অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “স্বাস্থ্য ও সদাচার ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৩৭ – ৫০ পর্যন্ত মোট ৬৯ টি বাণী রয়েছে।
৩১ – ৬৯ পর্যন্ত বাণীসমূহ নিচে দেয়া হলো।
একই জলে বারবার
হরেক জিনিস ধোওয়া,
মরণ-কণা বহন ক'রে
পরিচ্ছন্ন রওয়া। ৩১।
বাজার থেকে এনে জিনিস
না ধুয়ে, ফুটিয়ে, রৌদ্রে দিয়ে,
খাওয়ায় কিংবা ব্যবহারে
আসেই ব্যাঘাত ও-পথ বেয়ে। ৩২।
শিকনি ঝেড়ে ধোয় না হাত
বক্ষব্যাধির হয় উৎপাত। ৩৩।
মলত্যাগ আর প্রস্রাব ক'রে
উপযুক্ত শৌচে যাবি,
নইলে জানিস্ খল ব্যাধিতে
হঠাৎ কিন্তু নষ্ট পাবি। ৩৪।
দাঁত, মুখ, জিভ্ রাখবি সুস্থ
উদরটাকেও তেমনিই,
রইবে সুস্থ দেহ-জীবন
এ নীতিটা এমনই। ৩৫।
জলাশয়ে প্রস্রাব ক'রে
কলসী ক'রে সে-জল আনে,
তাই খাইয়ে মৃদুল বিষে
পরিজনের জীবন হানে। ৩৬।
বাঁচাবাড়ার ধার ধারে না
অভ্যাস-আচার মলিন,
অসৎ-বংশ-উচ্ছ্রি ত সে
বোঝে না সমীচীন। ৩৭।
ঘৃণা যতই উথলে ওঠে
অপ্রবৃত্তি ফোটে,
মনে আসে চঞ্চলতা
অস্বস্তিও জোটে;
এমনতর স্থান-পাত্র
কিংবা কিছু হ'তে
এড়িয়ে চলিস্, ধরিস্ না তা'—
হীনস্বাস্থ্য ওতে। ৩৮।
মনটা দুষ্ট হ'লেই জানিস্
রোগের আথাল হয়,
ঐটাকে তুই এড়িয়ে চলিস্
করবি ব্যাধি জয়। ৩৯।
মন যেমন তোর থাকলে শুদ্ধ
সুস্থ সবল হ'বি,
পড়শী তেমনি না হ'লেও কি
স্বাস্থ্যে অটুট র'বি?। ৪০।
আঁতুড়ে যেয়ে ছুঁয়ে-নেড়ে
বাইরে এসে শুদ্ধ গায়ে
অন্য কিছু ছোঁয়া-নাড়া
করবি, নইলে পড়বি দায়ে। ৪১।
আঁতুড়ে গিয়ে ছুঁয়ে-নেড়ে
পরিশুদ্ধ না হ'য়ে কেউ
ছুঁয়ে-নেড়ে একশা করলে
সইতে হবেই রোগের ঢেউ। ৪২।
ঋতুমতী নারী হ'লেই
তিন কিংবা চারটি দিন,
খাওয়া-শোওয়ার জিনিসপত্র
ছোঁয়া নয়কো সমীচীন;
অন্তঃরুদ্ধ সঞ্চিত বিষ
শোণিত-স্রাবে ধৌত হয়,
ছোঁয়া-নাড়া স্পর্শদোষে
উহাই কিন্তু সঞ্চরয়;
সুস্থ দেহে ঐ বিষেতে
দুষ্ট রোগের হয় আবাস,
পরিবারটি ঘিরে ধরে
ফলে-মূলে হয় নিকাশ। ৪৩।
ঋতুগায়ে নারী যা'রা
ছোঁওয়া-নাড়া করে,
নিজেও নষ্ট হয় তাহারা
মারেও অপরে। ৪৪।
সদাচারে রয় না নারী
বয় না আচারে সন্ততি,
অশ্রদ্ধাতে স্বামী ভজে
