সন্তানচর্য্যা বিষয়ে অনুশ্রুতি ১ম খন্ড

অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “সন্তানচর্য্যা ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২১ – ২৯ পর্যন্ত মোট ৪২ টি বাণী রয়েছে।
বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।

আর্য্যনীতির দশ রকমের
সংস্কারেরই এমনি রীতি,
উপ্তি হ'তে খতম অবধি
পুষ্টি পোষণ সংস্কৃতি;
যে-সময়ে যে-বয়সে
যে-সংস্কার মাথা তোলে
অনুষ্ঠানের ভিতর-দিয়ে
জাগায় তা'রে শিষ্ট রোলে;
তা'র ফলেতে তেমনি ঝোঁকের
পায়ও এমনি রসাল গতি,
অভ্যাসে আর দক্ষতাতে
শ্রেষ্ঠ সবল হয় সন্ততি। ১।
জন্মযুত সংস্কার সব
শিশুর মাথায় ঘুমিয়ে রয়,
পারম্পর্য্যে সময়-মাফিক
ফাঁকে-ফাঁকে হয় উদয়;
পরিস্থিতির সাড়া পেয়ে
শিশু যেমন বৃদ্ধি পায়,
দেহ-মনের বৃদ্ধিক্রমে
সংস্কারও তেমনি গজায়। ২।
যে-বয়সে যে-সময়ে
যে-সংস্কার হয় উদয়,
সেইটি ধ'রে অভ্যাসেতে
না ধরালে উবেই ক্ষয়;
তারপর তুই যতই করবি
ধ্বস্তাধ্বস্তি শাসন-রাগ,
ভয়ে বালক শীর্ণ হবে
বিরক্তি না মানবে বাগ। ৩।
জন্ম হ'তে পাঁচ-সাত বছর
একীবদ্ধ সম্বেগবেগ,
ছেলেপুলের অন্তরেতে
প্রায় চলে হ'য়ে সবেগ;
এরই ভিতর যে-সম্বেগ
যেমনভাবে মাথা তোলে,
তা'রই তেমন নিয়মনে
জানার দীপ্তি তেমনি খোলে;
ও-বয়সে মায়ের কাছে
ছেলেপুলে থাকবে যত,
মায়ের সূক্ষ্ম সম্পোষণে
সংস্কার হবে দক্ষ তত। ৪।
প্রসব করা কঠিন যদিও
সন্তান-পোষণ সহজ নয়,
সন্ধিৎসাসহ বুদ্ধিমতী
দক্ষনিপুণ হ'তেই হয়;
অভ্যাস-ব্যবহার এস্তামাল
সেবানিয়মন দায়িত্ব-বুদ্ধি,
এ না থাকলে সব মেয়েরই
সন্তান-প্রসবে নাইকো শুদ্ধি;
তাইতো বলি মেয়ে আমার!
মায়ের আসন, নেবার আগে,
উমার মত ওঠ্ গজিয়ে
দুনিয়া সাজা তেমনি রাগে। ৫।
দুষ্টু ছেলে হোক না যতই
জানিস্ ওটা ততই ভাল,
মায়ের প্রতি টানটি ছেলের
থাকলে অটুট আর ঝাঁঝাঁল;
মায়ের একটু প্রীতির আশে
করতে নারে এমন কাজ,
ভাবতে নারে আছে জগতে
সেই তো হ'ল মহান ধাঁজ! ৬।
সৎখেয়ালে সাধুবাদে
নিয়ন্ত্রণে বাড়াস্ রোখ,
অসৎ হ'লে রকম দেখে
দিস্ ঘুরিয়ে ছেলের ঝোঁক। ৭।
শিশু যখন আধবুলিতে
যে-লক্ষ্যেতে যা'-যা' কয়,
তা' না বুঝে চাপান কথায়
আনেই বোধের বিপর্য্যয়। ৮।
