যে-তুলনা অন্তর্নিহিত …. বিচার।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

যে-তুলনা অন্তর্নিহিত কারণকে ফুটিয়ে তোলে —তাই প্রকৃত বিচার।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

দীপদ্যোতকের পানে তাকিয়ে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন,—দীপদ্যোতক আলোচনা করুক।

দীপদ্যোতক মুখ তুলে তাকাতেই তিনি পুনরায় হাসতে-হাসতে বললেন—তোমার পড়া ভাল হয়েছে; পড়া শুনে আনন্দ হয়েছে। এবার আলোচনা ক’রে আনন্দ দাও।

দীপদ্যোতক—তুলনা মানে এইটা ভাল, ওইটা খারাপ।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তার মানে এই বইটা ভাল, ওইটা খারাপ। এইটার সুন্দর মলাট, পরিষ্কার-ওইটার ময়লা, ছেড়া মলাট—এ রকম?

দীপদ্যোতক—আজ্ঞে।

—আর অন্তর্নিহিত মানে? অন্তর মানে ভিতর, নিহিত মানে থাকা। মানে ভিতরে থাকা। তাহলে কী হল?

দীপদ্যোতক ঘাড় নীচু ক’রে বই-এর পাতায় তাকিয়ে থাকে।

শ্ৰীশ্রীপিতৃদেব—ওর সত্যানুসরণ আছে, তোমারও আছে। ওর বইটা ছেঁড়া, তোমারটা ভাল। এখানে অন্তর্নিহিত কোন্‌ কারণকে ফুটিয়ে তুলল?—বল।

দীপদ্যোতক একইভাবে চুপ ক’রে থাকে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তুমি দেখে বললে তো ওর চেয়ে আমার ভাল। কেমন ক’রে বুঝলে? ভাল বুঝতে পারলে কেমন ক’রে—সেইটা বলবে তো?

দীপদ্যোতককে নিরুত্তর দেখে তিনি মুক্তিকে একই প্রশ্ন করলেন।

মুক্তি—ওর বইটা ছেঁড়া, ময়লা; আমারটা পরিষ্কার, ভাল—এই দেখে আমি বললাম, ভাল।

শ্ৰীশ্ৰীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন—হ্যাঁ, ও যত্ন ক’রে রাখেনি, ওর বইটা ছেঁড়া, ময়লা; তোমারটা তেমন নয়—তাই দেখে বলবে তো তোমারটা ভাল। অন্তর্নিহিত কারণ এখানে কী আছে? ঐ হচ্ছে কারণ—ছেঁড়া, ময়লা, অযত্নে রক্ষিত। ঐ সব কারণ দেখে বলবে তো তোমার বই ভাল—না-কি? আরো কারণ থাকতে পারে। ভাল কাগজে ছাপা, ভাল কালিতে ছাপা—এসব পয়েন্টও থাকতে পারে। কতকগুলো অন্তর্নিহিত কারণ আছে, সেগুলো তুলনা ক’রে বললে, আমারটা ভাল। দীপদ্যোতক বুঝতে পারলে?

দীপদ্যোতক ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—অন্তর্নিহিত কারণ মানে কী?

দীপদ্যোতক—অন্তর মানে ভিতর, নিহিত মানে থাকা। অন্তর্নিহিত কারণ মানে ভিতরের কারণ।

—তাহলে বিষয়টা কী হল?

—ভিতরের কারণ দেখে বিচার করলাম, আমার বই ভাল, অন্যের বই খারাপ।

—হ্যাঁ। এভাবে ভিতরের কারণ মানে ঠিক-ঠিক কারণ দেখে দুটো বই-এর মধ্যে তুলনা করলাম—কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ। এরকম তুলনা করাই হ’ল প্রকৃত বিচার। ছেলেমেয়েদের অন্যান্য সকলে বুঝতে পেরেছে কিনা জিজ্ঞাসা করায় সকলে ঘাড় নেড়ে জানাল বুঝেছে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ভালই বলেছে মোটামুটি। কী বলেন (ননীদাকে প্রশ্ন)?

ননীদা (চক্রবর্তী)—আজ্ঞে।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব মুক্তিকে প্রশ্ন করলেন—তুমি নিজে-নিজে বলেছ? না-কি কেউ বলে দিয়েছে?

—কেউ বলেনি।

—বুদ্ধি আছে মেয়েটার!

ছোটদের আলোচনার পর এবার বয়স্ক দাদারা একই বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন।

পরমেশ্বরদা (পাল)—ওটা তো একটা সাধারণ ক্ষেত্রে। অন্যান্য বিশেষ-বিশেষ ক্ষেত্রে বিচার করব কিভাবে?

শ্ৰীশ্রীপিতৃদেব—সব ক্ষেত্রেই হবে। মারামারি করা, ঝগড়া করা—সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

হয়তো কেউ খুন করেছে, দেখা গেল লোকটা পাগল—এটাই অন্তর্নিহিত কারণ। আবার, হয়তো স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া হয়েছে। স্বামী স্ত্রীকে মেরেছে। অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বোঝা গেল কিজন্য মেরেছে। দোষ স্ত্রী-ই-কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৮/১১/৭৬ ইং ]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩২২ – ৩২৩]