সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যা’ ধারণা ক’রতে মনের নিজত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে —তাই সসীম।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
প্রশ্ন তুললেন সতীশ পালদা—যা’ ধারণা করতে মনের নিজত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে সেটি কী রকম জিনিস?আমার সামনে একটা জিনিস দেখে মনে হল কাঠ, তারপর দেখছি হ্যাঁ—কাঠই, অন্য জিনিস না। এতে মনের নিজত্ব অক্ষুণ্ণ রইল,—এরকম কি?
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—এরকম উদাহরণ দিলি কি জন্য? পরমেশ্বর বল।
পরমেশ্বরদা—আমাদের মনের চিন্তা, ভাবনা, কল্পনার জিনিস যখন আমাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকে তখনই মনের নিজত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। আবার কল্পনায় পাওয়া যায় না এমন জিনিস যদি দেখি তাহলে মনের নিজত্ব থাকে না। যেমন, যখন বলি আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল, কিংবা যদি বলি একশ’ কোটি আলোকবর্ষ—এ-সব আমরা চিন্তাও করতে পারি না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—আমরা ঘর চিনি, বাড়ী, নৌকা, নদী এ-সব চিনি। এগুলো চিন্তা করতে কোন অসুবিধা হয় না। যতক্ষণ নদীতীরে দাঁড়াই ততক্ষণ নৌকা, ঢেউ ইত্যাদি দেখা যায়—মনের নিজত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। তারপর যেতে-যেতে এমন জায়গায় এলাম যেখানে জলের শেষ নেই-কুল দেখা যায় না, তারপর কী? তারপর কী? কিছুই বুঝতে পারি না। অনন্ত-অসীমে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আবার অন্যভাবে দেখ, জল বাষ্প হয়ে যায়, তা লক্ষ্য করি না। আবার মেঘ হয়ে যখন বৃষ্টিরূপে পড়ে তখন লক্ষ্য হয়। বাষ্প অনন্ত আকাশে স্থান নেয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বোঝা গেল তো? উপস্থিত সকলে সম্মতি জানালেন।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-৪/১১/৭৫ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩২৭ – ৩২৮]