অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “স্বাস্থ্য ও সদাচার” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২০০ – ২১০ পর্যন্ত মোট ৫৫ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।
রসুন, মেথি, কালো জিরে,
সর্দ্দি নিরোধ করেই ধীরে। ১।
কী ক'রে বা কী এড়িয়ে
স্বাস্থ্যটি তোর নিটোল থাকে,
ঐ তো বুঝিস্ স্বাস্থ্যবিধি —
পড়বি না যায় রোগবিপাকে। ২।
স্বাস্থ্য-আচার সেধে-পেলে
স্বস্তিতে কর্ বসবাস,
অস্তিতে তোর স্বস্তি আসুক
হো'ক্ বিমোচন সকল ত্রাস। ৩।
ছেলেমেয়ে কম হ'লেও তা'
বেঁচে-ব'ৰ্ত্তে সুখে থাকে,
সেই নিয়মে চলতে থাকিস্
বলিস্-কহিস্ তা'ই সবাকে । ৪।
স্বাস্থ্যের সাথে ঝোঁক-আবেগের
হচ্ছে যেমন সম্মিলন,
নিষ্ঠানিপুণ তেমনি চলায়
তেমনি তো হয় কৃতি-চলন। ৫।
শরীর তোমার স্বস্থ হ'লে
যেমন পার—চ'লো-ফিরো,
জীবনদীপ্তি যা'তে বাড়ে
তদনুগ ক্রিয়া ক'রো। ৬।
শরীরটাকে সুস্থ রাখা
ধৃতি সাধার প্রধান পদ,
শরীরটাকে ঠিক রেখে তুই
কৃষ্টিতপের ধর্ না পথ। ৭।
স্বাস্থ্যটাকে রাখবি ভাল
সঙ্গত সৌজন্য দিয়ে,
প্যাঁচোয়া যা' তা' করবি সরল
ব্যবহারের মিষ্টতা নিয়ে। ৮।
স্বাস্থ্যপ্রদ আচরণে
চালচলন আর মেশামিশি,
স্বস্তিপ্রদ করবি সবই
ঠিক রেখে সবের মাত্রা-দিশি। ৯।
শরীর-সংহতি উৎক্ষিপ্ত হ'লে
বেদনা কিন্তু তখনই লাগে,
তা'তেই কিন্তু যন্ত্রণা আনে
ব্যতিক্রান্ত ক'রে যন্ত্রটাকে। ১০।
ঐতিহ্যটার বিনায়নে
আচার-ব্যাভার-খাদ্যখানা,
সমীচীন যা' সুবৰ্দ্ধনী
তা'ই তো উচিত ব্যাভারে আনা। ১১।
বিধানের যা' নাই প্রয়োজন
নিষ্কাশিত ক'রে দেয়,
শুদ্ধ-স্বস্থ রাখবি বিধান
বিধিমত রাখিস্ তা'য়। ১২।
বিধানের যা' নাই প্রয়োজন
নিষ্কাশন সে তা'কেই করে,
প্রয়োজনীয় যেমন যা' তা’র
তা'কে কিন্তু রাখে ধ'রে। ১৩।
অলস হ'য়ে অবশ মনে
কৃতিচৰ্য্যা ছেড়ে দিয়ে,
সুস্থ স্বাস্থ্যে থাকবি নাকো
অলসতায় বিভোর হ'য়ে। ১৪।
ধারণ-পালন-রক্ষণা তোর
চারিয়ে দিলে নিজ জীবনে,
আয়ুষ্মান্ ক'রে তোকে
বাড়িয়ে তুলবে তপ-বিতানে। ১৫।
যা' করিস্ তুই, নজর রাখিস্—
সব সময়েই সত্তার দিকে,
শুভ সাত্বত শিষ্ট কিনা
নিও সেটা বাজিয়ে দেখে। ১৬।
সাত্বত যা' ভাল তোমার
অস্তি-পোষণে শ্রেয় তা',
মন্দ যেটা দেখছ তুমি
স্বস্তি তা'তে আনে না। ১৭।
ধৃতি-দীপন জীবন রাখিস্
ঊর্জ্জী সাম্য রাখিস্ মন,
করণীয় যা' ত্বরিত করিস্
নিটোল যা'তে হয় বলন। ১৮।
অন্যের ছাড়া গামছা-কাপড়
বিছানা কিংবা গায়ের চাদর,
ব্যাভার করা নয় সমীচীন—
সম্ভব স্বাস্থ্য হয়ই ক্ষীণ ;
এ-সবগুলির ব্যবহার
স্বাস্থ্যের করে অপকার,
