যে সত্য প্রচার …. আসবে।-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

যে সত্য প্রচার ক’রতে গিয়ে আপন মহত্ত্বের গল্প করে এবং সবসময় আপনাকে নিয়েই ব্যস্ত, আর নানারকমের কায়দা ক’রে নিজেকে সুন্দর দেখাতে চায়, যার প্রতি-অঙ্গ-সঞ্চালনে ঝলকে-ঝলকে অহঙ্কার ফুটে বেরুচ্ছে, যার প্রেমে অহঙ্কার, কথায় অহঙ্কার, দীনতায় অহঙ্কার, বিশ্বাসে, জ্ঞানে, ভক্তিতে, নির্ভরতায় অহঙ্কার,—সে হাজার পণ্ডিত হোক, আর সে যতই জ্ঞান-ভক্তির কথা বলুক না কেন, নিশ্চয় জেনো সে ভণ্ড; তার কাছ থেকে বহুদূরে স’রে যাও, শুনো না তার কথা; কিছুতেই তার হৃদয়ে সত্য নেই; মনে সত্য না থাকলে ভাব কি ক’রে আসবে।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

সতীশদা—প্রেমে অহংকার, দীনতায় অহংকার কি করে হয়?

শ্রীশ্রীবড়দা—কে আলোচনা করবে?

শ্রীকণ্ঠ—আমি মানুষের সেবা করছি। কিন্তু আমাকে না ডাকলে যাই না।

শ্রীশ্রীবড়দা—ওতে অহংকার কিছুই বোঝা গেল না। সত্য প্রচার করা মানে ঠাকুরের বিষয় বলতে যেয়ে আপন মহত্বের কথা বলছে। মনি বল না?

মনি কর—কুলই পাচ্ছি না।

পণ্ডিতদা—কারও কাছে ঠাকুর টাকা চাইলেন না—আমার কাছেই চাইলেন।

শ্রীশ্রীবড়দা—এও বুঝতে পারলাম না। প্রেমটা কার সঙ্গে হচ্ছে? এতে বুঝলাম ঠাকুর আমাকে খুব বিশ্বাস করেন।

শঙ্করদা—নারদ মনে করতেন আমি বড় ভক্ত।

শ্ৰীশ্রীবড়দা—এতে বোঝা গেল কি করে? কে বলবে এবার?

পণ্ডিতদা—অহংকারটা যখন খারাপ তখন বেকায়দায় পড়ে যা়য়।

শ্রীশ্রীবড়দা—ওটা করার অহংকার। আমরা প্রেমী বলে কা’দের কা’দের চিনি! কীভাবে তারা প্রেমকে প্রকাশ করেছেন?

সতীশদা—ভক্ত হরিদাসের প্রেম—গৌরাঙ্গকে পাবার ব্যাকুলতা……………..

শ্রীশ্রীবড়দা—হয়ত ভক্ত হরিদাস বা যীশুর কথাই বলে, কিন্তু তার মধ্যে অহঙ্কার প্রচ্ছন্ন হ’য়ে থাকে;— হরিদাস তো পথে পথে মহাপ্রভুর জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন, দু’এক বার চাবুক-টাবুকও খেয়েছেন, হরিদাস তো খাবার-টাবার কিছু পেয়েছে। কিন্তু আমি কি করলাম দেখ, মানুষের রোগ-শোকের মাঝখানে সব সুন্দর ক’রে তুললাম, চারপাশের ময়লা দুর্গন্ধ সব পরিষ্কার করে ফেললাম, নীচ, চণ্ডাল সবাইকে অপবিত্র মনে না করে জড়িয়ে ধরলাম, নাম দিলাম। কাউকে পর মনে করতাম না, সবাইকে ভাই মনে করতাম। আরও বলে, আমি যদি না যেতাম তবে মানুষগুলোর গতি হ’ত না, সব শেষ হ’য়ে যেত। পরমপিতার দয়ায় যে বেঁচে উঠল সেকথা বলে না। প্রেমের কথা বলে, আর আমি আমি করে। মহাপুরুষের মত নিজেকে তুলে ধরে। প্রেম মানে নিজের মনে করে সবাইকে ভালবাসা। সে ভালবাসায় কোন খাদ থাকে না।

[‘যামিনীকান্ত রায়চৌধুরীর দিনলিপি/তাং-৮/১১/৭৪ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৫৮-২৫৯]