অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “অনুরাগ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৮৩ – ১০০ পর্যন্ত মোট ৯০ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ০১ – ৪৫ বাণীসমূহ দেয়া হলো।
সক্রিয়-প্রীতি যা'র যেমন,
পরিণতিও তা'র তেমন। ১।
প্রীতির নেশায় ভ্রান্তি কমে,
বৃত্তিরাগও তেমনি দমে। ২।
বুঝ আছে প্রীতি নাই,
ভুল পেছু নেয় সদাই। ৩।
পরাক্রমহীন প্রীতি
তোয়াজভরা ভীতি। ৪।
প্রীতির প্রেয় যেমনতর
ফলও ধরে তেমনতর। ৫।
যত থাকবে অটুট টানে
বলও পাবে তেমনি প্রাণে। ৬।
টান বুঝবি কিসে?
চর্যাশ্রমেও হয় না ক্লিষ্ট
হারায় নাকো দিশে। ৭।
(তবে) প্রণয় আছে কার ?
দরদভরা উজল বুকে
দীপ্ত ভজন যা'র। ৮।
ভাব যা'র যত পাকা
অভাব তা'র তত ফাঁকা। ৯।
অহংরাগ যেথায় উদ্ধত
বিরোধও সেথায় প্রোদ্যত। ১০।
(তোমার) বিরাগ যদি থাকে—
ঐ বিরাগ যা'কে দেখিয়ে দিল
ভাল লাগে কি তা'কে ? ১১।
অন্তরাস যা'দের যেমনতর
স্বার্থ-রঙীল যে-ভাবে,
চলন-ফেরন হয়ও তেমন
তেমনতরই ঝোঁক চাপে। ১২।
মূত্র-মলের মাঝখানে তোর
জন্ম নেবার দ্বার,
বিনা শ্রেয়-অনুরাগেও
পাবি কি উদ্ধার? ১৩।
নিষ্ঠার প্রীতি পরিচর্য্যা
প্রিয়র দরদ ছাড়া,
বুঝে রাখিস্ সেইখানেতেই
ব্যতিক্রমের ধারা। ১৪।
প্রীতিই যে তোর অন্যখানে,
মিথ্যা প্রিয়র দৃষ্য কথা
তাই তো বেরোয় গল্পে-গানে। ১৫।
প্রণয় আছে কা'র?
ঊর্জ্জীতপাঃ, প্রিয়র নেশায়
দীপ্ত হৃদয় যা'র। ১৬।
কাম-কামনার ধান্ধা নিয়ে
ঘোরেই যা'রা রাত্রদিন,
প্রেয়-প্রীতি অবশ তাদের
হৃদয় ফাঁকা তৃপ্তিহীন। ১৭।
প্রীতি যা'দের দীর্ণ টানে
দরদহারা হয়—
কেন্দ্রহারা ভ্রান্ত তা'রা
দীপ্ত-তৃপ্ত নয়। ১৮।
অর্থ লাগি' প্রীতি যাদের—
হো'ক্ না হাজার বুদ্ধিমান্,
যা'ই করুক না তোমার লাগি'
তোমার তরে কাঁদে না প্রাণ। ১৯।
নীচের প্রতি বিলোল পীরিত
বেজায় বুকের টান,
শ্রেয় তাহার নয়কো প্ৰেয়
অশ্রেয়ই তা'র স্থান। ২০।
নেশা তোমার যেমনতর
যা'তে যে-প্রকার,
আচার-বিচার-চরিত্রটি
ধরবে সে আকার। ২১।
সহন-বহন নেই যেখানে
শাসন-তোষণ নেই যেথায়,
নিষ্ঠানিপুণ দক্ষ-কৃতি
নইলে থাকে প্রেম সেথায় ? ২২।
সব স'য়ে সব ব'য়ে যা’রা
ইষ্টে ভালবাসে না,
আত্মস্বার্থ ছাড়া তা'দের
নাইকো অন্য বাসনা। ২৩।
সওয়া-বওয়া, শাসন-তোষণ
নাইকো যেথায় অটুট হ'য়ে—
নাইকো প্রণয় সেথায় জেনো,—
বেড়ায় শুধু স্বার্থ ল'য়ে। ২৪।
প্রিয়র ধান্ধা বয় না যা'রা
স'য়ে পায় না শান্তি,
প্রীতি কিন্তু কমই তা'দের
উছল চাওয়ার ভ্রান্তি। ২৫।
ঊর্জ্জী চলন নিথর হ'য়ে
কৃতিদীপনা যতই কমে
অকৃতি তা'য় স্থবির ক'রে
বীর্য্যে নিথর করে ক্রমে। ২৬।
ঊর্জ্জী শ্রদ্ধা না থাকলে কি
সঞ্চারণা হয় সমীচীন ?
