সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যে-ভাব বিরুদ্ধ ভাব দ্বারা আহত বা অভিভূত না হয়, তাই বিশ্বাস।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—বিশ্বাস এলে তার থেকে কেউ টলাতে পারে না। এ-রকম হামেশাই হ’য়ে থাকে।
ধর, ঠাকুরের দীক্ষা নিয়ে কেউ বাড়ী গেল, কিছুদিন পর হয়ত কুলগুরু এসে উপস্থিত। অন্যত্র দীক্ষা নিয়েছে শুনে তিনি রেগে লাল। সে হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করল। পুরুষোত্তমের দীক্ষা কিংবা সদগুরুর দীক্ষা নিলে গুরুত্যাগ হয় না। তা’ ছাড়া তাঁর (কুলগুরুর) সম্পর্কিত যা’ করণীয় তা’ সে পালন তো করবেই, বরং আরো বেশি ক’রে করবে। কিন্তু তাতেও ফল হল না।
কুলগুরু হয়তো অভিসম্পাত দিতে লাগলেন। তবুও দাদাটি অবিচল। শেষে কান্নাকাটি ক’রেও তার বিশ্বাস থেকে একচুলও সরাতে পারলেন না। একেই বলে বিশ্বাস।
কথা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—চোখের জল দুই কারণে পড়ে। বৃত্তি-প্রবৃত্তির ধান্ধায় এবং পরমপিতার জন্য। ভক্ত কখনো নিজের দুঃখ-কষ্টের জন্য কাঁদে না। তার চোখে জল আসে পরমপিতার অফুরন্ত দয়ার কথা স্মরণ ক’রে। নিজের জন্য, নিজের স্বার্থসিদ্ধির ধান্ধায় কাঁদলে মন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই অন্যেও অনুপ্রেরণা পায় না। পৌরাণিক যুগের ধ্রুব, প্রহ্লাদ এবং ঐতিহাসিক যুগের রামপ্রসাদ, যবন হরিদাস, রূপ, সনাতন প্রমুখগণের জীবনের ঘটনা লক্ষ্য ক’রে আমাদের চোখে জল আসে। এর মধ্য-দিয়ে সকলে প্রশান্তি অনুভব করি। ভক্ত নিজের দুঃখ-কষ্টকে দুঃখ-কষ্টই মনে করে না। সে ইষ্ট-চিন্তায় ভরপুর থাকে। সে জানে যে, ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্যই তার জীবন।
সুধীরদা (সমাজদার) পাশে বসেছিলেন। বললেন—অনেক লোক আছে, যারা বলে আমরা ঠাকুরকে মানি, বড়দাকে মানি, আর কাউকে মানি না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—যারা ঠাকুরকে মানে অথচ ঠাকুরের কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা নেই তারা আসলে ঠাকুরকেই মানে না। ঠাকুরকে মানলে তিনি যাদের দিয়ে কাজ করান, তাদের প্রতিও টান ও ভালবাসা থাকেই। কিন্তু ঠাকুরকে মানি, আর কাউকে মানি না, এ-রকম কথা আত্মকেন্দ্রিক লোকেই ব’লে থাকে। কারণ, ইষ্টকে নিয়েই তো সব —
“You are for the Lord,
not for others,
you are for the Lord
and so for others.”
সম্মুখে টাঙানো এই বাণীটির দিকে নির্দেশ ক’রে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—প্রথমেই ইষ্ট, তাঁকে নিয়েই সব-কিছু। আগে তাঁর হয়ে যেতে হয়। তাঁর না হলে অন্যের হওয়া যায় না।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১৫/১০/৭৩ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৯৪-১৯৫]