দেখো দেখো লক্ষ্মীছেলে
একটুও কিন্তু কাঁদে না,—
এমন বলায় প্রায় ছেলেই
বায়না তেমন ধরে না। ৯।
স্বাস্থ্য ক্ষিধে বুঝে তবে
ছেলেপুলের খাদ্য দিবি,
ও না হ'লেই জানিস্ সেধে
রোগের পূজোয় দিন যাপিবি। ১০।
যে-আচারে স্বাস্থ্য প্রতুল
মায়ের আচার তেমনি হ'লে,
সৎচলনে পাললে ছেলে
অটুট স্বাস্থ্য তবেই ফলে। ১১।
অনুসন্ধিৎসা থাকলে মায়ের
সাহচর্য্য, দক্ষ সেবা,
সন্তানের ঝোঁক সেই পথেতেই
উঠবে ফুটে, রুখবে কেবা?। ১২।
যে-সময়ে যে-বয়সে
সংস্কার-ঝোঁক যেমন ফোটে,
তৎক্ষণাৎই সেইটি ধ'রে
অভ্যাসে দক্ষ করতে হয়,
এর অভাবে ছেলেপিলের
এমনতরই কাণ্ড ঘটে,
উবে গিয়ে সংস্কার-ঝোঁক
সে কাজ করতে আসে ভয়। ১৩।
পুষ্টি সহজ-স্ফূর্ত্তি মনের
বাহ্যিনিঃস্রাব স্বাভাবিক,
ক্ষুধাতৃষ্ণা সহজ মত
সুস্থ ছেলে বাস্তবিক। ১৪।
লোভ দেখিয়ে সেবা নেওয়া
ছেলে-মেয়ে-সন্তানের,
মাতাপিতা-গুরুজনের—
এমনি ডাকটি সব নাশের;
দক্ষ আবেগ পাওয়ার লোভে
লভে নিরোধ, মিয়িয়ে যায়,
অপটুত্ব রাহুর মত
সব কাজে তার পিছু ধায়!। ১৫।
গুরুজনে সন্তানে তোর
কুকাজে যদি শাসন করে,
ছেলের পক্ষ নিবি নাকো
বুঝাস্ সমবেদন ধ'রে;
অমন স্থলে তা'র সমর্থন
ঘায়েল করে ছেলের জীবন,
কুকাজে রতি হয় স্বাভাবিক
চায় না কভু আসতে বরে;
ছেলের যদি দোষও না হয়
তবুও বুঝিয়ে বলবি তা'কে,
না-বুঝানোর দোষ ক'রে তুই
তা'তেই কিন্তু পড়বি পাকে। ১৬।
পারে না ছেলে এমনতর
বুদ্ধি ও ভাব এনে ফেলে,
মাথায় কিন্তু নেই ধরাতে
ওতেই জানিস নষ্ট ছেলে। ১৭।
পরের ব্যথায় সমবেদনা
যা'তে গজিয়ে ওঠে বুকে,
তা'র পূরণে প্রশ্রয় পায়
করিস্-বলিস্ তেমনি মুখে। ১৮।
পালন না ক'রে নীতি-বাক্য
শুনিয়ে ছেলেয় যাসনে থেমে,
এতে কিন্তু ছেলেপুলে
ইতরামিতে চলেই নেমে। ১৯।
ভাল কিছু করতে গিয়ে
আসে যদি হ'টেই ছেলে,
এমনি ক'রে উস্কে দিবি
বাহবা নিতে ক'রেই ফেলে। ২০।
অভ্যাস-ব্যবহার পছন্দ-ঝোঁক
ছোট হ'তেই সতের দিকে,
নিখুঁতভাবে এস্তামালে
স্বভাবটিতে দিবি এঁকে। ২১।
আধকথার সময় হ'তেই
ক'রে করিয়ে যা' শেখাবি,
সেইটিই হবে মোক্ষম ছেলের
হিসাবে চল্, নয় পস্তাবি। ২২।
খারাপ দিকে অবাগ রোখ্
ছেলের যদি দেখতে পাস,
যা'তে ফেরে এমনতর
সম্ভব কঠোর শাসনে ধাস্। ২৩।
যে-অভ্যাস যে-ব্যবহার
