যার উপর তোমার … তেমনতর।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

যার উপর তোমার ভাবা, করা ও বোধ যতখানি ও যেমনতর, তার উপর তোমার আসক্তি, টান বা ভালবাসা ততখানি ও তেমনতর।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

আদেশক্রমে গুরুদেবন (মিত্র) আলোচনা শুরু করল। শ্রীশ্রীপিতৃদেব সূত্রটি ধরিয়ে দিলেন—তুমি মায়ের জন্য ভাব, চিন্তা কর, তোমার বাবার জন্যও ভাব। কেন ভাব, না বাবাকে ভালবাস, ভক্তি কর। মাকে ভক্তি কর। মায়ের প্রতি টান আছে তোমার। মায়ের কথা চিন্তা কর না?

গুরুদেবন—দূরে কোথাও গেলে তখন চিন্তা হয়।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সেইরকম বাবার জন্য, কোন জিনিসের জন্য হতে পারে। হয়ত সাইকেলে চেপে সিনেমা দেখতে গিয়েছ। বাইরে তালা দিয়ে রেখে হলে ঢুকেছ। মাঝে-মধ্যেই মনে পড়ছে সাইকেলের কথা। ঠিক আছে তো? হাফ-টাইমে হল থেকে বের হয়ে দেখলে, হ্যাঁ সাইকেল ঠিকই রাখা আছে। সাইকেলটা তুমি রোজই মোছামুছি কর, পাম্প দিয়ে সচল রাখ। মায়ের জন্য কী কর?

গুরুদেবন—কিছু করি না।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কিছু করতে হয়—বাবার জন্য মায়ের জন্য রোজ করতে হয়। তাদের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করতে হয়। শুধু বাবা-মার জন্য নয়, সকলের জন্য করতে হয়। ইতর প্রাণী বা কোন বস্তুর জন্যও করতে হয়। সবকিছুর জন্য খাটবে।

গুরুদেবন—যদি টিয়েপাখি পুষি, খাটবে?

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, খাটবে। যে টিয়েপাখি পুষেছে সে টিয়েপাখির জন্য করে। তাকে খাবার দেয়, জল দেয়, ভাল-ভাল কথা শোনায়। দূরে কোথাও গেলে টিয়েপাখীর কথা মনে মনে ভাবে। আমরা ঠাকুরের দীক্ষা নিয়েছি, আমরা সৎসঙ্গী। প্রত্যহ প্রত্যুষে ঠাকুরের নাম করতে হয়, ভক্তিভরে ইষ্টভৃতি নিবেদন করতে হয়। বাইরে কোথাও গিয়েছ সেখান থেকে ঠাকুরভোগের জন্য কিছু না-কিছু হাতে করে নিয়ে আসতে হয়। তুমি তো ঠাকুর-বাড়িতে থাক। প্রতিদিন ঠাকুরবাড়ি এসে বিনতি-প্রার্থনা করতে হয়। ঠাকুর-প্রণাম করতে হয়। বাড়ি গিয়ে বাবাকে মাকে প্রণাম করতে হয়। ঠাকুরের বাণী যা পাঠ হয় সেগুলোর অর্থ চিন্তা করতে হয়। জীবন দিয়ে পরিপালন করতে হয়। এসব দেখে বোঝা যাবে ঠাকুরের প্রতি তোমার টান কতখানি।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২/১১/৭৬ ইং]

শ্রীশ্রীবড়দা—যার জন্য যত করি তাকে ততখানি ভালবাসি।

শ্রীকন্ঠদা—ভালবাসা আনতে হলে….

শ্রীশ্রীবড়দা—সংসারে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করি। তার জন্য কত চিন্তা করি, বোধ করি—তবে বাণীটা কেন?

শ্রীকন্ঠদা—আমি যদি তাঁর ওপর আসক্তি আনতে চাই, তবে তাঁর ওপর ভাবা, বলা, করা—ততখানি দিতে হবে।

শ্রীশ্রীবড়দা—কেন করব, বলব কি জন্য? তুই তো ঠিক ক’চ্ছিস্‌। এটা দিচ্ছেন কেন?

শ্রীকন্ঠদা—ঐ ভাবা-বলা-করার ভেতর দিয়ে যা’তে টান আসে।

শ্রীশ্রীবড়দা—ক’রলেই টান আসবে কেন?

শ্রীকণ্ঠদা—হ’তে পারে আমি তাঁর হ’তে চাই।

শ্রীশ্রীবড়দা—এটা Simply করা যায় না?

জনৈক দাদা—আমি খুশি হ’তে চাই, তাই তাঁকে খুশি ক’রতে চাই।

শ্রীশ্রীবড়দা—আমি খুশি হ’তে চাই কেন?

সতীশ—আনন্দ লাভ করতে চাই। সৎ-চিৎ-আনন্দ। আত্মার ধর্ম হচ্ছে আনন্দ।

অজিতদা—আমার মনে হয় ঠাকুর একথা বলছেন—আমাদের চরিত্রকে তৈরী করার জন্য।

শ্রীশ্রীবড়দা—আমরা তো জানি টান অমন ক’রে হয়, তবে বাণীটা কেন দিলেন বলতে হবে। যার জন্য যত করা হয় তত টান হয়।

[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-১৮/১২/৭৪ ইং]

[প্রসঙ্গ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩০০ – ৩০১]