প্রেম, সন্ন্যাস ও প্রেমাস্পদ প্রসঙ্গে সত্যানুসরণ

প্রেম, সন্ন্যাস ও বিশেষকরে প্রেমাস্পদ নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণের পৃষ্ঠা নং ৬৩ – ৬৮ তে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন…..

প্রেমকে প্রার্থনা কর, আর হিংসাকে দূরে পরিহার কর, জগৎ তোমার দিকে আকৃষ্ট হবেই হবে।

[উপরের “প্রেমকে…হবে” বাণীটির ব্যাখ্যা]

তোমার মনের সন্ন্যাস হোক; সন্ন্যাসী সেজে মিছামিছি বহুরূপী হ’য়ে ব’সো না।

[উপরের “তোমার…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

তোমার মন সৎ-এ বা ব্রহ্মে বিচরণ করুক, কিন্তু শরীরকে গেরুয়া বা রংচং-এ সাজাতে ব্যস্ত হ’য়ো না, তা’ হ’লে মন শরীরমুখী হ’য়ে প’ড়বে।

[উপরের “তোমার…প’ড়বে” বাণীটির ব্যাখ্যা]

অহঙ্কার ত্যাগ কর, সৎস্বরূপে অবস্থান ক’রতে পারবে।

[উপরের “অহঙ্কার…পারবে” বাণীটির ব্যাখ্যা]

পতিতকে উদ্ধারের কথা শুনাও, আশা দাও, ছলে-বলে-কৌশলে তার উন্নয়নে সাহায্য কর, সাহস দাও—কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল হ’তে দিও না।

[উপরের “পতিতকে…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যদি কোনদিন তোমার প্রেমাস্পদকে সৰ্ব্বস্ব বিকিয়ে নিমজ্জিত হ’য়ে থাক,—আর ভেসে উঠবার আশঙ্কা দেখ, তবে জোর ক’রে তৎক্ষণাৎ নিমজ্জিত হ’য়ে বিগতপ্রাণ হও—দেখবে প্রেমাস্পদ কত সুন্দর, কেমন ক’রে তোমাকে আলিঙ্গন ক’রে আছেন।

[উপরের “যদি…আছেন” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যদি এতটুকু লোকনিন্দা, উপহাস, স্বজনানুরক্তি, স্বার্থহানি, অনাদর, আত্ম বা পরগঞ্জনা তোমার প্রেমাস্পদ হ’তে তোমাকে দূরে রাখতে পারে, তবে তোমার প্রেম কতই ক্ষীণ—তা’ নয় কি?

[উপরের “যদি…কি?” বাণীটির ব্যাখ্যা]

কোন-কিছু ‘আজ বুঝেছি আবার কাল বুঝা যায় না—হেঁয়ালি’ ইত্যাদি ব’লে শৃগাল সেজো না—কারণ, ইতর জন্তুরাও যা’ বোঝে তা’ ভোলে না। তাই, এই প্রকার বলাটাই দুষ্ট বা অস্থির-বুদ্ধির পরিচায়ক।

আজ উপকৃত হয়েছি ব’লে কাল আবার স্বার্থান্ধ হ’য়ে অপকৃত হওয়ার ভান ক’রে অকৃতজ্ঞতাকে ডেকে এনো না। এর চাইতে ইতরামো আর কী আছে? যা’কে-তা’কে জিজ্ঞাসা কর।

মুর্খতা না থাকলে উপকৃতের কুৎসায় উপকারীকে নিন্দিত করা যায় না।

[উপরের “মুর্খতা…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

উপকারী যখন উপকৃতের নিকট বিধ্বস্ত হয়, তখন মূঢ় অহং কৃতজ্ঞতারূপ অর্গল ভেঙ্গে দম্ভ-কণ্টকাকীর্ণ মৃত্যুপথ উন্মুক্ত করে।

[উপরের “উপকারী…করে” বাণীটির ব্যাখ্যা]

আশ্রিতের নিন্দায় যিনি আশ্রয়কে কুৎসিত বিবেচনা করেন—বিশ্বাসঘাতকতা তার পশ্চাৎ অনুসরণ করে।

[উপরের “আশ্রীতের…করে।” বাণীটির ব্যাখ্যা]

প্রিয়ের প্রতি ভালবাসা বা মঙ্গলবিহীন কৰ্ম্ম কখনই প্রেমের পরিচায়ক নয়।

প্রিয়তমের জন্য কিছু ক’রতে ইচ্ছা করে না—অথচ খুব ভালবাসি—এ কথাও যা’, আর, সোনার পিত্‌লে ঘুঘুও তাই। স্বার্থবুদ্ধিই প্রায় উক্ত প্রকার ভালবাসে, তাই—ঐ-প্রকার নিষ্কাম-ধৰ্ম্মাক্রান্ত ভালবাসা দেখে সাবধান হওয়া ভাল, নতুবা বিপদের সম্ভাবনাই অধিক।