দ্যোতন-বীর্য্য রয় না সেথায়
কৃতিরঞ্জন তাই-ই তো দীন। ২৭।
প্রয়োজনের ক্ষুধা মেটে
ধন-দৌলত পাওয়ায়,
বুকের ক্ষুধা মেটে কিন্তু
কৃতি-ভালবাসায়। ২৮।
ভালবাসা অমনি কি হয়?
ভাল করলে হয় তবে,
ভালবাসার পরিচর্য্যায়
সবাই তো রয় এই ভবে। ২৯।
দিয়ে-থুয়ে ভালবাসে
তোমার ভালয় স্ফীত বুক,
ছোট-বড় হোক্ না যে-সে
আরাধ্য তা'র তোমার সুখ। ৩০।
ভালবাসায় নাইকো কভু
স্বার্থ-অন্ধ ধাপ্পা চাল,
থাকে নাকো ভালবাসায়
ভাল ছাড়া মন্দ তাল। ৩১।
ব্যক্তিত্ব যদি ধূৰ্ত্তই থাকে
নিষ্ঠা রাখিস্ ধুরোয় তুই,
জীবনচক্র চলবে যেমন
দিবিই পাড়ি কতই ভুঁই। ৩২।
ইষ্টে তুমি ভালবাস
দৃঢ়কর্ম্মা সেবা নিয়ে,
ক্ষিপ্র-দ্যোতন বিবেচনায়
অটল কৃতি-শিষ্ট হ'য়ে। ৩৩।
প্রীতি-বাঁধনে সত্তা ধরে
জীবন-বৃদ্ধির ঊর্জ্জনায়,
সে-বাঁধন কি যায় রে ভেঙ্গে
কোন কিছুরই তর্জ্জনায় ? ৩৪ ।
যা' উঠবে তোর বড় হ'য়ে
দেবার নেশার টানে,
সেইটিই আছে বড় হ'য়ে
চিত্তে সঙ্গোপনে। ৩৫।
সব ছাপিয়ে মনের আবেগ
নিছক টানে যেদিক্ ধায়,
অন্তরেতে বুঝে রাখিস্
হৃদয়টি তোর তা'ই-ই চায়। ৩৬।
প্রীতি-উপহার যেমন সাধ্য
মনে এলেই দিবি তা',
দেওয়া-নেওয়া-ব্যবহার-চর্য্যায়
জানিস্ প্রীতি বৰ্দ্ধিতা। ৩৭।
বিনয়বুদ্ধ ফুল্ল প্রাণে
কোন প্রত্যাশা না রেখে,
দিবি যা' তুই তাঁ'র তৃপণায়—
হ'বিই উছল সেই বাঁকে। ৩৮।
বল্ তো রে তুই, শুধু নামে
কী হয়েছে এতকাল—
নামের সাথে যদি না থাকে
শিষ্ট নেশায় ইষ্ট বহাল ? ৩৯।
নিষ্ঠানিপুণ ভাববৃত্তি
রঞ্জিত যখন ইষ্টটানে,
মন্ত্র বা নাম তখন থেকেই
সক্রিয় হয় তাহার প্রাণে। ৪০।
নিষ্ঠা-প্রীতি থাকে যেথায়
থাকেই শঙ্কা সঙ্গে তা'র,
প্রিয়'র ব্যথা, কষ্ট, আপদ
ভাবলেই হয় আতঙ্ক তা'র। ৪১।
ইষ্টনেশার বেষ্টনীতে
কৃতিদীপ্ত ঊৰ্জ্জনা
না থাকলে কি হয় রে কভু
ইষ্টদ্যোতন সম্ভাবনা ? ৪২।
ইষ্টটানের অমোঘ নেশায়
কৃতি জাগে চৰ্য্যা বেয়ে,
হৃদয়টা তা'র প্রাণে-প্রাণে
ছড়িয়ে পড়ে বিপুল হ'য়ে। ৪৩।
প্রেষ্ঠরাগ-কৃতিচর্য্যায়
কেমন তুমি লিপ্ত,—
তিরস্কারে, ভর্ৎসনায় তাঁর
তৃপ্ত কিংবা ক্ষিপ্ত। ৪৪।
প্রেষ্ঠসেবা-রাগে যদি
কৃতি-ব্যস্ত না-ই হ'লি
সবই যে তোর ফক্কা হবে
অক্কা পাবি সব ফেলি'। ৪৫।