চিন্তা-কথা-কায়দা তোদের,
ঐ সকলের সেচন পেয়ে
প্রকৃতি গজায় সন্তানের। ২৪।
ছেলেপুলে দিতে এলেই
বাহবা দিয়ে সেইটি নিবি,
সৎদানের প্রবৃত্তিটিরে
ঐ তালেতে গজিয়ে দিবি। ২৫।
মায়ের উচিত পিতার প্রতি
ছেলেপিলের শ্রদ্ধানতি
বাড়ে যা'তে তেমনি করা—
উছল এতেই সন্ততি। ২৬।
মাতৃটানে বৃত্তি কাবু
ছেলেপুলের যেইখানে,
সার্থক বৃত্তি সমাহারে
স্বতঃ-উন্নতি সেইখানে। ২৭।
নিজ অভ্যাস-ব্যবহারে
ঘৃণ্য রেখে যদি
সন্তানেরে হ'তে ভাল
বলিস নিরবধি,
উল্টো হবে, পারবি না তা'
ক্ষোভে ভরবে মন,
অভ্যাসে আর ব্যবহারে
থাকিস্ সচেতন। ২৮।
সেবাবুদ্ধি স্বতঃই জাগে
এমনি ধাঁজেই মানুষ করিস,
বড়র মানটি রাখে যা'তে
কথায়-কাজে সেইটি ধরিস্। ২৯।
ভাল করার রোখটি যা'তে
গজিয়ে উঠে অটুট হয়,
ওতে বিশেষ লক্ষ্য রাখিস্
ও বিনে সব হবেই ক্ষয়। ৩০।
পিতৃমাতৃকুল-গরিমা
ছেলের কাছে ধরবি এমন,
ফুল্ল হ'য়ে শিউরে উঠে
বাস্তবে হয় দক্ষ চেতন। ৩১।
ইষ্টকথায় সদাচারে
ঝালিয়ে দিবি মনের রং,
স্বভাব হবে তেমনি ছেলের
চলন-বলন তেমনি ঢং। ৩২।
পিটনি দিয়ে শাসন করে
শেখাতে যাসনে ছেলেয় কিছু,
কুবুদ্ধিটি তল্ছা মেরে
ছুটবে সর্ব্বনাশের পিছু। ৩৩।
সমঝ-শাসন করার পরে
নরম মতি দেখতে পেলে,
আদরভরা সহানুভূতি
দিয়ে সৎ-এ ধরিস্ ছেলে। ৩৪।
ছেলের বাঁচাবাড়ার দিকে
নেহাৎ যদি মনই যায়,
নিজ অভ্যাস-ব্যাভার-ঝোঁকে
রাখিস্ কাজে সৎ-ধাওয়ায়। ৩৫।
খারাপ কিছু করতে গেলেই
বুঝিয়ে বলিস্, করতে নেই,
না করবে যেই দিস্ বাহবা
উন্নয়নের এইটি খেই। ৩৬।
না দেখলে মা'য় আঁধার দেখে
দুষ্টুমি হয় হতভম্ব,
এইটি বড়ই সুলক্ষণের
বর্দ্ধনেরই দৃঢ় স্তম্ভ। ৩৭।
পিতার উচিত মাতৃভক্তি
অটুট থাকে সন্তানের—
ব্যাভার-আচার-কথায় তেমনি
পুষ্ট করাই মঙ্গলের। ৩৮।
ছেলেপুলোয় ভয় দেখাসনে
সাহস সাথে এষণায়
বাড়িয়ে দিবি এমনিভাবে—
বাহবাভরা ভঙ্গিমায়। ৩৯।
পাঁচ বছরেই ছেলেপুলের
অভ্যাস-ব্যাভার ঝোঁক্—
যেমনি আনবি এস্তামালে
তেমনি জীবনের রোখ্। ৪০।
যেমন স্বভাব-আচার-বিচার
পড়শী-পরিবারে,
সন্তানেরও স্বভাব বাঁধা
জানিস্ তেমনি তারে। ৪১।
স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া করে
ছেলেপুলেয় দেখে,
গোল্লায়েরই সদর দ্বারে
বাছাগুলোয় রাখে। ৪২।