অতৃপ্ত রয় দম্পতি,
আহার-বিহার পয়সা-কড়ি
এতেই বাতুল রতি যা'র,
প্রেষ্ঠস্বার্থে নয় পটু মন
বৃত্তিস্বার্থই বোধের সার,
পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থিতি
কাজে-কর্ম্মে কভু নয়,
ঢালা-ফেলা খাওয়া-দাওয়া
বেহিসাবে ক'রেই রয়,
এমন নারীর চতুর্দিকেই
বালাইভরা রোগের জাল,
দৈন্যভরা ব্যাধি-পিশাচ
ধ'রেই চলে চণ্ডতাল। ৪৫।
ঋতুগায়ে তিনচার দিন
নারীর ছোঁয়া-নাড়ার দোষ,
এই স্বভাবে বয়ই নারী
জীবনভরা শোক-আপসোস। ৪৬।
অন্নে জানিস্ মন বয়
অন্ন-মাফিক প্রবৃত্তি হয়। ৪৭।
বাহ্যি-প্রস্রাব সেরে কিন্তু
শৌচ করে যথারীতি
পা-হাত-মুখ অমনি ধুবি—
স্নায়ু পাবে স্থৈর্য্য-স্থিতি। ৪৮।
যে-সংসর্গে পালন-পোষণ
যেমন অন্ন খায়,
সেই সংস্কার পুষ্টি পেয়ে
জীবন-পথে ধায়। ৪৯।
না নেয়ে যায় রান্নাঘরে
এঁটো ধোওয়ার নাই রেওয়াজ,
যে যা'র খুশি পাক ছুঁয়ে দেয়
তা' খেতে তুই হ'স্ নারাজ। ৫০।
লোক-সমাগম ছোঁয়া-নাড়া
হামেশা যেথায় হ'তে পারে,
তা'র তফাতে আঁতুড়-ঘরটি
রাখিস্ করে একটি ধারে। ৫১।
রাঁধা-বাড়া খাদ্য যত
সকড়ি বলে তা'য় নিয়ত,
ধরা-ছোঁয়ার সতর্কতায়
রাখতে-ঢাকতে হয়;
সকড়ি যা' সব পচন-প্রবণ
রোগজীবাণু বয়,
ছোঁয়া-নাড়ায় সাবধান তা'য়
ধুলেই শুচি হয়। ৫২।
চুমুক দিয়ে খেয়ে কিছু
না ধুয়ে পাত্র খানে আবার,
জীবাণু অযুত লালার সাথে
করতে পারে ঢুকে সাবাড়। ৫৩।
যা' ছুঁলে যা' ধরলে রে তোর
শরীর-জীবন বিষাক্ত হয়,
সেই ধরা, সেই করাগুলিতেই
অস্পৃশ্যতার নীতি রয়। ৫৪।
সুষ্ঠু দেওয়ায় বাড়ে মায়া
সু-আহারে পুষ্ট কায়া। ৫৫।
অধিক ভোজন যা'রাই করে
দরিদ্রতায় প্রায়ই ধরে। ৫৬।
বিপ্রও যদি কদাচারী
শীল ও শ্রদ্ধা-হারা,
তা'রও দত্ত ভোজ্য অন্ন
বয় বিষেরই ধারা। ৫৭।
ইষ্টনিষ্ঠ নিখুঁত চলায়
শুদ্ধ সদাচারী,
বিনয়ভরা শ্রদ্ধাশীল যে
ভোজ্য অন্ন তা'রই। ৫৮।
ব্যাধিমুক্ত গুরু ছাড়া
কারু এঁটোই খেতে নাই,
এতে কিন্তু ধ'রেই থাকে
জীবনভরই রোগবালাই। ৫৯।
বাসী কিংবা পচা জিনিস
বাহন কিন্তু অশেষ রোগের,
ওর ব্যাভারে সাবধান র'বি
বাহক ও-সব দুর্ভোগের। ৬০।
সহজ আহার, শ্রম স্বাভাবিক
