অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “সমাজ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১১৪ – ১২১ পর্যন্ত মোট ৩৪ টি বাণী রয়েছে। বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।
সব বৈশিষ্ট্যের স্বতঃ গতি
এক আদর্শে হ'লে,
পারস্পরিক সুহৃৎ চলায়
সমাজ তা'কেই বলে । ১।
সমাজই তো উপচে উঠে
রাষ্ট্রে দীপ্তি পায়,
বিধান-মাফিক সটান চলায়
বর্দ্ধনাতে ধায় । ২।
এক আদেশে চলে যা'রা
সমাজ গজায় জানিস্ তা'রা। ৩।
ফের্ ওরে ফের্ ইষ্টদেবের
স্বার্থলাভে জীবন ব',
ধন্য হ'বি, মান্য পাবি,
অমর সুধায় অমর হ'। ৪।
পূর্ব্বমহান স্বীকার ক'রে
পিতৃকৃষ্টি পূরণ যা'তে,
উন্নতিতে ধরবি তাহা
বাড়বি তা'তে জাতির সাথে । ৫।
পূর্ব্বতনের সূত্র ছিঁড়ে
আসুক নাকো যেই মহান,
উন্মাদনা গেলেই নিভে
উদ্দীপনার তিরোধান। ৬।
এক মাটিতে বসত যা'দের
ধর্মগুরু যা'দের সৎ,
ধান্য-গোধূম খাদ্য যা'দের
রয় কি পৃথক তা'দের পথ? ৭।
একপ্রাণতার মমত্বেতে
পরস্পরের সমাবেশ,
নিনড়-অটুট হ'লেই জানিস্
একটি দানায় বাঁধবে দেশ। ৮।
ইষ্ট-রাজা-পারিপার্শ্বিক
পিতৃ-পরিবার,
এ চার ভাগে আহরণ তোর
করবি ব্যবহার;
এমনতর চলায় জানিস্
জীবন-যাপন ধন্য মানিস্
রক্ষাটি তোর চতুর্দিকেই
থাকবে হুঁশিয়ার । ৯।
সমাজে আন ইষ্টানুগ
একতন্ত্রী সংগঠন,
যৌন-সূত্রে অনুলোমে
শ্রদ্ধাভরে কর্ পালন । ১০।
বাড়তে গেলেই সংহতিতে
সহগামী বিশিষ্টদের
নিয়েই হবে বাড়তে কিন্তু,
নইলে বৃদ্ধি আপসোসের । ১১।
পড়শীরা তোর নিপাত যাবে
তুই বেঁচে সুখ খাবি বুঝি?
যা ছুটে যা, তা'দের বাঁচা—
তা'রাই যে তোর বাঁচার পুঁজি । ১২।
ঝমক নাচে তাল-বেতালে
লকলকান ফণী-ধাওয়ায়,
সিংহরোলে কাঁপিয়ে তুলে
মরণতরণ বীরগাথায়,
আর্য্যসমাজ, ওঠ্ রে জেগে
বীর্য্যপ্রাণা দ্বিজের ঘর,
অযুত আলোয় বুক ভরে নে
দীপ্ত কর্ রে বিশ্বচর। ১৩।
ডঙ্কা বাজা ভেরীর রবে তুর্য্যধ্বনি নাচন রোল, চল্ ওরে চল্ আর্য্যগর্ব্বে ইষ্টস্বার্থী ধ'রে বোল; সমাহারে আন্ সবে আন্ বীরদাপটে বীর্য্যপ্রাণ, সামের গানে মাতাল ভোলা জাত-সমাজে কররে ত্রাণ । ১৪।
যে-জাতিতে যতই বেশী
সাধ্বী ধীরা নারী,
জীবন্ত সে-জাতি ততই
বিশ্বতমোহারী । ১৫।
যে-জাতিতে বারাঙ্গনা
স্বৈরিণী নারী কম,
নিছক জানিস্ সেই জাতিটির
আছেই বুকের দম। ১৬।
বারাঙ্গনা সেই—
বহুপুরুষে আত্ম বিকিয়ে
বাঁচায় জীবন-খেই। ১৭।
জাত-সমাজ বা সম্প্রদায়ে
যেমন নারীই হোক,
বিহিতভাবে রকমফেরে
রাখিস ঘুরিয়ে রোখ;
জাতি-কুল বা ধৰ্ম্মভ্রষ্ট
যতই নারী হবে,
ধ্ব'সে যাবেই জীবন জাতির
নিছক জানিস্ সবে;
তাইতে বলি শোন্ তোরা ও
আবছা-দৃষ্টি যা'রা,
রাখতে নারী সামাল হ' রে
ঘুচিয়ে বেকুব ধারা। ১৮।