ভালবাস—অথচ সে তোমার উপর জোর বা আধিপত্য, শাসন, অপমান, অভিমান কিংবা জিদ ক’রলেই সুখ না হ’য়ে বরং উল্টো হয় বা মুছে যায়, —আমি ব’লছি—তুমি ঠকবে ও ঠকাবে নিশ্চয়—তা’ তুমি যতদিন এমনতর থাক, —তাই এখনও সাবধান হও।

প্রেমের মোহ—বাধা পেলেই বৃদ্ধি, প্রেমাস্পদের অত্যাচারেও ঘৃণা আসে না, বিচ্ছেদে সতেজ হয়, মানুষকে মূঢ় করে না, চিরদিন অতৃপ্তি, একবার স্পর্শ ক’রলে আর ত্যাগ হয় না—অপরিবর্ত্তনীয়।

[উপরের “প্রেমের মোহ…”বাণীটির ব্যাখ্যা]

কামের মোহ—বাধায় ক্ষীণ, কামের অত্যাচারে বা যেরূপ চাওয়া যায় সেরূপ না পাইলে ঘৃণা, বিচ্ছেদে ভুল, মানুষকে কাপুরুষ ও মূঢ় করিয়া তোলে, ভোগেই তৃপ্তি ও বিষাদ, চিরদিন থাকে না—পরিবর্ত্তনীয়।

[উপরের “কামের মোহ…”বাণীটির ব্যাখ্যা]

গরীয়ান হও, কিন্তু গর্ব্বিত হ’য়ো না।

[উপরের “গরীয়ান…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যদি মুগ্ধ ক’রতে চাও, তবে নিজে সম্পূর্ণভাবে মুগ্ধ হও।

[উপরের “যদি…হও” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যদি সুন্দর হ’তে ইচ্ছা থাকে, তবে বিশ্রীতেও সুন্দর দেখ।

[উপরের “যদি…দেখ” বাণীটির ব্যাখ্যা]

একানুরক্তি, তীব্রতা ও ক্রমাগতিতেই জীবনের সৌন্দর্য্য ও সার্থকতা।

[উপরের “একানুরক্তি…সার্থকতা” বাণীটির ব্যাখ্যা]

বহু ভাললাগা যে এক ভাললাগাকে টলাতে বা বিচ্ছিন্ন ক’রতে পারে না, সেই ভাললাগাই প্রেমের ভগিনী।

[উপরের “বহু…ভগিনী” বাণীটির ব্যাখ্যা]

ভাল-মন্দ বিচার ক’রে বিধ্বস্ত হওয়ার চেয়ে সৎ-এ(গুরুতে) আকৃষ্ট হও—নির্ব্বিঘ্নে সফল হবে নিশ্চয়।

[উপরের “ভাল…নিশ্চয়” বাণীটির ব্যাখ্যা]

দুর্ব্বলতার সময় সুন্দর ও সবলতার চিন্তা ক’রো, আর অহঙ্কারে প্রিয় ও দীনতার চিন্তা ক’রো—মানসিক স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

[উপরের “দুর্ব্বলতার…থাকবে” বাণীটির ব্যাখ্যা]

দোষ দেখে দুষ্ট হ’য়ো না, আর তোমাতে সংলগ্ন সবাইকে দুষ্ট ক’রে তুলো না।

[উপরের “দোষ…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

তাঁকে দাও—চেও না—পেলে আনন্দিত হ’য়ো।

[উপরের “তাঁকে…হয়ো।” বাণীটির ব্যাখ্যা]

তুমি তাঁর ইচ্ছাধীন হও, তোমার ইচ্ছাধীন তাঁকে ক’রতে চেষ্টা ক’রো না—কারণ, তোমার নিকট তিনিই সুন্দর।

[উপরের “তুমি…সুন্দর” বাণীটির ব্যাখ্যা]

মিলনের আকুলতাকে কিছুতেই ত্যাগ ক’রো না, তা’ হ’লে বিরহের ব্যথা মধুর হবে না—আর, দুঃখের ভিতর শান্তিকে অনুভব ক’রতে পারবে না।

[উপরের “মিলনের…না” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যার উপর তোমার ভাবা, করা ও বোধ যতখানি ও যেমনতর, তার উপর তোমার আসক্তি, টান বা ভালবাসা ততখানি ও তেমনতর।

[উপরের “যার…তেমনতর।” বাণীটির ব্যাখ্যা]

যাঁ’তে সৰ্ব্বস্ব বিকিয়ে দিয়েছ—তিনিই তোমার ভগবান্ ; আর, তিনিই তোমার পরম গুরু।

[উপরের “যাঁ’তে সর্ব্বস্ব..গুরু” বাণীটির ব্যাখ্যা]