বেছে চলিস্ এগুলি তাই—
দুর্দ্দশায় পাবি অনেক রেহাই । ১৯।
যে-কালে যে-খাদ্য মেলে—
স্বাস্থ্যসাথে মিল রেখে,
এমনভাবে খাবি কিন্তু
শরীর যেন ঠিক থাকে। ২০।
ক্ষুধার তোড়ে খাদ্যস্পৃহা
তেমনতরই লোভ ভাল,
লোভের দায়ে পড়বি ফেরে
যদি স্বাস্থ্য নাই পালো। ২১।
ক্ষুধা পেলে পেট পূরিস্ তুই
খাদ্য নিয়ে তিনটি ভাগ,
শুদ্ধ জলে এক ভাগ পূরলে
বৃদ্ধি পাবে স্বাস্থ্যরাগ। ২২।
রান্নার সময় তুমি—
দু'চামচে ঘসা কৃষ্ণ তিল
দিয়ে ভাত রান্না ক'রো,
খেয়ে স্বাস্থ্যের হবে জিল্ ;
শুদ্ধ গব্য ঘৃত নিয়ে
খাওয়ার পাতে ছিটিয়ে খেও,
স্বাস্থ্য অনেক থাকবে খাঁটি
বোধ-নজরে দেখে নিও। ২৩।
টক দই কিন্তু নেহাৎ ভাল
ঝোলাগুড়ে খাস্ যদি,
অনেক বালাই দূর করে এই
প্রাচীন নীতি টক দধি। ২৪।
খাবার পাতে শেষকালেতে
খাস্ যদি তুই নুনে-টকে,
অনেক আপদ কাটবে তা'তে
জানে অনেকে ঠ'কে-ঠ'কে। ২৫।
একটুখানি পুরানো তেঁতুল
খানিকটা তা'য় ঝোলাগুড়,
নুনের সাথে খেয়ে দেখিস্
স্বাস্থ্য থাকে কত মধুর। ২৬।
বিধানমত মিল থাকে যা'র
এমন খাদ্য বেছে নিস্,
পুষ্টি পাবি, শক্তি পাবি—
সামঞ্জস্য ঠিক রাখিস্। ২৭৷
সুষ্ঠু সিদ্ধ-খাদ্য খাবি
অল্পে পুষ্টি হয় যা'তে,
তৃপ্তিভরা সহজপাচ্য
জীবনীয় তা' হয় তা'তে। ২৮।
যে-সব খাদ্য ফলপ্রদ
আশু যা'রা হয় দীপন,
ক্ষয়িষ্ণু যদি তা'দের ক্রিয়া—
নিস্ না কিন্তু খাদ্য তেমন। ২৯।
খাদ্য খেও এমনতর
যা'য় নিরঙ্কুশ পুষ্টি দেয়,
পোষণ দিয়েও নষ্ট আনে—
সেটা কিন্তু খাদ্য নয়। ৩০।
যে-খাদ্যেতে জীবন বাড়ায়
স্বতঃশিষ্ট গতি নিয়ে,
সেই খাদ্যই শিষ্ট খাদ্য
চ'লো আর সব আয়বাদ দিয়ে। ৩১।
স্ফূর্ত্তির পরে আসে অবসাদ,
অবসাদ আনে সত্তার ভাঙ্গন,—
এমনতর খাদ্যখানা
জীবনের কিন্তু নয় প্রয়োজন। ৩২।
শরীর যা'তে তেজাল থাকে,
স্বতঃস্রোতা চলে মন,
বিষাদ যেটা নষ্ট করে,—
তা'ই জীবনের প্রয়োজন। ৩৩।
শিষ্টভাবে পুষ্টি আনে
সাম্যদ্যুতির দ্যোতনায়,
শ্রেয় খাদ্য তাই-ই কিন্তু
যা'তে বাড়ায় জীবন-আয়। ৩৪।
বেছেগুছে সে-সবই নিস্
সাত্ত্বিক সে-সব যা'তে হয়,
স্বাস্থ্যটাকে এমন বাঁধে—
কাবু করতে পারে না ক্ষয়। ৩৫।
ভুঁড়ি দেয় মুড়িকে বল
মুড়ি দেখে ভুঁড়ি,
এমনি ক'রেই চলে জীবন
স্বস্তিতে দিয়ে তুড়ি। ৩৬।
জীবনটাকে পালতে হ'লেই
রান্নাবান্না করবি এমন,
স্বাস্থ্যপ্রদ সুপাচ্য হয়
পায়ই শক্তি তোদের জীবন। ৩৭।
ত্যাজ্য যেটা তোমার পক্ষে
হয়তো অন্যের পুষ্টি দেয়,
তুমি বাঁচ তা'ই নিয়েই তো
তোমার পক্ষে যেটা ন্যায়। ৩৮।
ঔচিত্যকে অবজ্ঞা ক'রে
বিধি-ব্যতিক্রমে যেই মাতে,
শ্রেয়ত্বের দাবী যতই থাক্ না—
ভগবান্ খান তা'র হাতে ? ৩৯।