কুলে নারী ভ্রষ্টা হ'য়ে কুলেই কাউকে করলে গ্রহণ, প্রায়শ্চিত্তে শুধরে নিয়ে তা'কে কিন্তু করিস্ই বহন; বধূত্বেরই নীচের থাক্ ভ্রষ্টাই অববধূ হয়, শ্রেষ্ঠজনায় করলে বরণ অববধূত্বেও উপচয়; দেবকার্য্যে, পিতৃকার্য্যে জানিস্ এরা হয়ই ন্যূন, তপের তাপে কালে-কালে কমেও কিন্তু ও-টুক ঘুণ। ১৯।
বর্ণঘাতিনী হ'য়েও যদি
অনুতাপে দ'গ্ধে-পুড়ে
মর্ম্মাহতা জীর্ণা নারী
অতীতস্মৃতির ব্যথায় ঘুরে,
বৃত্তিক্ষতে শিউরে উঠে
কুলেই ফিরে আসতে চায়,
তা'রেও কিন্তু গ্রহণ করতে
বিধানমত পারাই যায়;
যথাবিধি প্রায়শ্চিত্তে
শুদ্ধ হ'য়ে কৃচ্ছ্রতপে,
থাকতে পারে সেই কুলেতে
রত হয়ে ধৰ্ম্ম-জপে;
পিতৃকার্য্যে দেবকার্য্যে
সংযমে আর হবিষ্যতে,
পংক্তি-ভোজন রাঁধাবাড়ায়
থাকবে না সে বিধিমতে;
এ ছাড়া সব পারিবারিক
ভোজ্যান্নতা যাহা-কিছু,
সবই করতে পারে তা'রা
যদিও থাকে খানিক নীচু । ২০।
কুলে নারী দুষ্টা হ'লে
যোগ্যপুরুষ থাকলে কুলে,
অববধূ সংস্কারেতে
নেওয়াই ভাল তা'রে তুলে। ২১।
কুলে দৃষ্টা হ'লেও নারী
কূলেই রাখা ভাল,
রাখলে কূলে জাত-খুইতে
করে না সমাজ কালো। ২২।
বর্ণঘাতিনী নয়কো এমন
কুলটা যদি কেউ
অনুতাপেতে দগ্ধ হ'য়ে
নিয়ে ব্যথার ঢেউ,
কুলেই যদি ফিরে আসে
আশ্রয়-প্রার্থী হ'য়ে
যথাবিধি প্রায়শ্চিত্তে
নিস্ তাহারে ব'য়ে;
পিতৃকার্য্যে দেবকার্য্যে
হবিষ্য আর সংযমেতে,
করবে না, পারবে না ছুঁতে
আছে কিন্তু বিধানেতে। ২৩।
কামার্ত হ'য়ে পুরুষ যদি
লুব্ধ করে নারী,
সদ্য আয়ু হারাবে সেই
সমাজ-ধ্বংসকারী। ২৪।
সমাজে যদি না থাকে তোর
আবেগভরা উন্নতটান,
জনননীতি বিপথগামী
দীপ্তিহারা বধির প্রাণ,
পরের দেওয়ায় জীবন-ধারণ
শিল্প মূক ও মুহ্যমান,
নিঝুম-নিরেট অন্ধকারেই
সেই সমাজ কি পায় না স্থান? ২৫।
কুল-বৈশিষ্ট্যে সজাগ যত
কৌলিন্যও ঝাঁঝাল তত,
ওইটি যা'দের যতই ক্ষীণ
কুল-গরিমায় ততই হীন। ২৬।
ক্ষতিকে যদি করিস্ দয়া
বাড়বে অপলাপ,
তুইও যাবি সর্ব্বনাশে
সমাজে ঘিরবে পাপ। ২৭।
অন্য জাতি বর্ণ যা'রা
তা'দের সৎ-এ উন্নয়ন
উপেক্ষি' চায় বাড়তে নিজে—
অদূরেই রয় তা'র নিধন। ২৮।
বিপ্র ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র
যে চাহুক সৎসংহতি,
সহবর্ণে নিতেই হবে
নইলে রুদ্ধ তা'র গতি । ২৯।
বিপ্র ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র
পরস্পরের অবজ্ঞায়,
বাড়তে গেলে সংহতিতে
বিপাক চলে বাঘের পায় । ৩০।
অন্যায় পথের অত্যাচারে
খতম করিস ত্বরিত পায়,
নইলে ওটা বিষিয়ে জানিস্
করবে নিকেশ সমাজটায় । ৩১।
মহৎ চলেন যা' করে তাই
ভবিষ্যতে সাধারণ
সেই পথেতে চলতে থাকে—
বাড়ে সমাজ-নিয়ন্ত্রণ। ৩২।
এক আদর্শে অটুট থেকে
প্রতিপ্রত্যেকে যখন
পরস্পরের স্বার্থ-সেবী,—
সংগঠিত তখন। ৩৩।
রক্ত গোলাপ ফুটল বুকে
পদ্ম ফোটে লালে লাল,
জীবন-দোলা দিচ্ছে রে দোল
প্রেষ্ঠী মাতাল মিলন তাল;
বীণ-প্রণবী মূর্ছনাতে
উঠছে রে গীত পাগল-করা,
ছুটল্ রে ওই ফুটল ওরে
হ'ল সমাজ দীপন-ভরা। ৩৪।