কথা হচ্ছে সৎ-এর উপর একাসক্তি রাখতে হবে। সৎ-এর উপর একই টান। যিনি সৎ-এর মূর্ত্ত প্রতীক, তাঁর উপরই টান।
সতীশদা—এককে ধরলাম, ভিন্নমুখী টান যদি হয়?
শ্রীকন্ঠদা—তার মানে একের উপর টান নেই।
শ্রীশ্রীবড়দা—আমরা মনে করি অস্তিবৃদ্ধির মূর্ত্ত প্রতীক তিনি। তিনি পুরুষোত্তম। তিনি সদগুরু, তাঁর উপর টান। যদি এমন হয়, যার উপর টান তিনি সৎ নন?
শ্রীকন্ঠদা—তা’হলে তিনি অসৎ।
শ্রীশ্রীবড়দা—কোন মেয়ের বিয়ে হয়েছে, তার স্বামী মাতাল, বেশ্যাসক্ত। তার উপর স্ত্রীর টান থাকলে কি অসতী হবে? আমার মতে সে পতিব্রতা। ধর, মেরী মেকডোলিন, আবার অহল্যা, দ্রৌপদী এঁরা পঞ্চসতী।
অজিতদা—অহল্যা কি করে সতী হলেন?
শ্রীশ্রীবড়দা—স্বামীর (স্বামী গৌতম) বেশ ধরে ইন্দ্র এল, অহল্যা তাকে গ্রহণ করলেন। তাতে পতিত হলেন। শোকে পাষাণ হয়ে গেলেন। শেষে শ্রীরামচন্দ্রের পাদস্পর্শে উদ্ধার হলেন। শ্রীরামচন্দ্রের চরণম্পর্শে অর্থাৎ চলনস্পর্শে তাঁর সব মালিন্য দূরীভূত হল। আবার স্বামীও তাঁকে গ্রহণ করলেন।
অজিতদা—কারও ঈশ্বরপ্রেম না থাকলে শুধু পতিভক্তি কি করবে?
শ্রীশ্রীবড়দা—আবার এরকমও আছে। সতী নারী স্বামী সেবা করছেন। কৌশিক মুনি এসে বাইরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চাইলেন। মুনির মাথায় বক মলত্যাগ করল। তিনি ভস্ম করলেন সেই বককে। ভিক্ষা চাইবার সময় মা-টি বললেন আপনি একটু অপেক্ষা করুন। স্বামী সেবা করছি। তখন মুনি তাকেও ভস্ম করতে চাইলে তিনি বললেন আমি নারী। বক নই যে ভস্ম হব। তখন মুনি জানতে চাইলেন—কেমন করে জানলে? তিনি বললেন স্বামী সেবা করে জানতে পেরেছি। পতিব্রতা সতী আর অনুগত শিষ্যের সব জানার মূলেই আছে সেই স্বামী বা গুরুর প্রতি টান।
[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-১৫/৭/৭৪ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩০৯ – ৩১০]