সহজ সুখে বসবাস,
উন্নয়নেই তৎপরতা
দক্ষকর্মী ন্যায়ের দাস;
যত সহজ এই যেখানে
স্বাস্থ্য সেথায় হাস্যমুখ,
অমনতর স্বাস্থ্য পেলেই
দেহের আয়ু প্রাণের সুখ। ৬১।
রবি গুরু পৌর্ণমাসী আর চতুর্দ্দশী
অমাবস্যা, সংক্রান্তি কিংবা একাদশী
এ-ক'টা দিন অন্ততঃ থাকিস্
পাতলা-পুতলি খেয়ে,
ব্যতিক্রমে পয়মালে যায়
ঘৃষ্ট আঘাত পেয়ে। ৬২।
আপদে রোগে বিধিমত
আমিষে দোষ হয় না তত। ৬৩।
খাসনে মাদক-পিঁয়াজ-রসুন
মাছ-মাংস নানাবিধ,
ওতে বিধান বিষাক্ত হয়
অযথা হয় উত্তেজিত,
যা'র ফলে বাঁচাবাড়া
সহজভাবে পায় না সাড়া,
মরণ-তরণ চলন যে-সব
হ'য়েই পড়ে বিক্ষোভিত। ৬৪।
সঙ্গীতে হয় শ্বাসের ব্যায়াম
দেহের ব্যায়াম নাচে,
এই ব্যায়ামই সহজ ব্যায়াম
নাই কিছু এর কাছে। ৬৫।
জ্ঞান-গবেষণ নিত্য করিস্
তপস্যাতে রত থেকে,
বিরোধ-বুদ্ধি হটিয়ে চলিস্
সদাচার আর শৌচ রেখে;
এই চলনে চলে রে তুই
ভেবে সংস্কার সাক্ষাৎ কর,
মস্তিষ্কটার তীক্ষ্ণ প্রভায়
হ'তে পারিস্ জাতিস্মর। ৬৬।
স্পর্শ-দোষে জীবাণু ধায়
সংস্রবেতে মন—
এই বুঝে তুই চলিস্-ফিরিস্
বুঝলি বিচক্ষণ? ৬৭।
ক্ষুধাই যদি জাগে—
তেমনি খাস্ যা'য় সতেজ থাকিস্
এড়িয়ে লোভের রাগে। ৬৮।
ঊষার রাগে উঠবি জেগে
শৌচে শীতল হ'বি,
সন্ধ্যা-আহ্নিক জপ-সাধনায়
ঈশের আশিস্ ল'বি;
কুতূহলে পড়শী ঘুরে
দেখবি সযতনে,
আছে কেমন কোথায় কী জন
মন দিবি রক্ষণে;
তারপরেতে বাড়ী এসে
শৌচে যথাযথ,
গৃহস্থালীর উন্নয়নী
অর্জনে হ' রত;
স্নানটি সেরে আহ্নিক ক'রে
ক্ষুধামতন খাবি,
একটু চ'লে বিশ্রাম নিয়ে
আগুয়ানে ধাবি;
এমনি তালে সচল চালে
চ'লে সন্ধ্যা এলে,
শৌচে শুদ্ধ হ'য়ে করিস্
আহ্নিক হৃদয় ঢেলে;
উন্নয়নের আমন্ত্রণী
গল্প-গুজব শীলে,
হৃষ্টমনে আলোচনায়
কাটাস্ সবাই মিলে;
পড়শীদিগের অভাব-নালিশ
থাকেই যদি কিছু,
তা'র সমাধান যেমন পারিস্
করিস্ লেগে পিছু;
করণ-চলন ধরন-ধারণ
যজন-যাজন কিবা
সকল কাজেই ইষ্টস্বার্থে
চলিস্ রাত্রি-দিবা;
আদর-সোহাগ উদ্দীপনী
কথায়-কাজে ঝুঁকে,
স্বার্থ-কেন্দ্র সবার হ'বি
ধরবি ইষ্টমুখে;
বিশ্রামেরই সময় গা'টি
ঘুমল হ'য়ে এলে,
ইষ্ট-চলন মনন নিয়ে
ঘুমে গা' দিস্ ঢেলে। ৬৯।