বৈশিষ্ট্যহারা দৈন্য যা'দের
নীচুমনা তা'রাই হয়,
করে অনুরোধ, জবরদস্তি—
শ্রেয় যা'তে তা'র হাতে খায়। ৪০।
শ্রদ্ধাপূত আনন্দবাজার,
অন্নদা যা'র স্বভাব-রাণী,
ভক্তিভরে করিস্ পূজা
আশিসস্রোতা হবেই প্রাণী। ৪১।
আনন্দবাজারে খাস্ যদি তুই
ন্যায্যর বেশী খাবি না,
বেশী যদি দেয়ও কেউ তোয়
কিছুতেই তা' নিবি না। ৪২।
ক্ষুধা লাগলে ব'সে খেও
নিয়ে যেও না অন্যখানে,
এ অভ্যাসে শোষণ বেড়ে
দাগাই দেবে দাতার প্রাণে। ৪৩।
সেবা-অঙ্গন পূত রাখিস্ তুই
লেপে-পুঁছে মেজে-ঘ'সে,
যত্ন করিস্ সবা'কে তুই
নন্দ-বিপুল ভক্তিরসে। ৪৪।
অনাচার বা অপচারে
অন্নদার ঐ নন্দবাজার,
স্বার্থলোভে পঙ্কিল ক'রে
ঘটাস্ নাকো ক্লেশ আপনার। ৪৫।
স্বার্থলোলুপ দুষ্টবুদ্ধি
অমিতব্যয়ী হয় যা'রা,
আনন্দহাটে র’লে জানিস্
ব্যর্থ হবে জীবন-ধারা। ৪৬।
ব্যাধির নিরাময় যা' যা' করে
সত্তার পক্ষে কল্যাণকর,
ব্যাধির পক্ষে তা'ই তো ঔষধ
অস্তিত্বটার জীবনধর। ৪৭।
ওষুধের যা' স্বাভাবিক গুণ
রোগে তা'র যে গুণপনা,
সে-রোগেরই সেইটি ওষুধ
নিরাময়ের সেই ঠিকানা। ৪৮।
পরিবেশ আর সত্তা-আবেগ
নিয়মনী সন্দীপনায়
শিষ্টচৰ্য্যা-প্রদীপ্তিতে—
আরোগ্যটা নিজেই আনায়। ৪৯।
নিষ্ঠা যদি থাকেই তোমার
আগ্রহ-উছল হয় হৃদয়,
তদ্-অনুগ কৃতিতপে
রোগবালাই সব করবে জয়। ৫০।
আশু শুভ যে-সব জিনিস—
স্বাস্থ্য-স্বস্তির শুভ তা',
দীর্ঘ ব্যবহার নয়কো ভাল
বুঝে ক'রো সমতা ;
যদিই বা সে-সবগুলি—
আপাততঃ শুভই হয়,
ব্যবহারে নিদেশ দিও
আশু ব'লে জানিও তা'য়। ৫১।
শরীর-ধারণ করেছ যখন
শারীর ধর্ম্ম মানতেই হবে,
মেনে—করার খাঁকতি যেমন
তদ্-অনুগ খাঁকতি র'বে। ৫২।
সূর্য্যের আলো আসে যখন
তা'র সাথেতেই শয্যা-ত্যাগ
ক'রে করিস্ সে-সব কৰ্ম্ম
যা'তে সুস্থ স্বাস্থ্য-যাগ। ৫৩।
ধৃতিটাকে সাম্যে রেখো
শরীর-মন ও কৃতি-ঊর্জ্জনায়,
উন্নতিতে উছল ক'রে
বৃদ্ধি পেয়ে সুসর্জ্জনায় ;
সামর্থ্যেতে থাকবে তুমি
সুসমর্থ চলন নিয়ে,
পরাক্রমী ঊর্জ্জনাতে
শিষ্ট সৎ-এর পোষণ দিয়ে। ৫৪।
ওরে পাগল ! ওরে বেকুব !
ছন্নছাড়া বুদ্ধিমান!
খাটলি-খুটলি কতই করলি
অর্থের খোঁজে ব্যর্থপ্রাণ !
জীবনটাকে দেখ্ আগে তুই
বেঁচে-ব'র্ত্তে থাকিস্ যা'তে,
স্বাস্থ্য-শক্তি বজায় থাকে
কর্ম্মক্ষম থাকিস্ যা'তে ;
ইষ্টনিষ্ঠা, আনুগত্য,
কৃতিদীপ্ত ঊর্জ্জনা—
যা'তে তোমার বৃদ্ধি আনে,
আনে চর্য্যা, অর্চ্চনা;
সামঞ্জস্যে এনে সত্তা
বিনায়নে শুদ্ধি কর,
এমনতর জীবন নিয়ে
উন্নতিরই চর্য্যা ধর্ ;
তা' যদি তুই না করিস্ ওরে !
সবই বৃথা পাগ্লা ধাঁচ,
স্বাস্থ্যটাকে অটুট রেখে
অঢেল চলায় আগে বাঁচ্। ৫৫।